যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩ ঘন্টা আগে

আপডেট : ২৩ মিনিট আগে

যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। গুঞ্জন রয়েছে আজই খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। আর তার দেশে ফেরার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে আনতে বিএনপির অনুরোধে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,  বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরত আনতে বিএনপির পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অনুরোধ নিয়ে কাজ করছে। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিএনপির মহাসচিবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লন্ডন ও দোহার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানা যায়, খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরাতে কাতারের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের আয়োজন করতে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি লিখেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তবে ‘আশঙ্কামুক্ত’ নয়। তথাপি তিনি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসক বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেশে ফেরাতে পরামর্শ দিয়েছেন।

চিকিৎসার জন্য তিন মাসেরও বেশি দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ সময়ে পারিবারিক আবহে নিবিড় চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল তার দেশে ফেরার একটি খবর ছিল। কিন্তু ফেরার বিমান ঠিক না হওয়ায় দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হননি তিনি।

বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে ‘কথিত’  দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাজা দিয়ে দুই বছরের বেশি সময় নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকে।

করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। এর পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানালেও তাতে মন গলেনি তথাকথিত ‘মানবতার জননী’ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার।

কারাগারে থাকাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়ে। ২০২০ সালের পর তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি তখনকার ফ্যাসিস্ট সরকার। যদিও করোনার সময় সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে কারামুক্তি দেওয়া হয়। এই মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস পরপর বাড়ানো হয় কয়েকদফা। কিন্তু তখনকার সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।

এর মধ্যে বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হন ‘আপসহীন’ খেতাবপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পরে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়। ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পরদিন ৬ আগস্ট এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির ওই আদেশের দিকে না তাকিয়ে আইনিভাবে মামলা মোকাবেলা করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি ‘কথিত’ দুর্নীতির দুই মামলা থেকেই খালাস পান। যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেসব মামলার সাজা বাতিল করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট।

এরপর খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান। ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর সেখানে অবস্থানরত তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। তারেক রহমানের বাসায় ফেরার পর গত দুই মাসে খালেদা জিয়াকে আর হাসপাতালে নিতে হয়নি। কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হলে দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বাসায় গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি পরিবারের প্রভাব অত্যন্ত প্রবল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মী ও অনুসারী আছে দেশের আনাচেকানাচে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও এই দুই পরিবারের একনিষ্ঠ সমর্থক ও শুভাকাঙ্খী রয়েছে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় এই দুই পরিবারকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও খালেদা জিয়ার দৃঢ়তায় সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তখন রাজনীতিতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়ন করতে পারেনি কুশিলবরা।

সর্বশেষ গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর যখন খালেদা জিয়া লন্ডনে যান তখন একই ধরণের প্রপাগাণ্ডা চালানো হয়। এবারও দুই পরিবার বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস হচ্ছেন বলে গুঞ্জন ও অপপ্রচার চালানো হয়। কারণ খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা পরিবারের সবাই এখন বিদেশে। এমন অবস্থায় অতীত ইতিহাস ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন কি না কিংবা ফিরতে পারবেন কি না-এমন আলোচনা-গুঞ্জন ডালপালা মেলে।

অনেকের মধ্যে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় তা হলো খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিকভাবে দেশে ফিরতে পারবেন তো? না কী তার ফিরতে কোনো সমস্যা হবে। দুই পরিবারকে বিশেষ করে জিয়া পরিবারকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র আছে বলেই খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়া নিয়ে এই প্রশ্ন ওঠে। তবে সেই প্রশ্ন ও উদ্বেগের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে শিগগিরই।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

যেকোনো সময় দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই, বললেন উমামা

এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই, বললেন উমামা

বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

নানা সমীকরণে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক

নানা সমীকরণে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক

মন্তব্য করুন