তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন ইস্যু
এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫ ০২:১০ এএম
বিএনপির উল্টো সুর-জামায়াত এনসিপিতে
সংস্কার কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলের বৈঠকে গতকাল অনেকটা তর্কে জড়িয়ে গেছে বিএনপি ও এনসিপি। বিএনপি নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়কের অধীনে তারা শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচন চান। আর জাতীয় ও স্থানীয় দুটি নির্বাচনই তত্ত্বাবধায়কের অধীনে চায় জামায়াত। একই সাথে সংস্কার শেষে করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন চান এনসিপি।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শুধু জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। একই সঙ্গে ওই সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন রাখারও পক্ষে দলটি।
সংবিধানের ৭০অনুচ্ছেদের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিএনপি আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনসহ তাতে জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে। যদি কোনো সময় যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, তাহলে পার্লামেন্ট মেম্বাররা যেন তার জন্য ভোট দিতে পারেন, সেটা ৭০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমরা নোট অব ডিসেন্ট দেবো।
এছাড়া তার দল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে প্রধান বিরোধী দল থেকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে একমত নয় বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির এই নেতা বলেন, কয়েকটি কমিটিতে প্রধান বিরোধী দল থেকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, তবে সব স্থায়ী কমিটিতে প্রধান বিরোধী দল থেকে নিয়োগ দেওয়াকে তারা বাস্তবসম্মত প্রস্তাব মনে করেন না। সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তারা এখনো সংসদে নারী আসন নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি।
এদিকে, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে।সংবিধান ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছে বলে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে বিষয়গুলো তাদের প্রস্তাবে রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
এদিকে নির্বাচনের রোডম্যাপ বা সময় নিয়ে বৈঠক চলাকালে প্রধান উপদেষ্টার সামনেই তর্কে জড়ালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিএনপির পক্ষ থেকে কথা বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি ৩১ ডিসেম্বরের পরে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে জানান।
সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে ৩১ ডিসেম্বরের এক দিন পরেও সময় দিতে রাজি নয়।
সালাহউদ্দিনের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কিছু দল ভারতের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের বক্তব্যের পার্থক্য নেই। তারা ভারতের সুরেই নির্বাচনের কথা বলছে।’
সঙ্গে সঙ্গে এ কথার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলে যদি ভারতের সুরে কথা বলা হয়, তাহলে যারা নির্বাচন পেছাতে চায় তারা নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের সুরে কথা বলছে। এ নিয়ে দুই দলের নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা তাদের নিবৃত করেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ