ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আসন্ন বৈঠকটি ‘অনাদিকাল পর্যন্ত’ দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার ‘ষোলো আনা প্রভুত্ব’ এবং ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খড়কুটো কুড়াতে হচ্ছে’ এমন পরিস্থিতিতে তারেক-ইউনূসের এই বৈঠক অত্যন্ত জরুরি। আগামীকালের (শুক্রবার) বৈঠক নির্বাচন সংস্কার ও অনাদিকাল পর্যন্ত গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা উন্নয়নের নামে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন, সেই বিষয়টি আড়াল করতেই তারেক-ইউনূস বৈঠক নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্রিটেনে থাকা সম্পত্তি জব্দের বিষয়টি সামনে এনে রিজভী বলেন, নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্যই এই অপপ্রচার।
এসময় অন্যদের মধ্যে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহ-দপ্তর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম তেনজিং ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জাহিদুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু মারা গেছেন ((ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার বিকেল ৫টা ১০মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। মোস্তফা মহসিনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।ভোরের আকাশ/আজাসা
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সেবা কার্যক্রম শুরু করলেও এক্ষেত্রে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো ‘সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে ইশরাক বলেছেন, নগর ভবনের ফটকে ‘তালা ঝুলবেই’। কারণ বিষয়টিকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন তারা।সংকট সুরাহায় মেয়র হিসেবে শপথ পড়ার অনুমতি দিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইশরাক; না হলে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন ইশরাক। তবে ঈদের আগে ইশরাকের ঘোষণা ছিল সরকার শপথ না পড়ালে নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসবেন তিনি।ঈদের ১০ দিনের ছুটির পর রোববার সরকারি অফিস খুললেও তালা খোলেনি নগর ভবনের। ফলে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের শপথ পড়ানোর দাবিতে তার সমর্থক ও ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নের আন্দোলন গড়িয়েছে দ্বিতীয় মাসে। সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মীরা। তারা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন তারা। ইশরাক নগর ভবনে প্রবেশ করেন বেলা ১১টার দিকে।ঘটনাস্থলে সমর্থকদের নিয়ে ইশরাক বলেন, আন্দোলন থেকে পিছু হটার আর কোনো সুযোগ তাদের সামনে নেই। না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না বলে দাবি করেছেন তিনি।সরকারের উদ্দেশে ইশরাক বলেন, আহ্বান জানাবো আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচলাবস্থা কেটে যাবে। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে ইশরাক বলেন, অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না। প্রধান ফটকের তালা খোলা হবে না, এটা আন্দোলনের একটা প্রতীক। জনগণের দৈনন্দিন সেবা, আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু থাকবে।নগর ভবনের গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম কীভাবে এক সঙ্গে চলবে জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, সেটার ঘোষণা আসবে। কবে থেকে সেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে প্রশ্নে ইশরাক বলেন, এটা আমরা ইমিডিয়েটলি শুরু করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। জোনভিত্তিক যে অফিসগুলো আছে সেভাবে সেবাটা আমরা চালু করবো।স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সমালোচনা করে ইশরাক বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন এই বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করে বিষয়টি দেখেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন।সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমরা গায়ের জোরে নয়, সাংবিধানিকভাবে ও জনগণের ভোটে আমি বৈধ মেয়র। বরং ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠবে। তাই সরকারকে বলবো, দ্রুত এই বিষয়ের সমাধান করুন। এখন থেকে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।ইশরাক সমর্থকরা ‘শপখ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমার ভুলি নাই’সহ নানা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।আন্দোলনকারীদের একজন ঘটনাস্থল থেকে বলেন, আমরা সকাল থেকেই এখানে আছি। দুপুরে ইশরাক ভাই এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে শুনেছি। আর নগর ভবনে এখনো তালা মারা আছে। নগর ভবনে তালা দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে আসতে পারছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম।ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা রোববার বলেন, তিনি অফিসে এসেছিলেন। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারেননি। অফিসে এসেছিলাম। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারিনি। তাই আগের মতোই এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছি। আজ ইশরাক হোসেনের এখানে আসার কথা। শুনেছি নতুন কর্মসূচি নাকি দেবেন। দেখি, এরপর অফিস খোলে কি না।গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত লিউ ইউইন।রোববার (১৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল চলতি জুন মাসের শেষের দিকে চীন সফরে যাচ্ছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দেশটিতে সফরে যাবে প্রতিনিধি দলটি। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।শায়রুল জানান, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে এই মাসের শেষে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল চীন সফরে যাচ্ছেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণের আলোচনা ও যৌথ বিবৃতি ভালোভাবে নেয়নি দেশের রাজনৈতিক সকল মহলের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। এর ফলে স্বস্তির যে আশা নিয়ে বৈঠকের ইতি টানা হয়, অল্প সময়ের পরেই তা অস্বস্তিতে রূপ নিতে শুরু করে।জুলাই বিপ্লবের মুখ্য শক্তি হিসেবে পরিচিত এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও এর বিষয়বস্তুতে আপত্তি তুলেছে। এতে মূলত রাজনৈতিক বিভাজনে নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে। বিএনপি বাদে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। সেই সাথে জুলাই ঘোষণাকে পাশ কাটিয়ে কোনো নির্বাচন দেশের মানুষ মেনে নিবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আলোচনার বিষয়বস্তুতে অনৈক্য তৈরি হয়েছে :ড. দিলারা চৌধুরীজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতির বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশ’কে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে প্রকৃত অর্থে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। এপ্রিলের মধ্যে ভোট হবে তার এমন ঘোষণায় তিনি অনড় আছেন। বিএনপির সঙ্গে সরকারের যে টানাপোড়েন ছিল সেটির অবসান হয়েছে যা ছিল এ বৈঠকের বিশেষ বার্তা। তবে বৈঠকে সংস্কার ও বিচারসহ নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান অস্পষ্ট। এছাড়া বিএনপি যে ঐক্যের কথা বলছে সেখানেও কিছুটা হলেও অনৈক্য তৈরি হয়েছে। যার মনোভাব ব্যক্ত করেছে জামায়াত ও এনসিপি।এটি একটি নতুন কালচার : জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ দৈনিক ভোরের আকাশ’কে বলেছেন, সরকার প্রধানের সঙ্গে একটি দলের শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেয়ার কালচার আমরা দেখিনি। আমরা দেখি একটি দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সরকার প্রধানের বৈঠকের পর এ ধরনের বিবৃতি। এ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয় সরকার একটি দলের দিকে ঝুঁকি গেছে। যা সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায়। এছাড়া কোন দলের দাবির প্রতি সরকার যে নমনীয় সেটিও প্রমাণিত হয়। এতে সরকারের অবস্থান আরো দুর্বল হবে।বিদেশে বসে সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছি : জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন দৈনিক ভোরের আকাশ’কে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক কোন দলের নেতার সঙ্গে হতেই পারে। তবে, আমরা দেখেছি শুধুমাত্র নির্বাচন ছাড়া সেখানে অন্য কোন আলাপ নেই। বিচার এবং সংস্কার কী হবে সেটিও আমরা কোনো আলোচনা শুনলাম না। বিদেশে বসে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতি কিছুটা হতাশ হয়েছে। এছাড়া বৈঠকের পর এ ধরণের বিবৃতিতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও একটি দলের পক্ষে কাজ করারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।বৃহত্তর স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত : সালাহউদ্দিন লন্ডন বৈঠক নিয়ে জামায়াত-এনসিপির নাখোশের জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, কোনো দলের প্রতি অনুরাগ নয়, বরং ২০২৬ সালের রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে জামায়াতের আমির যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের নতুন সময়সীমা সামঞ্জস্যপূর্ণ। সালাহউদ্দিন আহমদ এনসিপি প্রতিক্রিয়ারও জবাব দেন।তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলটি (এনসিপি) লন্ডন এই বৈঠকের ঘোষণাকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় দৃষ্টির ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তাদের আরও অভিজ্ঞতা অর্জনের পরামর্শ থাকবে।এদিকে, গতকাল শনিবার জামায়াত ইসলামী নির্বাহী পরিষদ সভা করে। জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে দলটির সভা শেষে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানান, লন্ডনে একটি দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের বিষয় ও পরবর্তীতে যৌথ বিবৃতি দেওয়াকে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে মনে করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে একটি দলের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে। একই সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিং করায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী।বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এটাকে খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।বিবৃতিতে আরও জানায়, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণার পর লন্ডনে সফরকালে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে তিনি একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা মনে করি, দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এব্যাপারে তার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সরকারপ্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিং করায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু কোনো একটি দলের সঙ্গে আলাপ করে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না।আমরা আশা করি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবেন। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনকল্পে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।এছাড়া শুক্রবার রাতে এনসিপি এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে দেয়। সেখানে বলা হয়েছে- জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত। ‘জুলাই সনদ’ রচনা ও কার্যকর করার পূর্বে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলেও মনে করেন দলটির নেতারা।এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি বলে আমরা মনে করি।বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি। নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে।দলটির নেতারা বলেন, আমরা মনে করি, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন, ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ব্যতীত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জনআকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে। জনগণের দাবি তথা ‘জুলাই সনদ’ রচনা ও কার্যকর করার পূর্বে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে, তা জনগণ মেনে নেবে না। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাই।জামায়াত ও এনসিপির মাঠ পর্যায়ে নেতারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন বিশেষ করে এ যৌথ বিবৃতির পর একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে। যা ভোটের মাঠে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায় তাই দল দুটির নেতারা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ