হেলথ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৫ ১১:৪৩ পিএম
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস: মা ও শিশুর জন্য এক ভয়াবহ ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা মা ও অনাগত শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গর্ভধারণের শেষ ৪ থেকে ৮ সপ্তাহে এই অসুখ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে অনেক সময় শিশুর ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যাকে মেডিকেল পরিভাষায় বলা হয় ম্যাক্রোসোমিয়া (Macrosomia)। এ অবস্থায় স্বাভাবিক প্রসব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন পড়ে। জন্মের পর শিশুর মধ্যে দেখা দিতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া, যা তার জন্য গুরুতর বিপদ তৈরি করতে পারে। এছাড়াও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা’দের ক্ষেত্রেও ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এর ফলে গর্ভাশয়ে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড বা পানির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যাকে বলা হয় পলি হাইড্রোমিনিয়াস (Polyhydramnios)। এর ফলে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি (একলাম্পসিয়া), এমনকি মা ও শিশুর জন্য জীবনসংকটও তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, অনেক নারী গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না থাকলেও গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে হঠাৎ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes Mellitus - GDM) দেখা দিতে পারে। এই সময় যদি যথাযথ নিয়ন্ত্রণে না রাখা হয়, তাহলে গর্ভেই শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে কিংবা জন্মের পর জটিল শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ডা. আয়েশা আরও জানান, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT) সবচেয়ে কার্যকর। এই টেস্ট সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। এতে ৮-১০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর রক্ত পরীক্ষা করা হয়, এরপর গ্লুকোজ পান করানো হয় এবং আবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। দুই ঘণ্টা পর আরেকবার রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয় শরীর কীভাবে গ্লুকোজ পরিচালনা করছে।
এই পরীক্ষায় যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৫.৬ mmol/L বা তার বেশি হয়, কিংবা দুই ঘণ্টা পর ৭.৮ mmol/L বা তার বেশি হয়, তবে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে অবহেলা না করে যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।
ভোরের আকাশ।।হ.র