নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:০৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ঘনিয়ে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পাল্টে যাচ্ছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অভিন্ন ঐক্য ভুলে দলীয় স্বার্থ রক্ষায় বেশি ঝুঁকছে দলগুলো। শুধু জুলাই সনদে নয়, বিভিন্ন কর্মসূচিতে পরস্পরের প্রতি দলগুলোর মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আক্রমণাত্মক আচরণ ও মনোভাব ফুটে উঠছে। দাবি পূরণ না হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকিও নানাভাবে দিয়ে যাচ্ছে অনেক রাজনৈতিক দল। টেবিলে আলোচনা রেখেই ইতোমধ্যে রাজপথে কর্মসূচি শুরু করেছে জামায়াতসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর মাঝে সৃষ্ট এমন গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতি ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ’কে পুনর্বাসিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারে-এমন আতঙ্কও করছেন বিশ্লেষকরা।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিদিনই ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। কোনো শক্তিই নির্বাচন ব্যাহত করতে পারবে না বলেও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছেন তারা। নির্বাচন আয়োজনে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও জুলাই সনদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যে স্বস্তিবোধ করছেন না সাধারণ মানুষ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনের দিনগুলোতে বিপদের অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন তারা।
অনিশ্চয়তা কাটেনি জুলাই সনদের
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা গত ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। পূর্বঘোষিত জুলাইয়ের মধ্যে সনদ ঘোষণা করতে পারেনি কমিশন। তারপর আগস্টের প্রথমার্ধেও সনদ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশন। দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই মেয়াদেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় দফা মেয়াদ বেড়েছে ঐকমত্য কমিশনের। কিন্ত দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের তুলনায় অনৈক্যের তীব্রতাই যেন বেড়েছে।
এদিকে, জুলাই সনদ ঘোষণা নিয়ে ঘটছে একের পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচন- অনেক আগে থেকেই এমন দাবিতে শুক্ত অবস্থানে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াত। সনদ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা ফুটে উঠছে না। ইস্যুটি নিয়ে দলগুলোর বাগযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠযুদ্ধে গড়ানোর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন গণভোটের বিষয়ে আগ্রহ না থাকলেও গতকাল বিএনপি গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে তারা চায় সংস্কার বাস্তবায়নে পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হবে এবং পরে তা গণভোটে দিয়ে জনমত যাচাই করা হবে। জামায়াতে ইসলামী সংসদ নির্বাচনের আগে এই গণভোট চায়। এনসিপি গণভোটের বিষয়ে মতামত দেয়নি। তারা সংস্কার বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশের পক্ষে।
দলগুলোর অবস্থান
গত বুধবার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমরা আলোচনার টেবিলে আছি। সমাধানের জন্য, এক জায়গায় যাওয়ার জন্য, প্রতিদিন ইনোভেটিভ আইডিয়াস বা জাতির পক্ষে সমাধানের জন্য প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছি। এখন যদি এই আলোচনার টেবিলে সমাধান হয়, আমি আশা করি হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, যে কোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে আমরা বন্ধ করতে পারবো। যেটা আমি আশঙ্কা প্রকাশ করি এবং অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছে, যদি এটা আমরা ঝুলিয়ে রাখি, যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আমরা অনিশ্চিত করি, বাধাগ্রস্ত করি বা বিলম্বিত করি-তাহলে সেটার বেনিফিশিয়ারি কে হবে? পতিত ফ্যাসিবাদ হবে। আমরা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আগাই এবং একটা সমাধানের দিকে যাই।
সংলাপ শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদে এমন অনেক সংস্কার প্রস্তাব আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য অবশ্যই গণভোট লাগবে। তবে গণভোট সংসদ নির্বাচনের পরে করতে হবে। মৌলিক বিষয়ে সংশোধনী আসবে বলে রাষ্ট্রপতির সইয়ের আগে অবশ্যই রেফারেন্ডাম (গণভোট) নিতে হবে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। গত বুধবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’
হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা ১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত চাই না। আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চাই। তা এই সরকারের মাধ্যমেই করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর আমাদের মতামত জানাবো।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আবারও বিভাজনের দিকে উসকে দিয়েছে। সরকার নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আবারও দলগুলোর দিকে বল ঠেলে দিয়েছে। দায় নিতে চাচ্ছে না। গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি সরকারের কথা নয়। এ নিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আরও আলোচনা হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের মতামতে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে জুলাই ঘোষণার ২২-এর ধারা অনুযায়ী এটি করা হবে। অথচ ২৫-এর ধারা অনুযায়ী এটি স্ববিরোধিতা। আবার গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিদ্যমান সরকার যেভাবে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষমতায় আছেন, সে রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা। এরপর একটি অধ্যাদেশ হতে পারে।’
রাজনৈতিক কর্মসূচির ঘোষণা
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় গতকাল একযোগে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল। দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে-জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করতে হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
অস্থিরতার শঙ্কা বাড়ছে
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর পাঁচ মাস বাকি। কিন্ত বিষয়টি নিয়ে জনমনে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে-ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। কিন্ত দলগুলোর মতবিরোধ এবং জটিল জটিল শর্তজুড়ে দেয়ার মধ্যে দেশে সম্ভাব্য অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। দর্শক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কিন্ত মঞ্চ তো প্রস্তুত না। মঞ্চের নায়ক-নায়িকারাও তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে প্রস্তুত না। দর্শকদের আর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবেন না।’
বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘দাবিগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। অন্যথায় দেশের জন্য সমূহ সংকট তৈরি করবে। আর সেই সংকট সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করেই সব করা উচিত।’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোতে সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘দেশে যখন একটা সংকট হয়, তখন সব রাজনৈতিক শক্তি একত্র হয়ে সেই সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে। নেপালে যে ঘটনা ঘটল, আমরা জানলাম, সেখানে দ্রুত একজনকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তিন-চারজনের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। সে দেশের জনগণ এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্ত আমাদের এখানে তেমনটা হয়নি। আমাদের রাজনৈতিক শক্তিগুলো কোনো বিষয়েই তো একমত হতে পারছে না। তারা যদি একমত না হয় তাহলে নির্বাচন ঝুলে যাবে এবং দেশে ভয়ানক অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সরকারপ্রধান স্বয়ং যখন নির্বাচন বানচালের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, তখন বোঝা যায় যে পরিস্থিতি ভালো নয়। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি ভণ্ডুল বাস্থগিত হয়ে যায়, তাহলে দেশে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হবে। এতে সারা দেশে হানাহানি ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে। এখন সামাজিক নৈরাজ্য চলছে, যা রাজনৈতিক নৈরাজ্যে রূপ নিতে পারে, যার প্রভাবে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বিপর্যস্ত হবে।
অভ্যুত্থানকারী দলগুলোর মধ্যে নানা প্রশ্নে প্রতিদিন বিভক্তি-বিভাজন বাড়ছে; যে কারণে ঈশান কোণে ঝড়ের আভাস দেখতে পাচ্ছি। দলীয় নানা এজেন্ডা হাজির করে যারা দেশে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, তারা আসলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে। এই পরিস্থিতি পুরনো ফ্যাসিবাদী জামানাকে ডেকে আনতে পারে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ