সংগৃহীত ছবি
প্রবাদে আছে—‘সময় ও স্রোত’ কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সাধারণভাবে বলা যায়, আজ যা অতীত আগামীকালের জন্য তা-ই ইতিহাস। আর এই সময়টাতে ঘটে চলে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সব ঘটনা ইতিহাসে স্থান পায় না। ইতিহাস আমাদের পথ দেখায়, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে চলি। সে জন্য আমাদের অতীতের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি জানা দরকার।
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
ঘটনাবলি
১১৮০ - ফিলিপ আগাস্তাস ফ্রান্সের রাজা হন।
১৪৩৭ - ট্রান্সসালভানিয়োতে কৃষক বিদ্রোহ হয়।
১৫০২ - ক্রিস্টোফার কলম্বাস কোস্টারিকা আবিষ্কার করেন।
১৬৩৫ - সম্রাট দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
১৭৩০ - ফ্রান্স ও স্পেন শান্তিচুক্তি করে।
১৮১০ - স্পেনীয় শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্য চিলি স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৮১৮ - চিলি স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ।
১৮৫১ - ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত।
১৯০৬ - টাইফুন ও সুনামিতে হংকংয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
১৯১৯ - নারীদের ভোটাধিকার দেয় নেদারল্যান্ডস।
১৯২৩ - ভারতের জাতীয় কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয়।
১৯২৪ - হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য মহাত্মা গান্ধী অনশন শুরু করেন।
১৯৩১ - জাপানের সেনাবাহিনী চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয়।
১৯৩৪ - সোভিয়েত রাশিয়া লিগ অব নেশনসের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৩৪ - মুসোলিনির শাসনে ৮ থেকে ৫৫ বছরের ইতালীয়দের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৯৬১ - সুইডিস রাজনীতিবিদ ও জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দ্যাগ হেমার শোল্ড এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
১৯৮২ - পশ্চিম বৈরুতের ছাটিলা ও সাবগার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে গণহত্যা চালায় ইসরায়েল।
১৯৮৯ - বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং বার্মা রাষ্ট্রের নাম হয় মিয়ানমার।
২০০৭ - পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নির্বাচনের পর সেনাবাহিনীর প্রধান পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন।
জন্ম:
১৮৬৭ - চিত্রশিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৮৬৯ - বিজ্ঞান লেখক জগদানন্দ রায়।
১৯০৫ - অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো।
১৯৫৪ - মার্কিন মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন পিংকার।
১৯৭০ - ইংলিশ ক্রিকেটার ড্যারেন গফ।
মৃত্যু:
১১৮০ - ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই।
১৭৮৩ - গণিতজ্ঞ লিওনার্ট অয়লার।
১৮৯৯ - বাঙালি চিন্তাবিদ এবং সাহিত্যিক রাজনারায়ণ বসু।
১৯৫৬ - প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী।
ভোরের আকাশ/তা.কা
সংশ্লিষ্ট
প্রাচীনকাল থেকেই সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ মানুষের কৌতূহল, বিস্ময় এবং ভয়ের কারণ হয়ে এসেছে। পৃথিবীর নানা দেশে এ দুই ধরনের গ্রহণকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কুসংস্কার গড়ে উঠেছে। কোথাও বলা হয়, গ্রহণের সময় খাওয়া-দাওয়া করা উচিত নয়, গর্ভবতী নারী বাইরে বেরোলে সন্তানের ক্ষতি হতে পারে, আবার কোথাও বিশ্বাস করা হয় গ্রহণের সময় দুর্যোগ নেমে আসতে পারে। এসব ধারণা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসলেও আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে এর কোনো ভিত্তি নেই।আসলে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হচ্ছে একেবারেই প্রাকৃতিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা। যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে তখন সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢাকা পড়ে যায়, একে বলা হয় সূর্যগ্রহণ। আবার পৃথিবী যখন সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে অবস্থান করে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে তখন চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। অর্থাৎ এ দুটি ঘটনা কেবলই সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থানের কারণে ঘটে।বিজ্ঞানীরা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন, স্বাস্থ্য বা ভবিষ্যতের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। তবে সূর্যগ্রহণের সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকালে চোখের ক্ষতি হতে পারে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই এ সময় সুরক্ষিত বিশেষ চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।অন্যদিকে, গ্রহণ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার যেমন গর্ভবতী নারীর উপর প্রভাব, খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা, বা অশুভ শক্তির প্রভাব—এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং এগুলো মানুষের অজ্ঞানতা, ভীতি এবং ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের কারণে ছড়িয়ে পড়েছে।গ্রহণ আসলে মহাজাগতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। পৃথিবীর মানুষ হাজার বছর ধরে এ দৃশ্য দেখে আসছে এবং আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এটি গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। তাই সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে ভয় বা কুসংস্কারের চোখে না দেখে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলোকে বোঝাই শ্রেয়।ভোরের আকাশ/তা.কা
প্রবাদে আছে—‘সময় ও স্রোত’ কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সাধারণভাবে বলা যায়, আজ যা অতীত আগামীকালের জন্য তা-ই ইতিহাস। আর এই সময়টাতে ঘটে চলে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সব ঘটনা ইতিহাসে স্থান পায় না। ইতিহাস আমাদের পথ দেখায়, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে চলি। সে জন্য আমাদের অতীতের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি জানা দরকার।বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।ঘটনাবলি১১৮০ - ফিলিপ আগাস্তাস ফ্রান্সের রাজা হন।১৪৩৭ - ট্রান্সসালভানিয়োতে কৃষক বিদ্রোহ হয়।১৫০২ - ক্রিস্টোফার কলম্বাস কোস্টারিকা আবিষ্কার করেন।১৬৩৫ - সম্রাট দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।১৭৩০ - ফ্রান্স ও স্পেন শান্তিচুক্তি করে।১৮১০ - স্পেনীয় শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্য চিলি স্বাধীনতা ঘোষণা করে।১৮১৮ - চিলি স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ।১৮৫১ - ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত।১৯০৬ - টাইফুন ও সুনামিতে হংকংয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।১৯১৯ - নারীদের ভোটাধিকার দেয় নেদারল্যান্ডস।১৯২৩ - ভারতের জাতীয় কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয়।১৯২৪ - হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য মহাত্মা গান্ধী অনশন শুরু করেন।১৯৩১ - জাপানের সেনাবাহিনী চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয়।১৯৩৪ - সোভিয়েত রাশিয়া লিগ অব নেশনসের অন্তর্ভুক্ত হয়।১৯৩৪ - মুসোলিনির শাসনে ৮ থেকে ৫৫ বছরের ইতালীয়দের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।১৯৬১ - সুইডিস রাজনীতিবিদ ও জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দ্যাগ হেমার শোল্ড এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।১৯৮২ - পশ্চিম বৈরুতের ছাটিলা ও সাবগার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে গণহত্যা চালায় ইসরায়েল।১৯৮৯ - বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং বার্মা রাষ্ট্রের নাম হয় মিয়ানমার।২০০৭ - পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নির্বাচনের পর সেনাবাহিনীর প্রধান পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন।জন্ম:১৮৬৭ - চিত্রশিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।১৮৬৯ - বিজ্ঞান লেখক জগদানন্দ রায়।১৯০৫ - অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো।১৯৫৪ - মার্কিন মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন পিংকার।১৯৭০ - ইংলিশ ক্রিকেটার ড্যারেন গফ।মৃত্যু:১১৮০ - ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই।১৭৮৩ - গণিতজ্ঞ লিওনার্ট অয়লার।১৮৯৯ - বাঙালি চিন্তাবিদ এবং সাহিত্যিক রাজনারায়ণ বসু।১৯৫৬ - প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী।ভোরের আকাশ/তা.কা
গ্রাম-বাংলার হাজার বছরের প্রাচীন বিয়ের ঐতিহ্য পালকি। এ বাহনে চড়া দারুণ মজা। বিয়ে উৎসবে পালকির কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। একটা সময় ছিল বিয়েতে পালকিই চাই। গ্রামীণ আঁকা-বাঁকা মেঠো পথে, কখনও আলপথে বর-কনে পালকি চড়ে উভয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসা-যাওয়ার আনন্দঘন একটা দারুণ সময় ছিল। গাঁও-গ্রামের পথে পালকিতে করে নববধূকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে মন জুড়াত গাঁয়ের বধূ, কখনও মা-চাচি, উঠতি বয়সের চঞ্চল মেয়েরাও বাদ পড়েনি। পালকি মানুষের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহন ছিল।পালকি! বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এক প্রাচীন বাহন। মানুষ বহন করার কাজেই এ পালকি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিলাসবহুল বাহন হিসেবেই এর পরিচিতি। প্রাচীনকালে সাধারণত ধনী গোষ্ঠী এবং সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতেন।পালকি চাকাবিহীন এক বাহন। তাই কয়েকজন মানুষকেই এই পালকি ঘাড়ে করে বহন করতে হয়। সাধারণত পালকিকে কয়েকজন ঘাড়ে ঝুলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যারা পালকিকে ঘাড়ে বা, কাঁধে করে বহন করে থাকেন তাদের পালকির বেহারা বা, কাহার বলে। পালকির ভেতরে ১ জন বা, ২ জন থাকত, আর পালকির বেহারা হিসেবে থাকত ২ থেকে ৮ জন। আজ আমরা গ্রাম বাংলার এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পালকির ইতিহাস-ঐতিহ্য, উৎপত্তি থেকে শুরু করে আরো কিছু বিষয়ে জানার চেষ্টা করব।পালকির ইতিহাস: ধারণা করা হয় প্রাচীনকালে দেব-দেবীকে আরোহন বা, দেব-দেবীর মূর্তি বহনের জন্য পালকি সদৃশ বাহন ব্যবহার করা হতো। অনেক প্রাচীন মন্দিরেই পালকি দিয়ে দেবতাদের বহনের দৃশ্য ভাস্কর্য আকারে তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুদের রামায়নেও আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০ সালের সময়ের দিকে পালকির উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসন আমলে ইউরোপের উচ্চ শ্রেণীর সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা এই পালকিতে চলাচল করতেন। তবে উপমহাদেশে রেলগাড়ি প্রচলেন পর ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মাঝে পালকির ব্যবহার অনেকটাই কমে আসে।ইউরোপের পালকিগুলোকে শোবার উপযোগী করে বানানো হতো। কোন কোন পালকি খোলা হতো আবার কোনটি হতো বন্ধ। মিশরীয় চিত্রকর্মেও পালকির দেখা পাওয়া যায়। পারস্য রাজ্যেও পালকির অস্তিত্ব ছিল। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা থেকে শুরু করে চতুর্দশ শতকে পর্যটক জন ম্যগনোলি ভ্রমণের জন্য পালকি ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। সম্রাট আকবরের শাসন আমলে এবং তারও পরবর্তি সময়ে সেনাধ্যক্ষদের যাতায়াতের জন্য প্রধান বাহন হিসেবে পালকিই ব্যবহৃত হতো।সংগৃহীত ছবিপালকির বিভিন্ন নাম: পালকি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “পল্যঙ্ক” বা, “পর্যঙ্ক” থেকে। এর অর্থ বিছানা বা খাট। হিন্দী এবং বাংলা উভয় ভাষায় এটাকে পালকি বলা হয়ে থাকে। পালি ভাষায় একে “পালোঙ্ক” বলা হয়। এই যানকে কোন কোণ জায়গায় ডুলি, শিবিকা এসব নামেও ডাকা হয়। পর্তুগীজরা এর নাম দিয়েছিলো পালাঙ্কুয়িন।রোমে লেটিকা, চীনে জিয়াও, ভিয়েতনামে কিউ, স্পেনে লিটারা, ফ্রান্সে পালানকুইন, পর্তুগালে লিটেইরা, থাইল্যান্ডে ওহ, কোরিয়ায় গামা, জাপানে নোরিমোনো, তুরস্কে টাহটিরেভান ইত্যাদি নামে পালকি পরিচিত হয়ে আসছে। লন্ডনে পালকিকে সিড্যান চেয়ার বলে ডাকা হয়। চীনের সনাতনি ধারায়ও এই সিডান চেয়ারের ব্যবহার দেখা যায়।বাংলাদেশের পালকি: বাংলাদেশে এক সময় অভিজাত শ্রেণীরা এই বাহনে চলাচল করতো। দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এর ভালই প্রচলন ছিল। বিয়েতে বর এবং কনের জন্য পালকি ব্যবহারের প্রথা চালু ছিল। এছাড়াও অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে বা, অক্ষম মানুষকে বিভিন্ন স্থানে নেয়ার জন্যও পালকি ব্যবহার হতো।বাংলাদেশের পালকিগুলো বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এর গঠন শৈলীতেও রয়েছে ভিন্নতা। সবচেয়ে ছোট এবং সাধারণ নকশার পালকিকে ডুলি বলা হয়। এই ডুলি সাধারণত ২ জন বহন করে নিয়ে চলে। বাংলাদেশে এক সময় হাড়ি, মাল, দুলে, বাগদি বা, উড়ি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক পালকি বহনের কাজ করতো। এরা পালকি বহনের পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ এবং মাছের ব্যবসাও করতো।কাঠ মিস্ত্রীরা সেগুন কাঠ, শিমুল কাঠ, গান কাঠ প্রভৃতি কাঠ দিয়ে তৈরি করতো পালকি। পালকির বহন করার দন্ডটিকে বাঁট বলে। এই বাঁট তৈরি হত বট গাছের বড় ঝুরি দিয়ে। তখন বাংলাদেশে তিন রকমের পালকি দেখা যেতো। সাধারণ পালকি, আয়না পালকি এবং ময়ূরপঙ্খি পালকি। সাধারণ পালকি দেখতে আয়তাকার ছিল। ঢালু ছাদ এবং চারদিকে কাঠের আবরণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। এর দু দিকে দুটি দরজাও থাকতো।আয়না পালকির বৈশিষ্ট্য হলো এতে আয়না লাগানো থাকতো। ভেতরে চেয়ারের মতো দুটি বসার জায়গা এবং একটি টেবিলে রাখা হতো। তবে আয়তনের দিক থেকে বলতে গেলে ময়ূরপঙ্খি পালকি সবচেয়ে বড়। এই পালকিটি ময়ূরের আকৃতিতে তৈরি করা হয়। এর ভেতরে দুটি চেয়ার, একটি টেবিল এবং একটি তাকও থাকতো।তবে উনবিংশ শতাব্দীতে এসে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে পালকির ব্যবহার প্রায় বন্ধই হয়ে যায় বলা চলে। বিশেষ করে ১৯৩০ এর পর থেকে শহরাঞ্চলে রিক্সার প্রচলন শুরু হলে পালকির ব্যবহার উঠে যায়। বর্তমানে আমাদের পালকিকে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই ধরা হয়। বেহারাদের কাঁধ থেকে পালকির স্থান এখন হয়েছে বিভিন্ন জাদুঘরে। সভ্যতা এবং বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে পালকিকে হয়ত আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে পালকির কথা ভুলে না যাই সেদিকে আমাদের সচেষ্ট দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।ভোরের আকাশ/তা.কা
হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার আগ্রহের কোনো কমতি নেই। কারণ কাঞ্চনজঙ্ঘার একই অঙ্গে অনেক রূপ। মেঘের কোলে রোদ-কুয়াশার সঙ্গে খেলতে খেলতে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম এই পর্বতশৃঙ্গ প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করে। ভোরের প্রথম কিরণ যখন কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া স্পর্শ করে তখন শ্বেতশুভ্র এই পর্বতটি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত লাভার মতো লাল।প্রতিবছর শীত মৌসুমে রূপ-লাবণ্যে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ছুটেন ভারতের সিকিমে নয়তো নেপালের তাপ্লেজুংয়ে। সীমান্ত পার না হতে চাইলে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। যদিও ভারত কিংবা নেপালে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের গণ্ডি না পেরিয়ে অর্থাৎ তেঁতুলিয়াপ্রান্ত থেকেই পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া দেখা যায় অনিন্দ্য সুন্দরে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা।সামান্য দূরত্বের মধ্যে থাকা এত সুন্দর পর্বতশৃঙ্গ দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকেন পর্যটকেরা। যেন মনের প্রশান্তি মিলে তখন যখন কি না চোখে চোখ রাখে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভোরে ঠিক তেমনি দৃশ্যের অবতারণা করেন হিমালয়কন্যার দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বেতশুভ্র এ পর্বতটি।এদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মৌহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে তেঁতুলিয়ায় পর্যটকের সমাগম ঘটছে প্রতিনিয়ত। পর্যটকরা এ অঞ্চলের পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখছেন রূপশ্বৈর্য পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারা দেখছেন, ছবি তুলছেন ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে, গত কয়েক দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তেমন দেখা মিলছে না কাঞ্চনজঙ্ঘার। এজন্য অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরছে।সংগৃহীত ছবিস্থানীয়রা জানায়, আকাশ পরিষ্কার হলে দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। শরৎ, হেমন্ত ও শীতকালেই দেখা মেলে শ্বেতশুভ্র এই মহানায়কের। ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে সে। তারপর ক্ষণে ক্ষণে রং পালটাতে থাকে। ভোরের সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়লে কাঞ্চনজঙ্খা হয়ে ওঠে লাল টকটকে। দিন পেরোনোর সঙ্গে রং বদলাতে থাকে তার। কমলা, তারপর হলুদ আবার সাদা। অপার সৌন্দর্যের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে হয় হাসছে পাহাড়। তার শরীর ঘেঁষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ ও কালো রং মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরূপ। তবে বর্তমান আবহাওয়ায় কখন পর্বতশৃঙ্গটির দেখা মিলবে বলা ভার। এই দেখা মিলছে আবার কয়েক দিন দেখা মেলে না।সাজেক ভ্যালি থেকে দেখা যাচ্ছে পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নদীগুলি বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। এখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব কাছে থাকায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে অপরূপ সৌন্দর্যের মায়াবী কাঞ্চনজঙ্খা।প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। ছবির মতো ভেসে ওঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল।রাজশাহী থেকে পরিবার নিয়ে আসা নাসিম জানান, সমতলের চা-বাগান ঘুরে দেখেছি। আর কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে চোখ রাখছিলাম ও খোঁজখবর রাখছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় কিনা। কিন্তু গত কয়েক দিনেও পর্বতশৃঙ্গটি দেখতে না পেয়ে খারাপ লাগছে।সংগৃহীত ছবিএদিকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ ও পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা। ফলে কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নাট্যদল ভূমিজ প্রতি বছর আয়োজন করছে কাঞ্চনজঙ্জ্জা পালাটিয়া উৎসব।ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কে এম আজিমিরুজ্জামান জানান, পর্যটকদের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কন্টাক্ট নম্বরগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিল বোর্ডেও প্রদর্শন করেছি। যাতে যে কোনো প্রয়োজনে পর্যটকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। জরুরি ফোন এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, 'পর্যটকদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।ভোরের আকাশ/তা.কা