এম.আর. রাজ, নওগাঁ
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ০৬:০৭ পিএম
নওগাঁয় বোরোধান ফলনে খুশি কাংক্ষিত দাম না-পেয়ে হতাশ কৃষক
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম খাদ্য ভান্ডারখ্যাত নওগাঁয় পুরোদমে বোরোধান কাটা ও মাড়াইয়ে বাস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। চলতি মৌসুমে বোরোধানের ফলন ভালো হলেও স্থানীয় হাটে-বাজারে ধানের কাংক্ষিত দাম না পেয়ে খুশি হতে পাড়ছেনা কৃষকরা।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার সদরসহ ১১ উপজেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৩ শ” ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুত্রমতে ওই লক্ষমাত্রার জমি থেকে প্রায় ১৩ লাখ মেঃ টান বোরোধান উৎপাদনে আসাবাদী সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।
জেলার কৃষকদের অভিযোগ সেচের পানি, সার ও কীটনাশক এবং শ্রমিকের শ্রমের দাম বৃদ্ধির ফলে চলতি মৌসুমে এ ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ ব্যায় বেড়েছে তুলনামূলক ভাবে ধানের দাম বাড়েনি। জেলার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ এবং স্থানীয় আড়ৎদারদের কাছ থেকে সর্ত সাপেক্ষে টাকা নিয়ে এ ধান উৎপাদন করে থাকে। নানান সমস্যা আর প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশংকা মাথা রেখে কৃষকরা এ ধান চাষ করলেও জেলার হাট-বাজার গুলোতে তাদের উৎপাদনকৃত ধানের কাংক্ষিত মুল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছে তারা। সেই সঙ্গে ঘরে ধান তোলার আগেই এনজিওর ঋণ এবং আড়ৎদারদের কাছ থেকে সর্ত সাপেক্ষে নেয়া টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।
মহাদেবপুর উপজেলার কালনা গ্রামের কৃষক আজিজার জানান, তিনি চলতি মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে জিরাশাইল ধান চাষ করেছেন। তার চাষকৃত জমিতে বিঘা প্রতি ২৫ মন ধান উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু ধানের কাংক্ষিত দাম না-পেয়ে তিনি বলেন উর্ধমুখী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে সুধু ধানের দাম কম।
রাইগাঁর কুড়াইল গ্রামের কৃষক সুশীল চন্দ্র মন্ডল জানান, ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে, তবে মৌসুমের শুরুতেই জিরাশাইল প্রতি মন ধানে দাম কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা হলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখত। ধানের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের দাবী করেন কৃষক সুশীল চন্দ্র মন্ডল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সদর, ছাতুনতলী, মাতাজীহাট, নিয়ামতপুরের ছাতড়া হাট, মান্দার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, বদলগাছী উপজেলার গোবর চাঁপা হাট ও পত্নীতলা সদরের সপ্তাহিক হাট গুলোতে, হাটবারসহ প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মন ধান কেনাবেচা হয়ে থাকে। এসব ধানের হাটে জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধান প্রতি মন ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।
নওগাঁ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ নিশ্চিত হবে এবং চলতি মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ টন চাল উৎপাদন করা সম্ভব। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ ফরাদ হোসেন বলেন, নওগাঁ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টন ধান ও চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
ভোরের আকাশ/এসআই