অর্থ উপদেষ্টার আশা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫ ১১:৩০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়া এবং রপ্তানি আয় মোটামুটি ভালো হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় গতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের একটা নির্দিষ্ট সময় প্রকাশ হওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট। কারণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। দেশে নিয়ম-নীতি ঠিক থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ।
বুধবার (২৫জুন) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির বৈঠকে গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে গমের দাম কমেছে। ফলে গম কেনায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, হরমুজ প্রণালি ঘিরে অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়েনি। যুদ্ধের (ইরান-ইসরায়েল) মধ্যেও জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয় হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে যে প্রাইস ছিল যুদ্ধ বন্ধের পর সেটা কমেছে। দ্রুত পুনঃনিলাম করে ৫ থেকে ১০ ডলার কম পেয়েছি। সেখানে প্রায় ৭০-৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সফলতা। মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে আসা সারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখানে কোনো উপায় ছিল না। চাল ও গমের যে রিজার্ভ আছে সেটি এখনো সন্তোষজনক। তবুও আমরা বলেছি ৫০ হাজার টন গম এনে রাখার জন্য। যেন খাদ্যের কোনো খাটতি না হয়- বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
আইএমএফের অর্থছাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের একটা সময় প্রকাশ হওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট। আইএমএফ আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না। আমরা তো বলেছি হবে। রিসেন্টলি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এএফডি, এআইআইবি ঋণ অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশে সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখে সবাই সন্তুষ্ট।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ একটু স্লো আছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে বাজেট সাপোর্ট আসায় ফরেন রিজার্ভ বেড়েছে। রপ্তানিটাও এখন মোটামুটি ভালো। রেমিট্যান্স ভালো আসছে। সৌদি আরবে গিয়ে জানলাম, আমরা আসছি বলেই প্রবাসীরা টাকা পাঠাচ্ছে। আগে তারা টাকা পাঠাতে স্বস্তি পেতো না। টাকা পাঠালে কোথায় যায়, কী হয় এগুলো নিয়ে তাদের অস্বস্তি ছিল।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, অর্থনৈতিক সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। রাজনীতি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন নির্বাচনের সম্ভাব্য একটা সময় প্রকাশ হওয়ায় সবাই সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, রিসেন্টলি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অ্যাপ্রুফ করেছে, এডিবি অ্যাপ্রুফ করেছে, গত পরশু এআইবি বিরাট একটা অংক অ্যাপ্রুফ করেছে। আমাদের সংস্কার কার্যক্রমের যে প্রগ্রেস, তারপর অর্থনৈতিক খাতে আমরা যেটা করেছি তাতে তারা সন্তুষ্ট বলেই কোনো এজেন্সি এখন পেন্ডিং নেই। আইএমএফ থেকে লেটেস্ট এসেছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের আস্থা আরও বেশি কীভাবে আনা যায় আমরা দেখবো। তাদের মোটামুটি আস্থা কিন্তু আছে। আমরা যখন ফরেন এক্সচেঞ্জ ওপেন করি (ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া) তখন আমাদের অনেক টেনশন ছিল, হঠাৎ কী হয়। পাকিস্তানের মতো হয়ে গেলে তো আমাদের জন্য বিপদ। সেটা হয়নি।
অন্য এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ এখন স্লো আছে। ওরা লক্ষ্য করছে ফরেন এক্সচেঞ্জ স্থিতিশীল কী না। এখন তো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটু বেড়েছে। দেশে রেগুলেটরিটি বিষয়টি ঠিক থাকলে ডেফিনেটলি বিনিয়োগ বাড়বে।
৫০ হাজার টন গমসহ ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন : সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এই গম আনতে ব্যয় হবে ১৬৮ কোটি ৮২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আজ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ২৪তম সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সর্বমোট ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে সব ক’টি প্রস্তাবই অনুমোদন দেওয়া হয়।
এরমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ৩টি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব রয়েছে। জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১ এর আওতায় ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স সিরিয়াল ক্রপস ট্রেডিং এলএলসি থেকে এই গম ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৬৮ কোটি ৮২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতি টন গমের দাম পড়বে ২৭৫ মার্কিন ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানি করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৭ লাখ ২৫ হাজার টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৫ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ