অর্থনীতি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫ ১১:৫৬ পিএম
খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা দেশের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার (১৫ জুন) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ও কঠোর নিয়মনীতি বাস্তবায়নের ফলে এতদিন যেসব অনাদায়ী ঋণ কাগজে-কলমে ‘নিয়মিত’ বা ‘ভালো’ হিসেবে দেখানো হতো, সেগুলো এখন মন্দ ঋণ হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এর ফলে রাজনৈতিক প্রভাব এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময় বিতরণ করা বিতর্কিত ঋণগুলোর প্রকৃত অবস্থা এখন সামনে আসছে।
বিশ্লেষকদের মতে, খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র উন্মোচনের ফলে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে একই সঙ্গে এটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।
তুলনামূলকভাবে, গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে অনুযায়ী এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
আইএমএফের শর্ত পূরণে বাংলাদেশ সরকারকে ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দেখা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ এক লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা খেলাপি। অন্যদিকে, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা টাকায় দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি। বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। পরবর্তীতে এ পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ন্ত্রিত ঋণ অনুমোদনের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, যা খেলাপি ঋণের চাপকে আরও বাড়িয়েছে।
ভোরের আকাশ//হ.র