ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫ ০৭:২১ পিএম
সংগৃহীত ছবি
ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে মার্কিন মুদ্রাটির দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবারও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিলামের মাধ্যমে আরও ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ডলারের বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিতে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে এসব ডলার কেনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর নিলামে ডলার কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১২১.৯৫ টাকা কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে, এক সপ্তাহের মধ্যে ডলারের দাম প্রায় ৩ টাকা কমে যাওয়ার পর গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনে। সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১.৫০ টাকা দরে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার কেনে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেকটি নিলামের মাধ্যমে একই দরে আরও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনে।
পরপর দুটি নিলামে বেশি দামে ডলার কেনার পর মুদ্রাটির দাম বাড়তে শুরু করে। গতকাল রেমিট্যান্স ও আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের দর ১২২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি নিষ্পত্তির জন্য ১২২.৫০ টাকা পর্যন্ত রাখছে।
বাজারের গতিপ্রকৃতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশল : পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনার নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করবে, সেটি তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিনে বাজারে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করায় ডলারের বাজার বর্তমানে কিছুটা টাইট।’
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে ডলারের প্রবাহ বাড়লে বাজারের তারল্য পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। ‘ডলারের বাজার প্রতি সপ্তাহেই ওঠা-নামা করে। গত কয়েকদিনে ডলারের রেট বাড়লেও সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই আমাদের মনে হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে ডলারের বাজারে যে অস্থিতিশীলতা ছিল, সেটি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বাজারকে আমাদের আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডলারের বাজারে স্পট বিনিময় হার ছিল ১২১.৯৪ টাকা। আর ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক বাজারে ১২১.৬০ টাকা থেকে ১২২.০২ টাকা দরে ডলার লেনদেন করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকজন নীতি নির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ডলারের রেট সরাসরি নির্ধারণ করতো, তখন একটি নির্দিষ্ট দরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনত। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ঋণের শর্তানুযায়ী, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা হয়।
এই ঋণের আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফকে আশ্বস্ত করেছিল, তারা আগের মতো আর সরাসরি বাজারে হস্তক্ষেপ করবে না, কখনও বাজার থেকে ডলার কেনার প্রয়োজন হলে মার্কেট রেটেই কিনবে। সে অনুযায়ীই বর্তমানে বাজার থেকে ডলার কেনার ক্ষেত্রে নিলামের আয়োজন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল ছিল ডলারের বাজার। লেনদেন হয়েছে ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারভিত্তিক করা হয় ডলারের দাম। এরপর কিছুটা বাড়তে থাকে বিনিময় মূল্য। লেনদেন হয় সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৯৫ পয়সায়। তবে জুনের মাঝামাঝি থেকেই কমতে থাকে দাম। ১৪ জুলাই দাম কমে দাঁড়ায় ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। মূলত রফতানি ও রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে যোগান বাড়ে ডলারের। এর সাথে যোগ হয় ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে। কমে আসে বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতিও। যার প্রভাব পড়ে বিনিময় মূল্যে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রপ্তানি বেড়েছে, অন্যদিকে আমদানির কিন্তু চাপ কমে গেছে। ক্যাপিটাল আমদানি প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। হুন্ডির একটা চাহিদা ছিল, মানে বৈদেশিক মুদ্রার একটা ডিমান্ড ছিল বাইরে, সেটা কিন্তু এখন আর নেই। পেমেন্টের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার যে চাপ তা অনেকটাই বলতে গেলে নাই। তাই বাজার এখন স্থিতিশীল। বাজারে তারল্য আসায় দাম পড়ে গেছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ