× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কুমিল্লায় মা-মেয়েকে হত্যা: সেই কবিরাজের চাঞ্চল্যকর তথ্য

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

 কুমিল্লায় মা-মেয়ে হত্যা মামলার আসামি কবিরাজ মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ছিল। এক ঘটনায় মামলা হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে সে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। 

কিছুদিন আগে দেশে ফিরে নতুন করে মাদরাসা গড়ে তুলে কবিরাজি শুরু করে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকা থেকে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৫২) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন (২৩)। নিহত সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পড়তেন। প্রায় চার বছর ধরে কালিয়াজুরী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। তাহমিনা বেগম দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত তাহমিনার বড় ছেলে তাজুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার মোবারক হোসেনের বাড়ি জেলার দেবীদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে। তিনি কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁও কাজীবাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে (সুমাইয়া আফরিন) জিন আছর করেছে। এ জন্য ঝাড়ফুঁক করানোর জন্য মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় মাদরাসার এক শিক্ষকের কাছে যেতেন মা। সেখানে মসজিদের খাদেম মোবারকের সঙ্গে পরিচয় হয়। মোবারক নিজেও কবিরাজি করেন বলে ছাত্রীর মাকে জানান।

এক পর্যায়ে মেয়ের ‘জিন’ তাড়ানোর জন্য কবিরাজ মোবারক হোসেনকে বাসায় ডাকেন তাহমিনা বেগম। ঘরে ঢুকে মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে কবিরাজ। ধস্তাধস্তির শব্দ পেয়ে সন্দেহ হলে এগিয়ে যান মা। এ সময় তরুণীকে কক্ষের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে মাকে নিয়ে যায় পাশের কক্ষে। সেখানে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে কবিরাজ। এরপর মেয়ে সুমাইয়া আফরিনকে গলাটিপে হত্যা করে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও চার্জার নিয়ে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তার আসামির স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার এসব তথ্য জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ জুন কুমিল্লার ধর্মপুর পশ্চিম চৌমুহনীর হযরত খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদরাসা ও এতিমখানায় সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা করে মোবারক। ধর্ষণে বাধা দেয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে সেসময় ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যাচেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সেই কক্ষে তার কাছ থেকে পানি পড়া নিতে এক নারী এলে দৌড়ে পালিয়ে যায় এই ছাত্রী। ওই মাদরাসার মুহতামিম ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মোবারক। মাদরাসার একটি বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করত মোবারক। পাশের গলিতে ছিল তার শ্বশুরবাড়ি।

ওই ঘটনার দিনই আরেক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে কবিরাজ মোবারক। পরে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে ঘটনা জানায় ভুক্তভোগী। একই দিনে দুটি ঘটনা ঘটার ফলে দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে তিনি বিচারে এক লাখ টাকা জরিমানা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সঠিক বিচার না পেয়ে ২০২৩ সালের ১২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করে একটি পরিবার।

ভুক্তভোগী একটি শিশুর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল কবিরাজ মোবারক। সেসময় এক নারী এসে পড়ায় রক্ষা পায়। আমরা স্থানীয় সালিশে বিচার না পেয়ে মামলা করি। এর পর মামলা উঠানোর জন্য সে ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। আরেকটা মেয়ের সঙ্গে এমন করেছে। এটা জানাজানি হলে তার পরিবারকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে এলাকা থেকে চলে যায় মোবারকের পরিবার।’

মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সৌদি আরবে চলে যায় আসামি। সৌদি পুলিশের হাতে দুই বছর আটক থাকার পর গত জুলাই মাসে দেশে ফিরে আসে। মোবারকের মাদরাসার আশপাশের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে মোবারক কবিরাজি পেশায় জড়িত। বদরপুর মাদরাসার কবিরাজ ও পীর ইলিয়াস শাহ থেকে এসব আয়ত্ত করেছে।

মোবারকের মাদরাসার এক ছাত্রী জানান, ‘উনি ভালো মানুষ ছিলেন না। মেয়ে পটানো কালোজাদু করত। আমি অনেক দেখছি। উনার চিকিৎসা নেয়ার জন্য অনেক রাজনৈতিক নেতারাও আসতেন। তারা উনাকে চালের বস্তা, তেল, চিনি থেকে যাবতীয় কিছু দিতেন।’

মাদরাসার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা হাসিনা বেগম জানান, ‘তাকে বিশ্বাস করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অনুরোধে মাদরাসা করার জন্য বাসা ভাড়া দিয়েছেন তিনি। প্রথমদিকে এদিক-সেদিক থেকে সাহায্য নিয়ে মাদরাসা চালাতেন। কিন্তু কিছুদিন পরে মাদরাসায় সিসিটিভি, এসি, ফ্রিজ সব নিয়ে আসছে। নিজের জন্য মোটরসাইকেলও কিনেছেন।’

মোবারকের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, নূরানি পর্যন্ত গ্রামের একটি মাদরাসায় পড়েছে মোবারক। এরপর বদরপুর মাদরাসায় ভর্তি হয়। সেখানেই কবিরাজি আয়ত্ত করে। পরিবারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

মোবারকের বড় ভাই মো. সুজনের দাবি, তার ভাই আগে এমন ছিল না। ইলিয়াস শাহ তাকে বিপথগামী করেছেন। সে যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে শাস্তি হোক।

মোবারকের স্ত্রী সুমাইয়া বলেন, ‘উনি হত্যাকারী কিনা জানি না। পুলিশ হত্যার পরে আমার মোবাইল ফোনও নিয়ে গেছে। উনি মেয়েদের নিয়ে এসব করে জানতে পারার পরে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু আমার ছোট দুটি মেয়ে আছে, ওদের দিকে তাকিয়ে তালাক দিইনি।’

একজন ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামিকে কেন এতদিন আটক করা হয়নি? এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, ‘এমন একটা ঘটনা শুনেছি, মামলা হয়েছে কিনা সেটা আমরা জানি না। আর এটা তো প্রিভিয়াস ইস্যু এটা কেন আসবে এখন।’

মামলার পিপি অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ সবুজ জানান, ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই পলাতক ছিল।

ভোরের আকাশ/মো.আ.

  • শেয়ার করুন-
সুনামগঞ্জে পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

সুনামগঞ্জে পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

নাসিরনগরে সালিশের মধ্যে সংঘর্ষে যুবক নিহত

নাসিরনগরে সালিশের মধ্যে সংঘর্ষে যুবক নিহত

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি

রাজবাড়ীতে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপভ্যানে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২

রাজবাড়ীতে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপভ্যানে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২

 সবজি-মুরগি-মাছের দাম চড়া, স্বস্তি নেই চাল তেলে

সবজি-মুরগি-মাছের দাম চড়া, স্বস্তি নেই চাল তেলে

 শিবচরে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

শিবচরে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

 জুমার খুতবা চলাকালে দানবাক্স চালানো যাবে কি?

জুমার খুতবা চলাকালে দানবাক্স চালানো যাবে কি?

 সহজ ম্যাচ হেরে অদ্ভুত অজুহাত বাংলাদেশ কোচের

সহজ ম্যাচ হেরে অদ্ভুত অজুহাত বাংলাদেশ কোচের

 বিয়ের কাগজপত্রসহ প্রমাণ নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী, অতঃপর...

বিয়ের কাগজপত্রসহ প্রমাণ নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী, অতঃপর...

 দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর কান কামড়ে ছিঁড়ে নিলেন স্ত্রী

দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর কান কামড়ে ছিঁড়ে নিলেন স্ত্রী

 আজ বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

আজ বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

 কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া, ভিসা সহজীকরণ চায় বাংলাদেশ

কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া, ভিসা সহজীকরণ চায় বাংলাদেশ

 পিরোজপুরে মুখোশধারীদের হামলায় আহত প্রধান শিক্ষক

পিরোজপুরে মুখোশধারীদের হামলায় আহত প্রধান শিক্ষক

 টুংগিবাড়িয়া গ্রাম আদালত পরিদর্শনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নয়ন সহযোগীরা

টুংগিবাড়িয়া গ্রাম আদালত পরিদর্শনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নয়ন সহযোগীরা

 সুনামগঞ্জে পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

সুনামগঞ্জে পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

 শ্রম সংস্কারে একমত রাজনৈতিক দলগুলো, বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্ব ড. ইউনূসের

শ্রম সংস্কারে একমত রাজনৈতিক দলগুলো, বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্ব ড. ইউনূসের

 শাহরুখ–আরিয়ানের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকার মানহানি মামলা

শাহরুখ–আরিয়ানের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকার মানহানি মামলা

 একদিনে ৭০ নতুন কমিটি দিল ছাত্রদল

একদিনে ৭০ নতুন কমিটি দিল ছাত্রদল

 ফরিদপুরে দুর্গাপূজা: ৭৫৮টি মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা, কড়া নিরাপত্তা

ফরিদপুরে দুর্গাপূজা: ৭৫৮টি মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা, কড়া নিরাপত্তা

 বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের পাকিস্তান

বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের পাকিস্তান

সংশ্লিষ্ট

শিবচরে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

শিবচরে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

বিয়ের কাগজপত্রসহ প্রমাণ নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী, অতঃপর...

বিয়ের কাগজপত্রসহ প্রমাণ নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী, অতঃপর...

আজ বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

আজ বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

পিরোজপুরে মুখোশধারীদের হামলায় আহত প্রধান শিক্ষক

পিরোজপুরে মুখোশধারীদের হামলায় আহত প্রধান শিক্ষক