এলডিসি উত্তরণ আরো ৫ বছর পেছানোর দাবি নাগরিক সমাজের
বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ এখনি প্রস্তুত নয়, তাই আরও পাঁচ বছর সময় নেয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর রুনি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশন জনস্বার্থ: জনগণের সম্পৃক্ততা ও মতামত অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তারা। এলডিসি গ্রাজুয়েশন ওয়াচ-বিডি ও নাগরিক উদ্যোগের যৌথ আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এতে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আমিনুর রসুল-সমন্বয়কারী, পিএইচএম বাংলাদেশ এবং বক্তব্য রাখেন, ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস্ বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান, এসএম সৈকত-নির্বাহী পরিচালক, সিরাক বাংলাদেশ, সালাউদ্দিন বাবলু-জ্যোষ্ট সাংবাদিক এবং মোহাম্মদ ইলিয়াস-সাধারণ সম্পাদক- গ্রীনবাংলা, গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন এর সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপক আমিনুর রসুল বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ বা উন্নত দেশ হবার বিরোধী নই। আমরা দরিদ্র দেশ হয়ে থাকতে চাই না। কিন্তু, উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর ও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে, সে ব্যাপারে দেশের সকল অংশীজনের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে। নাহলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসমূহ গণমুখী কোনো নীতি করার ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।তিনি তার বক্তব্যে নিম্ন লিখিত সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন-১. বাংলাদেশ সরকার এলডিসি গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতি বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়ায় কৃষক, শ্রমিক, নারী, ব্যবসায়ী, তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক ও শ্রমিক, ঔষধ শিল্প ও অন্যান্য শিল্প প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক প্রতিনিধি সকলকে নিয়ে উন্মুক্ত ও অংশগ্রহনমূলক সভা করা এবং সকলের মতামত উক্ত প্রতিবেদনে অর্ন্তর্ভুক্ত করতে হবে।২. দেশের খাত ভিত্তিক স্থায়ী শিল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাজার সুরক্ষা, সম্প্রসার না করে উন্নয়নশীল সক্ষমতা প্রতিবেদন প্রদান করা যাবে না। পাশাপাশি সরকারের সুষ্ঠু বাজার নিয়ন্ত্রণ ও জনসেবা (স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি ও জলবায়ু) প্রযুক্তি পণ্যে জনবান্ধব পলিসি, জবাবদিহিতা ও অধিকার নিশ্চিত না করে গ্রাজুয়েশন মর্যাদায় উন্নীত করা যাবে না।৩. বাংলাদেশ গ্রাজুয়েশনের বিষয়ে সকল ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবসমূহ কিভাবে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে প্রভাব বিস্তার করবে, এবং সেগুলো আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব, সে বিষয়ে গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহনমূলক পদ্ধতিতে একটি জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে।৪. শুধু মর্যাদার কথা বলে তাড়াহুড়া করে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের তোড়জোড় বন্ধ করতে হবে, এ বিষয়ে সরকারের পরিষ্কার অবস্থান প্রকাশ করতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে এ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান বলেন, আমরা সবাই দেশের নাগরিক এবং ভোক্তা। কিন্তু আমাদের দেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করার ব্যাপারে জনগণের অবস্থান কি সেটা বিবেচনায় আনা হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বাজারে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত নয়। তাই উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আরও পাঁচ বছর সময় দরকার এবং এখন থেকে সঠিক পরিকল্পনা করে যোগ্যতা অর্জন করার সক্ষমতার জন্য অগ্রসর হতে হবে।সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবলু বলেন, আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে যে পরিসংখ্যান পেয়েছি তা ত্রুটিপূর্ণ। সকল তথ্য সংশোধন করতে হবে। বর্তমান সরকার গত ১৫ বছরের প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। কারণ ইতিমধ্যেই এটা প্রমাণিত হয়েছে যে যেসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যুক্তি উপস্থাপন করছে তা সঠিক নয়। এখন আমাদের সময় আসছে ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য যেমন প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় ও অন্যান্য নির্ণায়ক সমূহকে পূণঃমূল্যায়ন করা এবং সঠিক তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরা। সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম সৈকত বলেন, আমাদের অর্থনীতি সঠিক জায়গায় না নিয়ে এলডিসিতে যাওয়া হবে আত্মঘাতী। ইতোমধ্যে অনেক দাতা সংস্থা তাদের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এখনি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বিদেশী সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে, এতে জনবান্ধব প্রকল্পসমূহ বন্ধ হয়ে যাবে। দারিদ্রতা আরও বেড়ে যাবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের এই মর্মে সচেতন থাকা প্রয়োজন যে আগামী নির্বাচিত সরকার কি করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সামাল দিবে তার প্রস্তুতি এখন থেকে নেয়া প্রয়োজন।গ্রীন-বাংলা, গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশে এই মুহুর্তে এলডিসিতে গেলে গার্মেন্টস সেক্টর বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিভিন্ন দেশে এখন যেসকল পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে থাকে তখন তারা শুল্ক বসাবে এবং গামের্ন্টস পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে।এর ফলে অনেক গামের্ন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হবে এবং বিশাল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে আমেরিকা ২০% শুল্ক বসানেরা ফলে অনেক কোম্পানী অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে যার নেতিবাচক ফলাফল স্পষ্ট হয়ে উঠছে, শ্রমিক ছাটাই চলছে। তাই বিকল্প কি এ ব্যাপারে মালিক-শ্রমিক এবং সরকার দ্রুত বসে আলোচনা করা দরকার এবং গামের্ন্টস শ্রমিকদের পক্ষ থেকে গ্রাজুয়েশন পাঁচ বছর পিছিয়ে দেয়ার জন্য দাবি তুলছি।সভাপতির বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, বিভিন্ন অংশীজন ও সেক্টর থেকে ইতিমধ্যেই গ্রাজুয়েশন পিছিয়ে দেয়ার দাবি উঠছে। প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যেও পিছিয়ে দেয়ার স্বপক্ষে মতামত আছে। এ প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন, অর্থনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকারের উদ্যোগে দ্রুত একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা দরকার। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কোনভাবেই এই দায়িত্ব নেয়া ঠিক হবে না।তিনি আরও বলেন, আগামীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করবেন তাও ভোটের আগে জনগণের কাছে পরিষ্কার করবেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ