জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৫৪ এএম
উত্তাল সাগর: নিষেধাজ্ঞার আগেই ঘাটে ফিরছেন জেলেরা
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে নোয়াখালীর উপকূলীয় সাগর এলাকা। দমকা হাওয়া ও উঁচু ঢেউয়ের কারণে ঝুঁকি এড়াতে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে জেলেরা।
সরকারি ঘোষণায় ৩ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণে পদ্মা-মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে অনেক জেলে শেষ মুহূর্তে সাগরে নামলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে তারা আগেভাগেই ফিরে আসছেন।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সংসারের চাপ সামলাতে বাধ্য হয়ে ঋণ নিয়ে সাগরে নামতে হয়। কিন্তু ঝড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এখন মাছ ধরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচানোই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় জেলে আলমগীর হোসেন জানান, “সংসার চালাতে ঋণ করে সাগরে যাই। কিন্তু বাতাস এত তীব্র যে মাছ ধরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শেষে জীবন বাঁচাতে ঘাটেই ফিরতে হলো। এখন সবাই ঋণের চাপে কাতর।”
একইভাবে ট্রলার মালিক মো. হাবিব বলেন, “নিষেধাজ্ঞার আগে কিছুটা মাছ ধরার আশায় সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবহাওয়া এত খারাপ হয়ে গেল যে কিছুই ধরা সম্ভব হয়নি। সরকারের ঘোষিত তারিখে নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও জেলেদের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।”
এদিকে ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “নিষেধাজ্ঞার আগে সাধারণত জেলেরা সাগরে ঝুঁকি নেন। কিন্তু এবার আবহাওয়ার কারণে আগেভাগেই ফিরতে হচ্ছে। এতে বাজারে মাছের সংকট তৈরি হতে পারে।”
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে সাগরে অনুকূল পরিস্থিতি নেই। যেকোনো সময় প্রবল দমকা হাওয়া ও উঁচু ঢেউ তৈরি হতে পারে। ছোট নৌকা ও ট্রলার বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আমরা সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছি।”
অন্যদিকে হাতিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফাহাদ হাসান বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণে ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল করতে নিয়মিত প্রচারণা চলছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে টহল জোরদার করা হবে। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোরের আকাশ//হ.র