স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৩:২০ এএম
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করল আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) ও আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি (ACC) মিলিতভাবে ২০২৫ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ, মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। গত ১৪ আগস্ট এই নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে, জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক (৪৬.৭%) উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। নতুন নির্দেশিকার লক্ষ্য শুধু চিকিৎসা নয়, বরং জীবনযাপন ও দৈনন্দিন অভ্যাসেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।
প্রতিরোধ ও দ্রুত পদক্ষেপের গুরুত্ব
নির্দেশিকায় জীবনের ধরনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য, লবণ সীমিত করা, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এগুলোই প্রাথমিক পদক্ষেপ। তবে প্রয়োজন হলে চিকিৎসা শুরু করা উচিত, যাতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও ডিমেনশিয়া থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়।
স্মার্ট ঝুঁকি নির্ণায়ক
নতুন নির্দেশিকায় ২০২৩ সালে চালু হওয়া ঝুঁকি নির্ণায়ক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি বয়স, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও বাসার জিপ কোড পর্যন্ত বিবেচনা করে ১০ ও ৩০ বছরের হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণ করে। সামাজিক বৈষম্যকেও এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উন্নত ল্যাব পরীক্ষা
কিডনি ও হরমোন সম্পর্কিত পরীক্ষা এখন সব উচ্চ রক্তচাপ রোগীর জন্য নিয়মিত করা হবে। মূত্রের অ্যালবুমিন-টু-ক্রিয়েটিনিন অনুপাত এবং অ্যালডোস্টেরন-টু-রেনিন অনুপাত পরীক্ষা অধিক রোগীর জন্য প্রযোজ্য হবে, বিশেষ করে স্লিপ অ্যাপনিয়া বা স্টেজ-২ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে।
মস্তিষ্কের সুরক্ষা
রক্তচাপ শুধু হার্ট ও কিডনিই নয়, মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে। তাই লক্ষ্য হচ্ছে সিস্টোলিক রিডিং ১৩০ mm Hg-এর নিচে রাখা।
চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা
টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা কিডনি রোগ থাকা রোগীর জন্য একাধিক ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। রক্তচাপ ≥১৪০/৯০ mm Hg হলে দুটি ওষুধ একসঙ্গে দেওয়া উত্তম। স্থূল রোগীর ক্ষেত্রে GLP-1 ওষুধও যুক্ত হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় নির্দেশনা
প্রি-এক্ল্যামসিয়া বা অকাল প্রসব ঝুঁকিতে লো-ডোজ অ্যাসপিরিন (৮১ মি.গ্রা.) ব্যবহার।
রক্তচাপের সীমা কঠোরভাবে ১৪০/৯০ mm Hg।
সন্তান জন্মের পরও নজরদারি চালানো প্রয়োজন।
বাস্তবসম্মত জীবনধারা পরামর্শ
লবণ: দৈনিক সর্বোচ্চ ২,৩০০ মি.গ্রা., আদর্শ ১,৫০০ মি.গ্রা।
অ্যালকোহল: সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন।
স্ট্রেস: নিয়ন্ত্রণ করুন, ব্যায়াম ও মেডিটেশন করুন।
ওজন: মাত্র ৫% হ্রাসকেও উপকার হবে।
খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাক-সবজি, বাদাম, বীজ, লো-ফ্যাট প্রোটিন গ্রহণ।
ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ৭৫–১৫০ মিনিট কার্ডিও বা শক্তিবর্ধক ব্যায়াম।
বাড়িতে রক্তচাপ নিয়মিত মাপা জরুরি।
নির্দেশিকা লেখক কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডব্লিউ. জোন্স বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ হলো হৃদরোগের সবচেয়ে সাধারণ ও পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি। ঝুঁকি আগে থেকে শনাক্ত করে জীবনযাপনে কৌশল অবলম্বন করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। হৃদরোগ, কিডনি রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও ডিমেনশিয়ার ক্ষতি কমানোও সম্ভব।”
ভোরের আকাশ // হ.র