ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:০৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নিত্যপণ্যের বাজারে আবারও বাড়ছে চাপ ভোক্তাদের ওপর। গত এক সপ্তাহ ধরে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। তবে দাম কিছুটা কমলেও কমেনি দামের ঝাঁজ। সয়াবিন তেলও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। পুরোনো পেঁয়াজের দামে চড়া ভাব বজায় রয়েছে। তবে স্বস্তির জায়গা হলো—সবজির বাজার তুলনামূলক নিম্নমুখী, ডিমের দামও আগের চেয়ে কম।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মুগদা, শ্যামপুর, সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। যদিও এখনও নাগালের বাইরে রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, মাসের শেষ দিকে সবজির দাম আরও কমতে পারে।

ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকবার চেষ্টা করার পর ৭ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা বাড়িয়েছে। নতুন দরে এখন এক লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়, আর ৫ লিটার ৯৫৫ টাকায়।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ১৫০ টাকার পিঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকতে শুরু করলেও দাম খুব একটা কমছে না। কেজিতে ১১০–১২০ টাকা। পুরোনো পেঁয়াজের দাম আরও বেশি— ১৩০-১৪০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।

বাজারে নতুন আলুও এসেছে। তবে দাম এখনও বেশি। নতুন সাদা আলু কেজিতে ৪০–৫০ টাকা, আর নতুন লাল আলু ৭০ টাকার আশেপাশে। কয়েক দিন আগেও এসব আলুর দাম ছিল একশ’ টাকার ওপরে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। পুরোনো আলু পাওয়া যাচ্ছে ২০–২৫ টাকায়।
এদিনের বাজার ঘুরে জানা যায়, বেশিরভাগ সবজির দাম এখনো প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে, মাছের দামেও কোনো স্বস্তি নেই।
মাঝারি আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, বেগুন, গাজর, শসা, কাঁচা মরিচ এবং নতুন আলু প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও, ঝিঙা ও শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং বরবটি ও করলা ১০০ টাকার ঘরে রয়েছে।

অন্যদিকে, মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ (মাঝারি) ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা এবং বড় চিংড়ি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এই চড়া দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের বাজেটের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।
এদিকে বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালী ২৮০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা আমিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, শীত আসলে সবজির দাম কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু এবার উল্টো। দাম বেশি হওয়ায় আগে যেসব সবজি এক কেজি করে কিনতাম, এখন তার অর্ধেক কিনতে হচ্ছে। পরিবারের বাজেট সামলানো কঠিন।
মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলামের ভাষ্য, বছরের সব সময় ধরেই মাছের দাম খুব বেশি থাকে। এত বেশি দামে মাছ কিনে খাওয়া সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য।
অন্যদিকে, বিক্রেতারা বলছেন সরবরাহ ঘাটতি এবং পরিবহন ব্যয়ের কথা। মালিবাগ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আসাদ আলী জানান, পাইকারি বাজারেই সরবরাহ কম, ফলে আমরা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শীতের শুরুতেই সবজির বাজার চড়া থাকায় ক্রেতাদের খরচ বেড়ে গেছে। মৌসুমি সবজি উঠলেও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা এবং নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিশ্চিত না হলে এই উচ্চমূল্যের চাপ ভোক্তাদের বয়ে বেড়াতেই হবে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই উচ্চমূল্যের চাপ রয়ে যাবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.