আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫ ১২:৩১ এএম
এফ-৭ বিজিআই: চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমানে কী কী ক্ষমতা রয়েছে?
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
দুর্ঘটনার পর থেকে চীনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি নিয়ে জনমনে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হলেও এই যুদ্ধবিমানটি কি আদতেই আধুনিক? কী আছে এর সক্ষমতার ঝুলিতে? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এফ-৭ বিজিআই হচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠান চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন (CAC) নির্মিত একটি হালকা, বহুমুখী সক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান। মূলত সোভিয়েত আমলের মিগ-২১ এর ডিজাইন অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়েছে। এই সিরিজের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ হলো এফ-৭ বিজিআই, যা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।
২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে যুক্ত হয় ১৬টি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, যার মাধ্যমে বিমান বাহিনীর বহর আধুনিকায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হয়।
এফ-৭ বিজিআই-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
🔹 গতি ও ইঞ্জিন ক্ষমতা
এই যুদ্ধবিমানের সর্বোচ্চ গতি মাক ২.২ (আন্দাজে ২,৭০০+ কিমি/ঘণ্টা)। এটি একক আফটারবার্নিং টার্বোজেট ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যা ৮২ কিলোনিউটন থ্রাস্ট তৈরি করতে সক্ষম।
🔹 ককপিট ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
এফ-৭ বিজিআই বিমানের ককপিটে তিনটি মাল্টি-ফাংশনাল ডিসপ্লে (HUD) এবং HOTAS (Hands on Throttle and Stick) সিস্টেম রয়েছে, যা পাইলটকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রেখে বিমান পরিচালনার সুবিধা দেয়।
🔹 রাডার প্রযুক্তি
বিমানে রয়েছে KLJ-6F ফায়ার কন্ট্রোল রাডার, যা ৮৬ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে। একইসঙ্গে ছয়টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও দুইটিতে একযোগে আঘাত হানার সক্ষমতাও রয়েছে এতে।
🔹 এয়ারফ্রেম ও ডিজাইন
জে-৭জি২ এয়ারফ্রেম এবং ডাবল-ডেল্টা উইং ডিজাইন ব্যবহার করায় বিমানটি উঁচুতে উঠে দ্রুত আক্রমণ চালাতে পারে এবং স্থবির হওয়ার ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।
🔹 অস্ত্র বহন ও আক্রমণ ক্ষমতা
এফ-৭ বিজিআই বিমানে রয়েছে সাতটি হার্ড-পয়েন্ট, যার মাধ্যমে এটি পিএল-৫, পিএল-৭, পিএল-৯ এবং পিএল-১২ ধরনের এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। পাশাপাশি এটি বোমা, আনগাইডেড রকেট এবং লেজার গাইডেড বোমা (৩,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত) বহন ও নিক্ষেপে সক্ষম।
🔹 জাহাজবিধ্বংসী ক্ষমতা
এই বিমান সি-৭০৪ জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহনের ক্ষমতাও রাখে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে কার্যকর।
এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ ও স্বল্প-পাল্লার আকাশযুদ্ধের জন্য উপযোগী হলেও এটি দৃষ্টিসীমার বাইরে (BVR) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম নয়। তাই আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটি কিছুটা সীমাবদ্ধতা নিয়ে আসে।
সাশ্রয়ী, প্রশিক্ষণবান্ধব এবং নির্দিষ্ট পরিসরে কার্যকর হলেও এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান আধুনিক যুগের প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি ও বহুমুখী সক্ষমতা বহন করে না। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি এখনো কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কার্যকর একটি সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ভোরের আকাশ//হ.র