× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বছরে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে বাংলাদেশ

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫ ০৯:৫৩ এএম

বছরে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে বাংলাদেশ

বছরে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে অবস্থান করেই কানাডার একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন সোয়াহেল হাসান (ছদ্ম নাম)। মাসে তিনি বেতন পান ৮ হাজার ৫শ ডলারের মতো। বেতনের মাত্র ২ হাজার ডলার দেশে আনেন তিনি। এই অর্থ দিয়ে নিজের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন। বাকি সাড়ে ৬ হাজার ডলার যুক্তরাজ্যের একটি ভার্চ্যুয়াল ব্যাংকের একাউন্টে সঞ্চয় করেন। নিজের আইটি ব্যবসা ও ই-কমার্স ব্যবসায় ওই ডলার খরচ করেন তিনি।

এতে মাসে তার সাশ্রয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। কারণ, এই টাকা দেশে আনার পর আবার বিদেশে পাঠাতে গেলে ২৫ শতাংশ হারে কর দেওয়া লাগতো। সোহায়েল হাসান ব্যবসায়িক কাজে বিদেশে অর্থ সঞ্চয় করলেও তার মতো অনেকেই বেশি দামে দেশের বাইরে ডলার বিক্রি করে দেন। এক্ষেত্রে তারা প্রতি ডলারে তিন থেকে চার টাকা বেশি পান। ওই ডলারগুলো আবার কিনে নেন বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীরা। এমনই একজন ব্যবসায়ী নাহিদ রায়হান। নিজের দুটি ই-কমার্স ব্যবসার ফেসবুক মার্কেটিং বাবদ বছরে তার খরচ হয় প্রায় ৩৬ হাজার ডলার।

বাংলাদেশি ব্যাংকের কার্ড দিয়ে এই ডলার খরচ করলে তাকে ভ্যাট ও কর দিতে হতো ৩০ শতাংশ হারে। বাড়তি প্রায় ১১ হাজার ডলার বা ১৩ লাখ টাকার বেশি খরচ হতো এই বাবদ। প্রতি ডলার কিনতে খরচ হতো ১৫৮ টাকা ৬০ পয়সা। কিন্তু তিনি বিদেশি ভার্চুয়াল কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক খোলা বাজার থেকে ডলার কিনছেন ১৩৫ টাকায়। প্রতি ডলারে সাশ্রয় হচ্ছে ২৩ টাকার বেশি। নাহিদ রায়হানের অভিযোগ অনুযায়ী ৩০ শতাংশ ভ্যাট ও করের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এই প্রতিবেদক নিজের আইএফআইসি ব্যাংকের ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দিয়ে একটি ফেসবুক প্রমোশন কেনেন। 

সেখানে দেখা যায়, প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য হিসেবে একাউন্ট থেকে কেটে নেয় ১৪০ টাকা ৩০ পয়সা। এর সঙ্গে আরও ১৮ টাকা ৩০ পয়সা ভ্যাট হিসেবে কর যোগ করা হয়। সব মিলিয়ে এক ডলারের জন্য ব্যাংকে দিতে হয় ১৫৮ টাকা ৬০ পয়সা। 

বিষয়টি বোঝার জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের কল সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, ব্যাংক প্রতি ডলারের মূল্য নিচ্ছে ১২২ টাকা। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ উৎসে কর যোগ করে নেওয়া হচ্ছে ১৪০ টাকা ৩০ পয়সা। আর যাদের ব্যবসায়িক শনাক্তকরণ নাম্বার (বিন) নেই তাদের কাছ থেকে আরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যা সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে প্রতি ডলারের সেবা ক্রয়ে ভ্যাট ও কর বাবদ ৩০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে ভোক্তাকে।

এই ৩০ শতাংশ কর ও বিদেশে ডলার পাঠাতে ২৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা এড়াতে কারণে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা তাদের আয়ের একটি বড় অংশ দেশে আনছেন না। এজন্য কর ও ভ্যাটের বোঝার পাশাপাশি বিদ্যমান বৈষম্যকেও তারা দায়ী করছেন। তাদের কথায়, প্রবাসীরা দেশে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রায় আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেলেও ফ্রিল্যান্সাররা পান না। অথচ তারাও রেমিট্যান্স নিয়ে আসছেন দেশের জন্য। এই বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বছরখানেক আগে উদ্যোগ নিয়েছিল বলে জানা গেছে। ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি প্রস্তাব গেলেও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এই এক সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রিতায়ই বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

এক হিসাবে দেখা গেছে, বছরে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা। এর মধ্যে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার দেশে আসে। নীতি সহায়তার অভাবে বাকি ২ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ হাজার ৪শ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করতে রীতিমতো খাবি খেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচল রাখতে নানা জটিল ও কঠিন শর্তে রাজি হয়ে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে হচ্ছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ দেশে আনতে পারলেই মাত্র আড়াই বছরে এই পরিমাণ ডলারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।

ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ দেশে আনতে আকৃষ্ট করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কেন উদ্যোগ নিচ্ছে না সেটি জানতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ভোরের আকাশ’কে বলেন, ‘কারা রেমিট্যান্সে প্রণোদনা পাবেন সে বিষয়ে একটি নীতিমালা রয়েছে। বিদ্যমান এই নীতিমালার মধ্যে ফ্রিল্যান্সাররা পড়ছেন না।’

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশ’কে বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত অর্থ সংস্থান না থাকায় বিষয়টি নিয়ে আগানো যাচ্ছে না। অর্থ সংস্থান হলে আগামীতে ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে।’

বেশ কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা দুটি একাউন্ট ব্যবহার করেন। একটি দেশে এবং অন্যটি বিদেশে। ইউরোপ ও আমেরিকায় অনেক ডিজিটাল ব্যাংক রয়েছে যেগুলোতে বাংলাদেশে বসেই একাউন্ট খোলা ও পরিচালনা করা যায়। তাদের পারিশ্রমিকের অর্থ এসব ডিজিটাল একাউন্টে জমা হয়। সেখান থেকে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ দেশে আনেন পরিবারের খরচ মেটাতে।

বিদেশি গ্রাহকদের জন্য ভিডিও তৈরি করে দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নাহিদ হাসান ভোরের আকাশ’কে বলেন, ডলারের ব্যাংক রেট ১২২ টাকা হলেও বাস্তবে এর চেয়েও কম। কারণ, ব্যাংক অনেক চার্য কেটে নেয়। এতে ফ্রিল্যান্সাররা ১২০ টাকার কম পান প্রতি ডলারে। অথচ প্রবাসীরা আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলারে পান প্রায় ১২৫ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ফ্রিল্যান্সার জানান, তাদের মধ্যে অনেকেই পেপ্যাল ও পেয়োনিয়ারের মতো প্ল্যাটফর্মে ডলার বিক্রি করে ১২৫ টাকার বেশি দাম পান।

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ডলার বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন ভার্চুয়াল কমিউনিটি রয়েছে। এখানে যার ডলার কেনা প্রয়োজন বা যার ডলার বিক্রির প্রয়োজন তারা ঘোষণা দেন। দরদাম ঠিক করে নিজেদের আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার করেন। যিনি ডলার বিক্রি করেন তিনি বাংলাদেশে বসেই টাকায় ক্যাশ পেমেন্ট পেয়ে যান। এর মাধ্যমে বিপুল অর্থ হুন্ডি হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

ফ্রিল্যান্সার আসাদ জামান ভোরের আকাশ’কে বলেন, আমরা প্রায়ই ওয়েবসাইট প্রমোশনের জন্য বিদেশ থেকে সেবা কিনি। কিন্তু দেশের রাজস্ব বোর্ড এখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। এছাড়া, ফ্রিল্যান্সারদের এমন আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্সের ওপর ২৫ শতাংশ সোর্স ট্যাক্স দিতে হয়। অথচ আন্তর্জাতিক কার্ড থেকে পেমেন্ট করলে আমাদের এই করের বোঝা বহন করতে হয় না। এসব কারণেই আমাদের বেশিরভাগ অর্থ আন্তর্জাতিক কার্ডেই রাখি।

করের বোঝা কমিয়ে দেওয়া হলে এবং প্রবাসীদের মতো প্রণোদনা দেওয়া হলে আপনারা দেশে অর্থ আনবেন কি না- জানতে চাইলে ওই ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘অবশ্যই আনবো। আমরাও দিন শেষে দেশকে ভালোবাসি। দিন-রাত খেটে আমরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় করি। এতে আমরা স্বচ্ছল থাকি ঠিক, দেশও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তাই রাষ্ট্রেরও উচিত আমাদের জন্য বিষয়গুলো সহনীয় করা। কর যদি সহনীয় হয়, আমরাও যদি প্রণোদনা পাই, তাহলে প্রতি ডলারে দুই চার টাকা ক্ষতি হলেও আমাদের টাকা দেশেই আনতে চাই।’

আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম পেয়োনিয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশ এখন ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আসছে। ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে পাওয়া অনানুষ্ঠানিক হিসাব আমলে নিলে, সরকার নীতি সহায়তা দিলে বছরে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব এই খাত থেকে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় সারে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যারা নিয়মিত আয় করেন। এরা মাসে গড়ে ৮শ ডলারের বেশি আয় করেন।

বিএফডিএস’র চেয়ারম্যান ড. তানজিবা রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, যেসব ফ্রিল্যান্সার তাদের ট্যাক্স ফাইলিং ঠিকভাবে করেন তাদের ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট দিয়ে প্রমোশনাল কাজ করা হলে সোর্স ট্যাক্স কাটে না। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে, দেশের ষোলটি ব্যাংক ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো ফ্রিল্যান্সারদের ডকুমেন্টেশন ঠিকভাবে বোঝে না। এজন্য ট্যাক্স ফাইল থাকার পরও এসব ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে সোর্স ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে।

এজন্য বিএফডিএস বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, এই ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার। বিএফডিএস এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আবেদন করেছি যাতে ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বেশি সোর্স ট্যাক্স না কাটে।

সরকারের নীতি সহায়তার উদ্যোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা খুবই অল্প পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন, যা উদ্বেগের বিষয়। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রচলিত রেমিট্যান্সকারীদের মতো প্রণোদনা দেওয়ার অনুরোধ করে আসছি। একাধিক বৈঠকেও বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেছি। কিন্তু এখনও কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। হয়তো সামনে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 দিনাজপুরে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক নারীর, আহত ২০

দিনাজপুরে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক নারীর, আহত ২০

 নতুন পোপ নির্বাচনে ভ্যাটিকানে পৌঁছেছেন ১৩৩ কার্ডিনাল

নতুন পোপ নির্বাচনে ভ্যাটিকানে পৌঁছেছেন ১৩৩ কার্ডিনাল

 খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন

খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন

সংশ্লিষ্ট

আবারও বাড়ল সোনার দাম

আবারও বাড়ল সোনার দাম

এবি ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মিজান

এবি ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মিজান

দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি

দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি

এবার ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

এবার ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে