কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪২ এএম
ছবি : সংগৃহীত
কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বার টার্মিনাল এলাকা এই জায়গাটি এখন যেন মৃত্যু ফাঁদ। দীর্ঘদিন ধরে এখানে আন্তঃজেলা পরিবহনের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য, অবৈধ পার্কিং ও যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা চলছে প্রকাশ্যে। আর সেই অব্যবস্থাপনার বলি হলেন একজন সাধারণ মানুষ আইয়ুব (৪২)।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে টার্মিনাল কবরস্থানের অস্থায়ী মসজিদ থেকে এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রাস্তা পার হওয়ার সময় যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় থাকা এ ছালাম ও বলাকা পরিবহনের দুটি বাসের মাঝখানে পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আইয়ুব শহরের নাপ্পাঞ্জা পাড়ার মৃত কবির আহমদের ছেলে। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফিরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু এক অব্যবস্থাপনার কারণে প্রাণ হারাতে হলো এই প্রবাসীকে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইয়ুবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নাপ্পাঞ্জা পাড়া, লার পাড়া ও ডিককুল এলাকার শত শত মানুষ টার্মিনাল এলাকায় জড়ো হন। মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। ক্ষুব্ধ জনতা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করেন, যা প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি টার্মিনাল এলাকায় চলা বাস সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে এবং আইয়ুব হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ার ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃজেলা বাসগুলো যেমন বলাকা, এ ছালাম, জনতা, কক্স স্পেশাল ও সিএনজি পরিবহন বছরের পর বছর টার্মিনাল এলাকায় সড়কের মাঝখানে পার্কিং করে যাত্রী তোলে। এতে শুধু যানজট নয়, প্রতিদিনই সৃষ্টি হয় বিপজ্জনক পরিস্থিতি।
যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে চালক ও হেলপারদের মধ্যে চলে টানাহেঁচড়ার প্রতিযোগিতা। কার আগে বাস ছাড়বে, কে বেশি যাত্রী তুলবে এই প্রতিযোগিতাই মাঝে মাঝে দুর্ঘটনায় রূপ নেয়। আইয়ুবের মৃত্যু সেই অনিয়মেরই এক মর্মান্তিক পরিণতি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াছিন বলেন,এটা আজকের ঘটনা না। প্রতিদিন বাসগুলো রাস্তায় দাড়িয়ে যাত্রী তোলে। ট্রাফিক পুলিশ সব দেখে, কিছু বলে না। কারণ তারা এই সিন্ডিকেট থেকে টাকা খায়।”
আরেকজন বাসিন্দা জানান, টার্মিনাল এলাকায় দিনের পর দিন অবৈধ পার্কিং, চাঁদাবাজি আর অনিয়ম চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। সাধারণ মানুষ বহুবার অভিযোগ করেও কোন স্থায়ী সমাধান পায়নি।
তবে স্থানীয়দের দাবি, কেবল অভিযান নয়, স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তারা চান টার্মিনাল এলাকায় বাস স্ট্যান্ড, পার্কিং ব্যবস্থা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের নতুন নীতি বাস্তবায়ন করা হোক।
একটি প্রাণ হারানোর পরই যেন নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় কত মৃত্যু হলে থামবে এই অব্যবস্থাপনা? টার্মিনালের এই বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ না হলে আরও অনেক আইয়ুব হয়তো একইভাবে প্রাণ হারাবেন।
ভোরের আকাশ/মো.আ.