আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫ ১১:৪৭ পিএম
নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হতে যাচ্ছেন জোহরান মামদানি
নিউইয়র্ক সিটি প্রথমবারের মতো মুসলিম মেয়র পেতে যাচ্ছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি জয়ী হয়ে মেয়র নির্বাচনের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। আসন্ন নভেম্বরের মূল নির্বাচনেও তার জয় প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
৩৩ বছর বয়সী মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। তার বাবা মাহমুদ মামদানি একজন প্রথিতযশা তাত্ত্বিক ও লেখক এবং মা মীরা নায়ার ‘মনসুন ওয়েডিং’ ও ‘সালাম বম্বে’র মতো আলোচিত চলচ্চিত্রের নির্মাতা। শৈশব কেটেছে কেপটাউনে, আর শৈশবের শেষভাগে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরবর্তীতে নিউইয়র্কেই গড়ে ওঠে তার রাজনৈতিক ভিত্তি।
ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুয়োমো। ভোট গণনায় মামদানি কুয়োমোকে ৭.১ শতাংশ ব্যবধানে পরাজিত করেন। এর ফলে তিনিই এখন দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
মামদানির জয়ে উচ্ছ্বসিত নিউইয়র্কের প্রগতিশীল ভোটাররা। ডেমোক্র্যাট দলের তরুণ ভোটারদের বড় অংশ তাকে দেখছেন নতুন যুগের প্রতিনিধি হিসেবে।
২৮ বছর বয়সী ভোটার ও অভিনেতা ইগনাসিও ট্যামবান্টিং বলেন, “আমাদের একজন তরুণ, রঙিন পরিচয়ের অধিকারী এবং ভিন্নধর্মী চিন্তার মেয়র প্রয়োজন ছিল। জোহরান ঠিক সেই ব্যক্তি।”
কুয়োমো এর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ভোটের আগে মামদানিকে 'অনভিজ্ঞ' বলে প্রচার করলেও ফল ঘোষণার পরপরই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীকে শুভেচ্ছা জানান।
জোহরান মামদানি নিজেকে পরিচয় দেন 'ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট' হিসেবে। এর আগেও নিউইয়র্ক রাজ্যের কুইনস জেলা থেকে রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় তাকে সমর্থন করেছিলেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজ।
মেয়র নির্বাচনে জয় পেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো নীতিকে নিউইয়র্ক সিটিতে চলতে দেবেন না বলে জানান মামদানি। তার ভাষায়, “নিউইয়র্ক হবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একটি মডেল শহর।”
মামদানি পরিচিত একজন ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি একাধিকবার গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি একটি বিল উত্থাপন করেন, যার মাধ্যমে অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইসরায়েলিদের সঙ্গে সম্পর্কিত নিউইয়র্কভিত্তিক দাতব্য সংস্থাগুলোর কর-ছাড় বাতিলের প্রস্তাব দেন।
তবে এই অবস্থানের কারণে বাইডেনপন্থী ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তার কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। তারপরও সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রগতিশীল ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
মামদানির বিপরীতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন কার্টিস স্লিওয়া। এছাড়া বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়বেন। তবে ট্রাম্পের প্রতি তার ঘনিষ্ঠতা এবং একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ তাকে অনেকাংশেই জনপ্রিয়তা হারাতে বাধ্য করেছে।
এদিকে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাট ভোটারই মামদানির জয়ে সন্তুষ্ট। ভোটার লেহ জোহানসন বলেন, “কুয়োমোর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকায় আমি তাকে ভোট দিতে পারি না। মামদানি তরুণ এবং উদারপন্থি—তাই তিনিই আমার পছন্দ।”
যদি জোহরান মামদানি নভেম্বরে চূড়ান্ত মেয়র নির্বাচনে জয় পান, তবে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। একইসঙ্গে তিনি হবেন দ্বিতীয় কোন বৈশ্বিক মহানগরীর মুসলিম মেয়র, লন্ডনের সাদিক খানের পরে।
ভোরের আকাশ//হ.র