ছবি: সংগৃহীত
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিজ বাসভবনে ‘জন সুনওয়াই’ বা জনতার অভাব অভিযোগ শোনার সেশন চলাকালে এক যুবকের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। হামলার পর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে আয়োজিত সাপ্তাহিক জনশুনানি চলছিল। ঠিক তখনই ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক উঠে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে চড় মারেন এবং চুল ধরে টান দেন বলে অভিযোগ। হামলাকারীর বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা অভিযুক্ত যুবককে আটক করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ জানতে চাচ্ছে, এই হামলা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, নাকি যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
এ ঘটনায় দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দিল্লির মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা অভিযোগ করেছেন, ‘বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার উন্নয়নমূলক কাজ সহ্য করতে পারছে না। এটা পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে হচ্ছে।’ বিজেপির আরেক নেতা হরিশ খুরানা বলেন, ‘এটা শুধুই হামলা নয়, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।’
অন্যদিকে, আম আদমি পার্টির নেত্রী এবং দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অতীশি ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘মতবিরোধ ও প্রতিবাদের অধিকার গণতন্ত্রে আছে, কিন্তু হিংসার কোনো স্থান নেই।’ তিনি দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
ঘটনার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
ভোরের আকাশ/মো.আ.
সংশ্লিষ্ট
টাইফয়েড জ্বর একটি পরিচিত নাম, কিন্তু এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর অসংখ্য শিশু ও কিশোর এই রোগে আক্রান্ত হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই জটিলতা বা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে। অথচ একটি সহজ, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা এই ভয়ংকর রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। টাইফয়েড জ্বর Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়, যা সাধারণত দূষিত পানি, খাবার বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির মল বা মূত্রের সংস্পর্শে এসে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা ও দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ও পেটের ব্যথা, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, আবার কখনো ডায়রিয়া, কিছু ক্ষেত্রে চামড়ায় ছোট লালচে দাগ। চিকিৎসা না হলে এটি অন্ত্র ফুটো, রক্তক্ষরণ, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন, এবং তাদের মধ্যে এক লাখেরও বেশি মৃত্যুবরণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে টাইফয়েড জ্বরের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। ভালো খবর হলো, টাইফয়েড প্রতিরোধে এখন নিরাপদ ও কার্যকর টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (TCV) পাওয়া যাচ্ছে। এটি একবার নেওয়াই দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দেয়। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করছে, যা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (EPI)-এর আওতায় পরিচালিত হবে।ক্যাম্পেইনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক হতে ৯ম শ্রেণী/সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিদ্যমান ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে। এর আওতায় সারাদেশে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে এক ডোজ টিসিভি টিকা প্রদান করা হবে। এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত, শিশুদের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং বিনামূল্যে সরকারি টিকাদান কেন্দ্র, স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে দেওয়া হবে।এখনও টিকা সম্পর্কে অনেকের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা বা ভয় এখনও রয়ে গেছে। কেউ কেউ মনে করেন টিকা দিলে জ্বর হবে বা শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে। আসলে এগুলো শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া মাত্র-হালকা জ্বর বা ব্যথা এক-দুই দিনের মধ্যেই সেরে যায়। কেউ কেউ টিকার মান নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন, কিন্তু এই ভয় সম্পূর্ণ অমূলক। টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (TCV) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত এবং নিরাপত্তার সব মানদণ্ডে উত্তীর্ণ।বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, টিকা নেওয়া শিশুরা টাইফয়েডে আক্রান্ত হলেও তাদের রোগের তীব্রতা অনেক কম হয় এবং জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাই ভয় না পেয়ে সঠিক তথ্য জানা এবং তা অন্যদের জানানোই এখন জরুরি। টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান শুধু সরকারের নয়, সমাজের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানকে টিকা দেওয়ার দিন নির্ধারিত স্ব স্ব স্কুল বা টিকাদান ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা অনুসরণ করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্কুল, মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো এই টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।শিক্ষক ও প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অভিভাবকদের সচেতন করেন, তবে টিকা কাভারেজ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সমাজের নেতৃবৃন্দ, ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি সংগঠনগুলোও জনসচেতনতা তৈরিতে অংশ নিতে পারেন। এই টিকা সহজলভ্য এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। সরকারি টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুলভিত্তিক টিকাদান ক্যাম্প এবং শহর ও গ্রামীণ এলাকার নির্ধারিত অস্থায়ী বুথে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা এই টিকা প্রদান করবেন। প্রতিটি টিকাদান স্থানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও অপরিহার্য। সবসময় ফুটানো বা বিশুদ্ধ পানি পান করা, হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, খাবার ঢেকে রাখা এবং রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা-এসব সাধারণ অভ্যাসই আমাদের পরিবারকে টাইফয়েডের মতো রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। অপরদিকে, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিকতা টাইফয়েডসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টাইফয়েড টিকা শুধু একটি ইনজেকশন নয়-এটি একটি সুরক্ষা, একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার অঙ্গীকার। ভয় নয়, সচেতনতা ও তথ্যই পারে আমাদের ও আমাদের সন্তানদের সুরক্ষিত রাখতে।লেখকঃ ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও ডা. মো. স্বাক্ষর রহমানজনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ চেয়ার, গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটি
দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের স্বেচ্ছা-নির্বাসন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া দুই পর্বের এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা শুধু তাঁর বক্তব্য নয়— এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা, এক নতুন পথচলার সংকেত। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদেও বিরোধী দলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এই সাক্ষাৎকারকে দেখছেন একটি রাষ্ট্রনায়কোচিত আবির্ভাব হিসেবে। তাঁর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, কীভাবে নীরবতার শক্তিকে ব্যবহার করে তারেক রহমান বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন— যেখানে নেই ব্যক্তিগত আক্রমণ, নেই প্রতিহিংসার ভাষা, বরং রয়েছে শালীনতা, পরিণতিবোধ এবং একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য সুস্পষ্ট রূপরেখা।সাক্ষাৎকারের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দিক১. গণতন্ত্রকে নৈতিক ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন: তারেক রহমান গণতন্ত্রকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কৌশল বা স্লোগান হিসেবে দেখেন না। বরং তিনি একে জাতির নৈতিক ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শুধু একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার, জবাবদিহিতা ও জনগণের ক্ষমতায়ন।২. স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্পষ্ট ঘোষণাতারেক রহমান বলেছেন, তিনি দ্রুতই দেশে ফিরতে চান এবং জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত সরকারের সময় তাকে শারীরিক নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয়েছিল, যার ফলে চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁকে বিদেশে যেতে হয়। এখন তাঁর প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।৩. প্রতিপক্ষ নয়, বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা তিনি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দিলেও, কোনো আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করেননি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রেও তিনি প্রতিশোধ নয়, বরং আইনি প্রক্রিয়ার ওপর আস্থার কথা বলেন। তারেক রহমান স্পষ্ট করেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলেও বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো কাজ করবে না।৪. ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নীতিতে অটল: প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তারেক রহমান পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপির অবস্থান- ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে আরেক ফেলানী ঝুলে আছে কাঁটাতারে। এটা আমরা মেনে নেব না।” এর মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশি স্বার্থে আপসহীন অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।৫. রাজনীতিতে পরিবারকরণ নয়, জনসমর্থনের ভিত্তিবিএনপির নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, “রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না, এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়।” তিনি তাঁর নিজের সংগ্রাম, শারীরিক নির্যাতন ও অপপ্রচারের শিকার হওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরে বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব আসে আত্মত্যাগ ও জনআস্থা থেকে।৬. তরুণদের জন্য আহ্বান, শিক্ষার ওপর জোরতারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, একটি জাতিকে গড়তে হলে শিক্ষা এবং শিক্ষকের ভূমিকা অগ্রগণ্য— যা তাঁর ভবিষ্যৎ ভাবনায় শিক্ষাকে কেন্দ্রীয় স্থানে রাখার প্রমাণ।নতুন রাজনৈতিক শিষ্টাচারতারেক রহমানের কণ্ঠে সংযম ও মানবিকতা বর্তমান রাজনীতিতে যেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ, অপবাদ এবং ঘৃণার চর্চা নৈমিত্তিক, সেখানে তারেক রহমানের কণ্ঠে ছিল পরিণত মনোভাব, সংযত শব্দচয়ন এবং মানবিক বোধ। এই ব্যতিক্রমী ভঙ্গি তাঁকে অন্য অনেক নেতার চেয়ে আলাদা করে তোলে।রাষ্ট্রনায়কোচিত আবির্ভাবের ইঙ্গিত: জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “এত অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও তারেক রহমান প্রতিশোধ নয়, গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের কথা বলছেন— এটাই একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়কের পরিচয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই পরিণত নেতৃত্বই একদিন বাংলাদেশকে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”শেষ কথা: সাক্ষাৎকারটি শুধু বিএনপি নয়, দেশের রাজনীতিতেও এক নতুন দিনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রত্যাবর্তনের ঘোষণার পাশাপাশি তারেক রহমান যে বার্তা দিয়েছেন— তা হচ্ছে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতীয় স্বার্থে আপসহীনতা, এবং তরুণ নেতৃত্বের উত্থানের আহ্বান। এখন দেখার বিষয়, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই বার্তা কতটা প্রতিফলিত হয়।লেখক: জয়নুল আবদিন ফারুকবিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় সাবেক চিফ হুইপ।ভোরের আকাশ/এসএইচ
হাইব্রিড বা নব্যদের বিষয়ে কিছু লেখার আগে একটি সংক্ষিপ্ত পারিবারিক উদাহরণ না বললেই নয়। ধরুন, কোনো শিশুর মা মারা গেলে বা বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিচ্ছেদ হলে, বাবা শিশুকে লালন-পালনের জন্য পুনরায় বিয়ে করেন। তখন শিশুটির জীবনে আসে একজন নতুন ‘মা’। শিশুটি তাকে ভালোবাসে, মায়ের মতোই ধরে নেয়, এবং সেই মা-ও শিশুটিকে আপন সন্তানের মতোই লালন-পালন করেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শিশুটি বড় হলে বুঝে ফেলে, এই ‘মা’ তার জন্মদাত্রী নন। তখন তার হৃদয়ে জন্ম নেয় শূন্যতা। সে খুঁজে ফেরে তার প্রকৃত মাকে। যেখানে থাকুন না কেন, জন্মদাত্রী মা যেন ভালো থাকেন, সেটাই হয় তার প্রার্থনা।রাজনীতির ময়দানেও কিছুটা এমনই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের ক্ষেত্রে বর্তমানে ‘হাইব্রিড’ বা ‘নব্য’ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দলের প্রকৃত চেতনা ও আত্মত্যাগের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গঠিত এই দলটি বিগত প্রায় পাঁচ দশকে পাঁচবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল এবং দুবার বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন আপসহীন নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে একশ্রেণির নব্য নেতাকর্মীর আগমন ঘটেছে, যাদের অতীতে দলের দুঃসময়ে মাঠে দেখা যায়নি। ২০০৯ সালের পর থেকে ১৬ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী শাসনামলে গুম-খুন, মামলা-হামলা, কারাবরণসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই দুঃসময়ে যারা রাজপথে ছিলেন না, বরং নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিলেন, তারাই আজ পদ-পদবি পাওয়ার আশায় সক্রিয়। জনপ্রিয় এই দলটির সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই অনেকে আবার দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করছেন, জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। এসব ঘটনায় বিএনপিকে পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। অথচ দলের জন্য যাদের ত্যাগ রয়েছে, তারা দলের ক্ষতি হোক এটা কখনোই চাইবে না।গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর, বিএনপিতে এসব হাইব্রিড নেতার দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। পদ-পদবি নিয়ে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার-এসব ঘটনায় বিএনপির ত্যাগী ও মূলধারার নেতাকর্মীদের মনে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালে সোহাগ হত্যাকাণ্ডে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা দলটিকে আরও চাপে ফেলেছে।যদিও এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে, তবুও জনসম্মুখে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় উঠে। জামায়াত ইসলামী ও এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সমালোচনার মূখে পড়তে হয়েছে খোদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও।আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, দলের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা দায়িত্বশীলতার অভাব দেখাচ্ছেন। কেউ কেউ স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে দলের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য তার উদাহরণ। শোকজ ও বহিষ্কারের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও, তার বক্তব্যের প্রভাব থেকে যায়। এতে দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সহজে মেরামতযোগ্য নয়।ইদানীং দেখা যাচ্ছে, ‘বিএনপি’, ‘জিয়া’, ‘আরাফাত রহমান কোকো’ প্রভৃতি নাম ব্যবহার করে প্রায় শতাধিক ভূইঁফোড় সংগঠন গজিয়েছে, এই ভূঁইফোড় সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের নাম করে অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত লোকদের পদ-পদবি দিচ্ছে, এরাই আবার দলবিরোধী কাজে জড়াচ্ছে। এগুলো দলটির ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।বিএনপিকে এখনই এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তাই বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে আমি বলতে চাই, হাইব্রিড-নব্যদের দৈারাত্ব এখনই থামান। নতুবা এরাই হবে বিএনপির গলার কাঁটা। এদেরকে চিহিৃত করা উচিত। দলের নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে, যারা দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন, নির্যাতিত হয়েছেন, তারাই প্রকৃত বিএনপিকর্মী। বিভিন্ন সময়ের দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের চিত্র অবলোকন করলে আচ করা যায় হাইব্রিড-নব্যদের মধ্যে স্নাইপার গ্রুপের সদস্যরাও ঘাপটি মেরে রয়েছে। যারা দেশে-বিদেশে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করার চক্রান্তে লিপ্ত। দলটির হাইকমাণ্ডকেও ভাবতে হবে, সুবিধাজনক সময়ে যারা সুবিধা নিতে এসে ‘বিএনপির লোক’ সেজেছেন, তারাই আদতে দলের ক্ষতির কারণ। এসব হাইব্রিড, সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিদের দলে ঠাঁই দিলে দলের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। আমি মনে করি, আজ প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত শুদ্ধি অভিযান। হাইব্রিড ও নব্যদের সনাক্ত করার পাশাপাশি দলের নেতৃবৃন্দকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দলের প্রতি দায়বদ্ধ, আদর্শনিষ্ঠ, পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের হাতেই দলের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। তাহলে বিএনপি আবারও ফিরে পেতে পারে তার হারানো গৌরব।লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিজ বাসভবনে ‘জন সুনওয়াই’ বা জনতার অভাব অভিযোগ শোনার সেশন চলাকালে এক যুবকের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। হামলার পর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।জানা গেছে, বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে আয়োজিত সাপ্তাহিক জনশুনানি চলছিল। ঠিক তখনই ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক উঠে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে চড় মারেন এবং চুল ধরে টান দেন বলে অভিযোগ। হামলাকারীর বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা অভিযুক্ত যুবককে আটক করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ জানতে চাচ্ছে, এই হামলা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, নাকি যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন।এ ঘটনায় দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দিল্লির মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা অভিযোগ করেছেন, ‘বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার উন্নয়নমূলক কাজ সহ্য করতে পারছে না। এটা পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে হচ্ছে।’ বিজেপির আরেক নেতা হরিশ খুরানা বলেন, ‘এটা শুধুই হামলা নয়, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।’অন্যদিকে, আম আদমি পার্টির নেত্রী এবং দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অতীশি ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘মতবিরোধ ও প্রতিবাদের অধিকার গণতন্ত্রে আছে, কিন্তু হিংসার কোনো স্থান নেই।’ তিনি দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।ঘটনার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।ভোরের আকাশ/মো.আ.