গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৫৯ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
একসময় গ্রামীণ বাংলার ঘরে ঘরে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হতো সকালের উঠান। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঢেঁকি আজ স্থান করে নিয়েছে শুধু স্মৃতিতে। তবে গাইবান্ধার তরুণ উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ফিরিয়ে এনেছেন সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। তৈরি করেছেন বিদ্যুৎচালিত কাঠের ঢেঁকি। যার মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর লাল চাল। যা ইতোমধ্যে পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের খামার-বোয়ালী গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম শফিক। পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করেছেন।
এরপর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে নিয়েছেন এমএসসি ডিগ্রি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চার বছর চাকরি করলেও তৃপ্তি পাননি। ভেতরের উদ্যোক্তা হয়ে উঠার তাড়নায় ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে নতুন কিছু করার স্বপ্নে শুরু করেন পথচলা। একান্ত নিজস্ব ডিজাইন ও ধারণায় বিদ্যুৎচালিত কাঠের ঢেঁকি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে সবাই তাকে নিয়ে সংশয়ে থাকলেও আজ তিনি এলাকার গর্ব।

শফিকুলের বাড়ির উঠানে দেখা গেলো দুটি বিদ্যুৎচালিত ঢেঁকি, যেগুলো কাঠ দিয়ে তৈরি এবং রেললাইন আকৃতির ঘরের মধ্যে স্থাপন করা। এসব ঢেঁকিতে প্রতিদিন ১৫০ কেজি পর্যন্ত লাল চাল উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে পাঁচজন স্থায়ী ও সাতজন মৌসুমি শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের মধ্যে চারজন নারী শ্রমিক ধান ভাঙ্গা, চাল বাছাইসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে নিয়োজিত। রয়েছে একটি অফিসঘর, যেখানে একজন ম্যানেজার অর্ডার নিচ্ছেন অনলাইনে। এর মাধ্যমেই সব খরচ মিটিয়ে লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
দেশের নানা জেলা থেকে প্রতিনিয়ত আসে অনলাইনের অর্ডার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, এমনকি বিদেশ থেকেও। ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও এসেছে রপ্তানির প্রস্তাব। তবে এক্সপোর্ট লাইসেন্স ও আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অভাবে এখনো বিদেশে চাল পাঠাতে পারছেন না তিনি।

নারী শ্রমিক ছবেদা বেগম বলেন, এখানে কাজ করতে ভালো লাগে। পরিবেশ ভালো, আয় ভালো-সংসার চলে যায়।
ম্যানেজার আখতার হোসেন বলেন, অনলাইনে প্রচুর অর্ডার আসে। আউটলেট থাকলে সরবরাহও বাড়ানো যেত এবং দাম আরও কমানো সম্ভব হতো।

প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভবিষ্যতে আরও ২৫ জোড়া ঢেঁকি স্থাপন করার স্বপ্ন আছে। এ স্বপ্ন পূরণ হলে প্রতিদিন আড়াই টন চাল উৎপাদন করা সম্ভব । এতে সরাসরি কর্মসংস্থান হবে আরো অন্তত ২০০ জন বেকারের।
তিনি আরো বলেন, লাল চালের চাহিদা তৈরি হয়েছে পরিকল্পিত মার্কেটিং ছাড়াই। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চালের মার্কেটিং করতে তেমন একটা পারেননি। এই চালের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারী ভাবে কারিগরি সহায়তা এবং স্বল্প সুদে বা সুদমুক্ত বড় ঋণ সহায়তা পেলে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে। গাইবান্ধায় হাজারও বেকারের এতে কর্মসংস্থান হবে আশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফেরদৌস ভোরের আকাশকে বলেন, বিসিক সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে রয়েছে। তার ইলেকট্রিক ঢেঁকি দেখেছি। আমরা তাকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এবং ঋণ হিসাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। তিনি দিন দিন তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন। আমরা তার সফলতা কামনা করছি।
ভোরের আকাশ/তা.কা