স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ০১:০৭ এএম
ছবি: সংগৃহীত
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম কিডনি—যা নীরবে সারাদিন পরিশ্রম করে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। বর্জ্য ফিল্টার করা, শরীরে তরল ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদনসহ নানারকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এই অঙ্গটি। কিন্তু যত নীরবে এটি কাজ করে, ততটাই নীরবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়। বেশিরভাগ সময় কিডনি নষ্ট হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় অনেক দেরিতে, তখন ক্ষতি ইতিমধ্যে বড় আকার ধারণ করে।
বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগ এখন এক নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নেফ্রোলজি সোসাইটির তথ্যমতে, পৃথিবীতে ৮৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কিডনি-সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD) ও তীব্র কিডনি আঘাত (AKI) দুই-ই রয়েছে। ভয়াবহ বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই উপসর্গ স্পষ্ট হওয়ার আগেই কিডনি তার কার্যক্ষমতার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হারাতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি বিকল হওয়ার পেছনে আমাদের কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস বড় ভূমিকা রাখে—যে অভ্যাসগুলো সম্পর্কে আমরা সচরাচর ভাবিই না। নিচে এমন সাতটি ক্ষতিকর অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো থেকে সাবধান থাকা জরুরি—
১. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
দীর্ঘ সময় ডিহাইড্রেটেড অবস্থায় থাকা কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং বর্জ্য অপসারণ কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মিত পানিশূন্যতা—এমনকি সামান্য হলেও—কিডনির স্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলে বুঝে নিতে হবে, শরীর আরও তরল চায়।
২. অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ
অতিরিক্ত লবণ বা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায়, যা কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে ফিল্টারিং ক্ষমতা কমে যায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, আচার, টিনজাত স্যুপ ও ফাস্ট ফুডে থাকা অতিরিক্ত লবণ সবচেয়ে বড় দোষী।
৩. অতিরিক্ত চিনি ও সোডা পান
চিনি ও ফ্রুক্টোজসমৃদ্ধ পানীয় ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং বিপাকীয় ভারসাম্য নষ্ট করে—যা পরোক্ষভাবে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নিয়মিত সোডা বা কোলা পান করলে কিডনির ক্ষয় দ্রুততর হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
৪. অতিরিক্ত প্রোটিন ও ফসফরাস গ্রহণ
প্রোটিন শরীরের জন্য অপরিহার্য হলেও অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন কিডনিকে বাড়তি পরিশ্রমে বাধ্য করে। আবার প্রক্রিয়াজাত মাংস বা কোলায় থাকা ফসফরাসও ক্ষতিকর, বিশেষ করে যাদের কিডনি আগেই দুর্বল হয়ে গেছে।
৫. ব্যথানাশক ওষুধের ঘন ঘন ব্যবহার
আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন বা অ্যাসপিরিনের মতো নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (NSAIDs) কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। নিয়মিত বা দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ সেবনে তীব্র কিংবা স্থায়ী কিডনি ক্ষতি হতে পারে।
৬. ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপ
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেয়। কিন্তু ঘুমের অভাব ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ একসঙ্গে কাজ করে রক্তচাপ বাড়ায়, বিপাকীয় ভারসাম্য নষ্ট করে ও প্রদাহ সৃষ্টি করে। যা ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে।
৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন
ধূমপান কিডনির রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়। অন্যদিকে অতিরিক্ত অ্যালকোহল শরীরকে পানিশূন্য করে ও রক্তচাপ বাড়ায়। ফলে কিডনি ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়—যা পরবর্তীতে কিডনি বিকলের দিকে নিয়ে যায়।
কিডনি রোগের ভয়াবহতা অনেক সময় দেরিতে প্রকাশ পায়। তাই প্রতিদিনের অভ্যাসে একটু সচেতন হওয়াই পারে বড় বিপদ এড়াতে। পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এই চারটি বিষয়ই হতে পারে কিডনি রক্ষার মূলমন্ত্র।
ভোরের আকাশ//হ.র