আ.লীগের সুবিধাভোগীর জন্য উপদেষ্টার তদবির

সচিব হওয়ার দৌড়ে তোফাজ্জেল হোসেন

আ.লীগের সুবিধাভোগীর জন্য উপদেষ্টার তদবির

শিপংকর শীল

প্রকাশ : ২ দিন আগে

আপডেট : ৪৬ মিনিট আগে

আ.লীগের সুবিধাভোগীর জন্য উপদেষ্টার তদবির

আ.লীগের সুবিধাভোগীর জন্য উপদেষ্টার তদবির

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি বর্তমানে সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সিনিয়রদের টপকে সচিব হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক তিন প্রতিমন্ত্রীর এই একান্ত সচিবকে সচিব করতে ডিও লেটার দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

তোফাজ্জেল হোসেনের ব্যক্তিগত তথ্যবিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর থকে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই মন্ত্রণালয়ে ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত আবারও আওয়ামী প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ২২ জুন পর্যন্ত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু তাই নয় ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এদিকে আওয়ামী সুবিধাভোগী অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে পূর্ণসচিব করতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসুর রহমানকে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা ওই ডিওতে ফরিদা আখতার লিখেছেন, ‘প্রিয় সিনিয়র সচিব, আন্তরিক শুভেচ্ছা নিবেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা জনাব মো. তোফাজ্জেল হোসেন (পরিচিতি নং-৬৩০৫) গত ৩১.১২.২০২৪ খ্রি. হতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বিগত ১১.০১.২০২৩ খ্রি. তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে অতিরিক্ত সচিব পদে এ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং তাকে পরিকল্পনা অনুবিভাগের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমার দেখা মতে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সততার সঙ্গে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য, বদলিজনিত কারণে এ মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদটি শূন্য হলে মো. তোফাজ্জেল হোসেনকে কাজের অভিজ্ঞতা এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিম্নস্বাক্ষরকারী কর্তৃক সচিবের রুটিন দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।’

চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘মো. তোফাজ্জেল হোসেনের মতো একজন মেধাবী এবং প্রতিভাবান কর্মকর্তাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে পদায়ন করা হলে তিনি স্বীয় মেধা, সততা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনসহ উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের যাবতীয় কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন মর্মে আমি বিশ্বাস করি। এমতাবস্থায় মো. তোফাজ্জেল হোসেন (পরিচিতি নং-৬৩০৫)-কে সচিব হিসাবে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ের প্রয়োজন হলে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে অন্য কাউকে পদায়ন না করে তাকে আপাতত এ রুটিন দায়িত্বে রেখে দেওয়ার অনুরোধ করছি।’

এদিকে সম্প্রতি এই ডিও লেটার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নায়ের সায়ের খান একটি পোস্ট দেন। এক ঘণ্টার মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ওই পোস্টে অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল হোসেনকে ওএসডি করারও দাবি উঠেছে। এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন। 

তিনি লিখেছেন, পদোন্নতির একটি সিস্টেম আছে। সচিব পদে পদোন্নতির জন্য কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপদসহ কমিটি আছে। যার নাম এসএসবি কমিটি। ডিও লেটারে পদায়ন হয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। সচিব পদে পদোন্নতির ডিও লেটার জীবনে এই প্রথম দেখলাম। কে জানে! এসএসবি বাদ দিয়ে মোখলেস স্যার ডিও লেটার দেখে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর সচিব করার জন্য ফাইল পাঠিয়েও দিতে পারেন। এটা উপদেষ্টা করলেও সুস্পষ্ট তদ্বির। কর্মকর্তার জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

এদিকে তোফাজ্জেল হোসেনের জন্য দেওয়া এই ডিওকে উদ্দেশে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও এনসিপি নেতা সারজিস আলমের পোস্টে একটি মন্তব্য করেন মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিস কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. নাজমুল হুদা।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারির ওই সারজিস আলমের একটি পোস্টে তিনি লেখেন ‘আপনারা স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের সচিব বানানোর জন্য ডিও দেন, আবার বড় বড় কথা বলেন ভাইয়া’। অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেলকে দেওয়া ডিওকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই মন্তব্যের জের ধরেই পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারিতে সিনিয়র সহকারী সচিব সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় নাজমুল হুদাকেও।

সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ নামক একটি প্রকল্পে ‘ফায়ার ফাইটিং সিমুলেটর’ এর জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ৭ লাখ টাকা টেন্ডার সিকিউরিটি দেওয়ার কথা থাকলেও যে প্রতিষ্ঠান ৫ লাখ টাকা টেন্ডার সিকিউরিটি দেয় তাকেই কাজটি দেওয়া হয়। এ নিয়ে একটি অভিযোগও করা হয়। এ দরপত্র অনুমোদন মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল এর হাত ধরেই হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সে ছিল আওয়ামী সুবিধাভোগী। এখন আবার সেজেছে সংস্কারপন্থি। অথচ সে কোথায় কোথায় পোস্টিং পেয়েছিল সেসব কিছু মুছে যায়নি। সে সচিব হতে এখন মরিয়া হয়ে আছে। অনেক সিনিয়ররা সচিব হতে পাইপলাইনে থাকলেও সেই এই পদটি পেতে যা যা করা প্রয়োজন সেটাই করছে।

এদিকে এ বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত সচিব তোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

বেঙ্গল বিল্ডার্সের তিন কর্মকর্তা অপহরণ

বেঙ্গল বিল্ডার্সের তিন কর্মকর্তা অপহরণ

আ.লীগের সুবিধাভোগীর জন্য উপদেষ্টার তদবির

আ.লীগের সুবিধাভোগীর জন্য উপদেষ্টার তদবির

সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে রোমহর্ষকতা

সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে রোমহর্ষকতা

৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

মন্তব্য করুন