ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:৩০ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
বার্ডের দুই মাস তো শেষ হল। ডিজি অ্যাওয়ার্ড (প্রথম পুরস্কার) ও পেলুম। ৮৯.০৬ শতাংশ স্কোর করি। তার থেকে অনেক অনেক বড় যেটা তা হল- 'BARD saved my life'। জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে ঠিক কী করব, কই থাকব, এই ভেবেই ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এ কুমিল্লার বার্ডে নাম দেয়া। ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু করে এই দুই মাসে যে বেশ কিছু স্মৃতি হয়ে যাবে-কয়েকজন ভাল বন্ধুও পেয়ে যাব এটা ভাবনার বাইরে ছিল।
আমার মনে আছে, ৩১ অক্টোবরের আগে আমার বার্ডেরই রুমমেট স্বর্ণা আপু আর লামিয়া মিলে আমাকে বুঝাচ্ছিল যে আমার সন্দেহ করা উচিত। আমি খুব রেগে যাচ্ছিলাম। না বুঝেই এত ভাল ছেলেকে নিয়ে জাজমেন্টাল কেন হচ্ছিল তারা। ১০ নভেম্বর DU ক্যাফেটারিয়ার ভিডিও দেখে ১০-১৫ সেকেন্ডের জন্য স্বর্ণা আপুকে জড়িয়ে ধরে আমার হাউ মাউ কান্না। থার্ড এক্সামের সময় দুই ঘন্টার পরীক্ষা দেড় ঘন্টায় দিয়ে আমার ঢাকায় এসে কোর্ট ফেইস করা। আমার মেন্টাল সিচুয়েশন বুঝে ডিরেক্টর স্যারের 'wellness concept ' নিয়ে ক্লাস নেয়া এগুলো না হয় বাদ ই দেই।
বার্ডের লাইফটাই আমি চাচ্ছিলাম। ভোর ৫টায় উঠে পিটিতে যাওয়া, সারাটা দিন ক্লাস, বিকালে আবার গেইমস এন্ড স্পোর্টস। বেশির ভাগ দিন আমি ব্যাডমিন্টনই খেলতাম।আর সুইমিং এ তো দুই দিন যেয়েই চুবানি খেয়ে AOM বাঁধালাম। সন্ধ্যায় আবার লাইব্রেরি ওয়ার্ক। আমি আর স্বর্ণা আপু প্রথম দিকে ভাবতাম একশন রিসার্চ করব। বার্ডের সাথে কোলাব করে ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স নামিয়ে ফেলবো। কিছুই করতে পারি নাই, সারাদিন দুষ্টুমি করা ছাড়া। তবে, আমি যেখানে দৌড়ে অলওয়েজ লাস্ট হই, সেখানে আমি ৮ম হয়েছি ২৮ জনের মধ্যে।
আরো কত কী যে করতাম-
সিরিয়াস সময়ে এক কানে ইয়ার বাড দিয়ে গান শুনা। কিছু সময় পেলেই ঘুরতে চলে যাওয়া এদিক- সেদিক। ক্লাসে চিরকুট ছুড়াছুড়ি। রাত ১২টায় নীলাচলের পাহাড়ে ৭-৮ জন মিলে যাওয়া। আবার শিয়ালের ভয়ে গাছের ডাল ভেঙে প্রয়োজনে শিয়াল পিটানোর প্রস্তুতি নেয়া। প্রথম মাসে রাতে ফেয়ারি লাইটের দিকে তাকিয়ে হ্যারি পটার পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় মাসে ঘন্টার পর ঘন্টা হাঁটা সমিতি (হাঁস) এর হাঁটাহাঁটি। একটা কারণে ক্ষেপে যেয়ে বিশাল একটা চেয়ার ধরে আমার আছাড় দেয়া। পরীক্ষার আগের দিন ই সিলেবাস জেনে রাত জেগে পড়া। রাতে তিন জনের মিলে মুভি দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া। একটু পরেই দুই পাশে দুইজনের নাক ডাকাডাকি। রাত দেড়টা দুইটা পর্যন্ত বার্ডের ক্যাম্পাসে গান শুনতে শুনতে একা একা হাঁটা। পুকুর পাড়ে আড্ডা(শেষের দিন প্রায় ২৫ জন আসছিল)।কিছু হলেই 'তুই কই' মেসেজ দেয়া। দুই দুইটা কালচারাল টিম ওয়ার্ক করে উঠানো। বড় ভাইদের কাছ থেকে চা আদায়। আপুদের কোলে ধুম ধাম আমার শুয়ে পরা। অন্যদের স্পিকারের আওয়াজ কমাতে আমাদের স্পিকারে নষ্ট গান ছাড়া (আমি কোনভাবেই এতে দায়ী না)। মুনিরা আপুর ৫ এপিসোডের অস্থির লেভেলের পডকাস্ট। পিচ্চি জালালের রুমে লেট নাইট উনো খেলা। ৬টা ২০মিনিটে পিটি দরতে ৬টায় বাস থেকে কুমিল্লায় নেমে বার্ডের উদ্দেশ্যে সবার ভোঁ দৌঁড়। সেন্টমার্টিনে চাঁদের আলোয় সমুদ্রের পাশের চেয়ারে বসে কথা শুনতে শুনতে ঘুমায়েই যাওয়া। সব মিলিয়ে খুব ভাল সময় কেটেছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ