ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:১৯ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
অবশেষে গাজীপুরের শ্রীপুরের গোসিংগা ইউনিয়নের ডুয়াইবাড়ি- চাওবন সড়কের উপর নির্মিত ব্রীজের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে এ সংযোগ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে নির্মাণের ছয় মাস পর সেরার খালের উপর নির্মিত সেতুর সাথে সড়কের সংযোগ দেওয়া হয়েছে ওই সেতুর নিচ থেকে খালের পাড় কেটে । ফলে বর্ষায় সামান্য বৃষ্টতে ওই মাটি আবার চলে যাবে খালে। দুই পাড়ের মানুষ পড়বে দূর্ভোগে। তাই এখনি ব্যাবস্থা না নিলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তার দ্বায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই ঠিকাদার সেতুর দুই প্রান্তের তীর কেটে নির্মাণ করেছেন রাস্তা। এতে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হবে এবং বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কাও রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এভাবে খালের তীর কেটে রাস্তা তৈরি করা পরিবেশ ও নদী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। এতে আশপাশের, ফসলি জমি ও সেতুরপাড় মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
চাওবন গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা ছিল নিয়ম মেনে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে খালের পাড় কেটে তড়িঘড়ি করে রাস্তা বানানো হয়েছে। এতে খাল বর্ষায় বড় বিপদ হতে পারে।আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু অবৈধভাবে খাল কেটে নয়। নিয়ম মেনে রাস্তা হলে আমাদেরও আপত্তি নেই।
স্থানীয় রওশনারা বলেন, সেতু বানানো হয়েছে কোটি টাকা খরচ করে, কিন্তু রাস্তা করতে গিয়ে খালের ক্ষতি করা হচ্ছে।বর্ষায় এই মাটি ধসে আবার খালেই পড়বে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু–কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিল মিথুন এন্টারপ্রাইজ। কাজ সম্পন্ন হলে সরজমিন দেখে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মিথুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলাচলের সুবিধার জন্য মাটি ভরাট করা হয়েছে। মাটি ভরাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় ইউপি সদস্যকে। খালের মাটি কেটে নয় স্থানীয় ব্যক্তির জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, এখানে জনস্বার্থে রাস্তার কাজ দ্রুত করা হয়েছে। মাটি কাটার কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি এবং কিছু অংশ নদীর তীর কাটা হয়েছে।
নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর উপজেলার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, সরকারের নিয়ম-কানুন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে যে নদী-খাল-বিলের তীর, প্রবাহ এবং জলাধারের উপর অবৈধ স্থাপনা বা দখল রাখা যাবে না। এবং বরাবরই অনধিকার দখল, মাটিকাটা ও স্থায়ী নির্মাণ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন, সেতুর দুই পাশে রাস্তা নির্মাণের জন্য বাজেট রয়েছে। হয়তো বা পরিবহন খরচ বাঁচানোর জন্য এখান থেকে মাটি কেটেছে। খালের পাড় কেটে কোনো কাজ হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও বলেন, যদি খালের পাড় কেটে থাকে তাহলে মাটির জন্য নির্ধারিত খরচ কর্তন করা হবে অথবা মাটির দাম সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ