আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তিনটি উপ-কমিটি গঠন
রুবেল খান, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫ ০৯:২৪ এএম
ছবি : ভোরের আকাশ
প্রথমবারের মতো নিজস্ব অর্থায়নে পণ্যবাহী নতুন দু’টি জাহাজ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। ৫৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার জন্য খরচ হবে ৮০০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিকভাবে খাদ্যশস্য, কয়লা, আকরিক এবং সিমেন্ট পরিবহনের জন্য দুটি বাল্ক কার্গো জাহাজ কেনার জন্য গত ৩ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বিএসসি। এই দরপত্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তিনটি উপ-কমিটি গঠন করেছে। এগুলো হলো- দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং কারিগরি সাব-কমিটি।
গত ৪ জুন থেকে চলছে আন্তর্জাতিক দরপত্র বিক্রি। ১৫ জুলাই পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হবে। ১৬ জুলাই দুপুর ১২টায় দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময়। খোলা হবে একই দিন দুপুর দুইটায়। এরপর ১৭ জুলাই থেকে দরপত্র যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মনোনীত দরদাতার সাথে কন্ট্রাক্ট সাইনিং করবে বিএসসি।
এ প্রসঙ্গে বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘বিএসসির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। জাহাজ ক্রয়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দরপত্র মূল্যায়ন এবং অনসাইট ইন্সপেকশন সম্পন্ন করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এর পর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (ক্যাবিনেট কমিটি অন গভর্নমেন্ট পারচেজ – সিসিজিপি) অনুমোদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে।সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে আগস্টের শেষ সপ্তাহে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কন্ট্রাক্ট সাইন করা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত. দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশমূলে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। প্রতিষ্ঠার চার মাসের মাথায় ১৯৭২ সালের ১০ জুন প্রতিষ্ঠানটির বহরে প্রথম যুক্ত করা হয় এমভি বাংলার দূত। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৪৪টি জাহাজ প্রতিষ্ঠানটির বহরে যুক্ত করা হয়। কিন্তু বয়সের কারণে এই জাহাজগুলো স্ক্র্যাপ হয়ে যাওয়ায় কমতে থাকে বিএসসির বহর। এক পর্যায়ে জাহাজ কমে ২০১৮ সালে দুটিতে নেমে আসে।
এরপর ২০১৯ সালে চীন থেকে ৬টি জাহাজ কেনার পর সেটি ৮টিতে পরিণত হয়। এরপর আবার কমতে থাকে জাহাজের সংখ্যা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসসির বহরে সাতটি জাহাজ থাকলেও অক্টোবর মাসের শুরুতে ৩৭ বছরের পুরোনো বাংলার সৌরভ ও বাংলার জ্যোতি দু’টি জাহাজে পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই দু’টি জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিএসসি।
বিএসসির বহর আবার কমতে থাকায় নতুন জাহাজ যুক্ত করতে উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে চীন থেকে চারটি জাহাজ এবং কোরিয়া থেকে ৬টি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএসসি। কিন্তু অর্থায়ন নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ওই প্রকল্পগুলো থমকে থাকায় এখন নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর অংশ হিসেবে গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিএসসির বোর্ড সভায় দু’টি জাহাজ কেনার বিষয়টি সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে দু’টি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এই দুই জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হলে জাহাজ ভাড়া সাশ্রয় ও দেশীয় নাবিকদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বর্তমানে পর্যাপ্ত দেশীয় জাহাজ না থাকায় পণ্য পরিবহনে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বাইরে। জাহাজ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ জাহাজের বহর বাড়াচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে ১০৩টি দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ রয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ