ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫ ১০:৩৬ এএম
ধানমন্ডির মাহবুব ভবনে উঠছেন জোবাইদা রহমান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। তার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’। ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা ছেড়ে ছিলেন জোবাইদা। সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসা ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’। জোবাইদা রহমান মাহবুব আলী খানের ছোট মেয়ে। মাহবুব ভবনে এখন তার সহধর্মিণী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবার বসবাস করে। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ছোট মেয়ে জোবাইদা রহমান ঢাকায় এসে বাবার বাসায় উঠবেন বলে বাসার নিরাপত্তা ও সাজসজ্জার কাজ করা হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান আসবেন এই বাসায়। সে জন্য বাসার সাজ-সজ্জা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস, জেনারেটর প্রভৃতি কাজ চলছে। ইনশাল্লাহ উনি (জোবাইদা রহমান) আসার আগেই এই বাসার সব কাজ-কর্ম শেষ হবে। উনাকে রিসিভ করার জন্য বাসা প্রস্তুত হয়ে যাবে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন মাহবুব ভবনের পুরো কাজকর্মের তদারকি করছেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখতেই পারছেন মাহবুব ভবন এমনিতেই পরিপাটি একটি বাসা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তারপরও আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসার ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করেছি।
তিনি আরো বলেন, বাসার চারপাশে দেয়ালের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এই বাসার চারপাশে দেয়াল রয়েছে। বাসার আঙিনায় সামনের দিকে রয়েছে ফুলের বাগান। আছে নিরাপত্তায় কর্মীদের জন্য গার্ড রুম।
রুমন বলেন, আপনি দেখছেন বাসভবনের তিন দিকে বিভিন্ন জনের বাসা-অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন- আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, নিরাপত্তার নামে এমন কিছু করতে যেও না যাতে প্রতিবেশীদের কোনো অসুবিধা হয়, যাতে মানুষজনকে ডিসট্রার্ব না করা হয়। যেমন- পেছনের দিকে দেয়ালের পাশে ওই ভবনের বারান্দাটা দেখছেন একেবারেই দেয়াল ঘেঁষে।
তিনি আরো বলেন, উনারা (প্রতিবেশীরা) ১৭ বছর কিছু করেননি, এখনো তারা কিছু করবেন না, তাদের ডিস্টার্ব করে আমাদের যেন আরাম করা না হয়। বুঝতেই পারছেন চেয়ারম্যান যেমনটি চান এই বাসার পরিবারের সদস্যরা ঠিক সেটাই আমাদের বলেছেন। সব দিক বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজিয়েছি। জোবাইদা রহমানের জন্য আলাদা গাড়ি ও তার নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়োজিত সদস্যদেরও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইতোমধ্যে গত ৩০ মে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে সশস্ত্র গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশ পাহারা, আর্চওয়ে বসানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন। রুমন জানান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তায় থাকা নিয়োজিত কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এই বাসভবন দেখে করণীয় ঠিক করে গেছেন।
১৭ বছর আগে জোবাইদা রহমান দেশ ছেড়েছিলেন একমাত্র মেয়ে জায়মাকে নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে। এক-এগারোর সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন স্বামীর সঙ্গে জোবাইদাও। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান জোবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলায় জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়ে যায়। মাহবুব আলী খানের দুই মেয়ের মধ্যে জোবাইদা রহমান ছোট। সে জন্য বাবা-মায়ের খুব আদরের। জন্ম সিলেটে। পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাবা-মায়ের আগ্রহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে বিসিএস দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে। জোবাইদা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস-স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়া পরে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। লন্ডন যাওয়ার পরে জোবাইদা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর-এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। জোবাইদা রহমানের বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ