লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ০১:১০ এএম
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে অ্যাপল সিডার ভিনেগার বা আপেল ভিনেগার স্বাস্থ্যসচেতনদের অন্যতম প্রিয় প্রাকৃতিক উপাদান। শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়াতেই নয়, বরং এটি শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমকে সঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিপাক প্রক্রিয়া বাড়ানো থেকে শুরু করে হজমে সহায়তা—সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে খালি পেটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করলে এর উপকারিতা আরও বেড়ে যায়। এটি শরীরের পুষ্টি শোষণকে বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামগ্রিক সুস্থতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নিই, খালি পেটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা—
০১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে:
অ্যাপল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খাবার হজমের গতি কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। ডায়াবেটিস কেয়ার-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে ঘুমানোর আগে ভিনেগার সেবন করেন, তাদের পরদিন সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
০২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
সকালে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করলে তা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। BMJ Nutrition, Prevention & Health জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ভিনেগার সেবনকারীদের ওজন কিছুটা কমে এবং বিপাকীয় কার্যকারিতা উন্নত হয়।
০৩. হজমশক্তি বাড়ায়:
ভিনেগারের প্রাকৃতিক অম্লতা পেটের অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়, যা খাবার দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। এটি পুষ্টি শোষণ উন্নত করে, পেট ফাঁপা ও অস্বস্তি কমায়। এছাড়া অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটিয়ে হজমতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
০৪. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে:
সকালে নিয়মিত অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়া ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এটি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে ও ধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি কমায়।
০৫. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:
অ্যাপল সিডার ভিনেগারে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান ও pH ভারসাম্য রক্ষাকারী গুণ। এটি শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করতে সহায়তা করে, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও সতেজ। নিয়মিত সেবনে ত্বকের প্রদাহ বা একনে নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
ওজন কমাতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার সঠিকভাবে পান করার উপায়:
ওজন কমানোর জন্য এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে ১–২ চা চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। প্রয়োজনে পরিমাণ ধীরে ধীরে ১–২ টেবিল চামচ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, তবে অবশ্যই পানি মিশিয়ে নিতে হবে।
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
যদিও পরিমিত পরিমাণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত সেবন বিপরীত ফল দিতে পারে।
দাঁতের এনামেল ক্ষয়
পেটে অস্বস্তি, বুকজ্বালা বা বমি বমি ভাব
ঘন অবস্থায় খেলে গলায় জ্বালাপোড়া
কিছু ওষুধের (যেমন ইনসুলিন বা ডাইইউরেটিক) সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া
তাই সবসময় পানি দিয়ে মিশিয়ে পান করুন এবং যাদের পূর্ববর্তী কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
বাড়িতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার তৈরি করার সহজ পদ্ধতি:
আপেল টুকরো করে একটি কাচের জারে নিন, তার সঙ্গে চিনি ও পানি যোগ করে কাপড়ে ঢেকে দিন। মিশ্রণটি উষ্ণ ও অন্ধকার স্থানে ৩–৪ সপ্তাহ রেখে দিন এবং মাঝে মাঝে নেড়ে দিন। এরপর তরলটি ছেঁকে আরও ৩–৪ সপ্তাহ রেখে দিন যতক্ষণ না এতে ভিনেগারের টক গন্ধ তৈরি হয়।
সতর্ক থাকুন, সচেতনভাবে খান, আর প্রাকৃতিক উপায়ে রাখুন শরীরকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
ভোরের আকাশ//হ.র