× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আইএমএফের ঋণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ

তাকী মোহাম্মদ জোবয়ের

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫ ১০:০৮ এএম

আইএমএফের ঋণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ

আইএমএফের ঋণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি বাংলাদেশ পাচ্ছে কি না সেটি নির্ধারণ হচ্ছে আজ সোমবার। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে মিটিংয়ে বসবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কঠোর গোপনীয় এই মিটিংটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ডলারের বিনিময় হার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ঋণের দুটি কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার ছাড়করনের বিষয়টি ঝুলে গেছে। আইএমএফ চাইছে, ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় এই শর্তে বিগত বৈঠকগুলোতে দ্বিমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ। আজকের বৈঠকে যদি দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে আগামী জুনে ঋণের দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। এর আগে দুই পক্ষের কর্মকর্তা পর্যায়ের চুক্তি হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এটি যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বৈঠক, তবে উভয় পক্ষ চাইলে আরও বৈঠক হতে পারে। এজন্য বাংলাদেশের হাতে আরও কিছু সময় রয়েছে। কারণ আগামী জুনের শেষে যদি আইএমএফের পর্ষদ সভা হয় তাহলে এর এক মাস আগে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলেই হবে।  তবে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতার পেছনে অন্য কোনও অদৃশ্য কারণ আছে কি না- সেটি নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে।

আলোচনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু এগ্রেগেটর প্রতিষ্ঠান, যারা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রবাসীদের ডলার সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠায়, তারা এখানে প্রভাব বিস্তার কারার চেষ্টা করে থাকতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের এক বক্তব্যেও এর ইঙ্গিত মিলেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক এগ্রেগেটর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে কি না? ওই প্রশ্নের উত্তরে আহসান এইচ মনসুর দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘যে যাই চেষ্টা করুক, আমরা কারো কাছে নত হবো না। আমাদের কাছে অনেকে অনেক ধরনের প্রস্তাব নিয় আসে। আমরা এগুলো স্পষ্টভাবে না করে দিয়েছি।’ রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক দেনার চাপ সামাল দিতে ২০২২ সালে আইএমএফের দারস্থ হয় বাংলাদেশ। 

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেওয়ার কথা। যথাসময়ে প্রথম তিন কিস্তির ২৩১ কোটি ডলার ঋণ পায় বাংলাদেশ। সর্বশেষ কিস্তি পায় ২০২৪ সালের জুনে। চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। কিন্তু নানা শর্তে সেই ঋণ আটকে যায়। পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করলে চলতি বছরের মার্চে ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাবে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসু না হওয়ায় ঘোষণা আসে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একত্রে চলতি বছরের জুনে দেওয়া হবে।

এ নিয়ে আলোচনার জন্য গত মাসে বাংলাদেশে আসে আইএমএফ মিশন। ওই সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায়, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের অবসরে আবারও আলোচনা হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ে সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকের অবসরে আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনার টেবিলে বসেন অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর সহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

ওই আলোচনায় দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় বাংলাদেশে ফিরে পৃথক বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্ট ও গভর্নর বলেছেন, শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ নিতেই হবে এমন অবস্থানে নেই বাংলাদেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে আজ আবারও বৈঠকে বসছে দুই পক্ষ। আজকের বৈঠকে কতটুকু ঐক্যমত্যে পৌঁছানো যায়, তার ওপর নির্ভর করছে আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তিগুলোর ভবিষ্যৎ।

আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ : এদিকে আইএমএফের ঋণের শেষ দুই কিস্তি না পেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, রিজার্ভের চাপ এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতার প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সংস্থাটি ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাংলাদেশের ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং) কমে যেতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেন ব্যাহত হতে পারে। আমদানি-রপ্তানি ঋণপত্রের (এলসি) খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সহ অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে ঋণ প্রাপ্তি কঠিন হতে পারে। তবে ভিন্ন মতও আছে।

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আইএমএফের ঋণ স্বল্পমেয়াদে সহায়তা করলেও এর শর্ত যেমন বিভিন্ন খাতে সরকারি ভর্তুকি কমানো, সুদের হার বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে কষ্টে ফেলতে পারে। তারা সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনার মতো দেশ আইএমএফের ঋণ নেওয়ার পর সংকটে পড়েছিল, যা বাংলাদেশকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে তারা যে শর্তগুলো দেয়, তা সাধারণ মানুষের বিপক্ষে যায়। কারণ তারা ভর্তুকি কমাতে বলে, সুদের হার বাড়াতে বলে। সরকারের অন্যান্য গণমুখী নীতি থেকে বের হয়ে সরকারের ব্যয়ের চাপ কমাতে বলে। বাংলাদেশকে কিন্তু ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আইএমএফের ঋণ নিতে হয়নি। নিরুপায় হয়ে ২০২৩ সালে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণে সংকট কাটানোর উদাহরণ তেমন একটা নেই। যেমন ইন্দোনেশিয়া বিপদে পড়ে আইএমএফের ঋণ নিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন তাদের অর্থনীতিকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল। অনেক পরে এখন তারা সংকট কাটিয়ে উঠেছে। একই অবস্থায় পড়েছিল আর্জেন্টিনা। যে কারণে ১৯৯৭ সালে সংকটে পড়েও মালয়েশিয়া এই সংস্থাটির ঋণ নেয়নি। নিজেরাই সংস্কার করে সংকট কাটিয়ে উঠেছিল।

আইএমএফের ঋণ নিয়ে উপকৃত হয়েছে এমন রেকর্ড খুঁজে পাওয়া কষ্টকর উল্লেখ করে অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, তাদের ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক দেরি হয়। কারণ, আইএমএফের প্রেসক্রিপশনের প্রধান উদ্দেশ্য কোনো দেশকে সংকট থেকে উদ্ধার করা নয়। তাদের এজেন্ডার মধ্যে ‘প্রো-ক্যাপিটালিস্ট’ বায়াস থাকে। এর প্রভাবে মানুষের আয় বৈষম্য বাড়ে, ধনীদের সম্পদ অনেক বেশি বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আইএমএফের মূল দৃষ্টি থাকে যেই ঋণ আমরা নিচ্ছি, সেটা যেন ফেরত দিতে পারি।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন

খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন

 আবার বেড়েছে সোনার দাম

আবার বেড়েছে সোনার দাম

 ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব

ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব

সংশ্লিষ্ট

আবারও বাড়ল সোনার দাম

আবারও বাড়ল সোনার দাম

এবি ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মিজান

এবি ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মিজান

দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি

দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি

এবার ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

এবার ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে