এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৫০ এএম
রাজনৈতিক-সামাজিক-ধর্মীয় নেতারা এক মঞ্চে
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ফের দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের বিশিষ্টজনদের এক মঞ্চে দেখলো দেশের মানুষ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি আয়োজিত গণজমায়েতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একদাবিতে একইভাবে আওয়ামী লীগ ছাড়া নানান মত ও পথের মানুষকে রাজপথে দেখা গিয়েছিল। নানা বিভক্তির পরও এবার ফের এ ধরনের ঐক্য স্বস্তির বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালরে সরকার ও রাজনীতির বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, নানা মত ও পথ থাকাটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। তবে, দেশ এমনকী মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ‘বিশেষ কোনো’ ইস্যুতে সবাই ঐকমত্য পৌঁছানোটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। সম্মিলিত প্রতিবাদ বা দাবি অধিকার আদায়ের অন্যতম শর্ত।
সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের গাজায় নির্যাতিতদের জন্য ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা। তার মধ্যে রয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা ও প্রতিনিধিরা।
কর্মসূচিতে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমানর মঞ্জু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনসিসির পক্ষে হাসনাত আবদুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাগপার রাশেদ প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গণজমায়েতে বিকাল পৌনে ৪টায় মোনাজাত শুরু হয়ে ৪টায় শেষ হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব খ্যাতিমান আলেম মুফতি আবদুল মালেক। এ কর্মসূচিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী। শায়খ আহমাদুল্লাহ সংক্ষিপ্তভাবে গণজমায়েতে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে উৎসাহমূলক বক্তব্য দেন সংক্ষিপ্ত ভাবে। আর ড. মিজানুর রহমান আজহারী নিজেই স্লোগান দেন।
গণজমায়েত থেকে চার স্তরের ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। দোয়া মোনাজাত পরিচালন করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক। এর আগে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ কর্মসূচির শুরু হয়।
এ কর্মসূচি শুরু আগে থেকে সমাবেশ স্থলে ও তার আশপাশে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক সমাগম হয়। এমনকি পুরো রাজধানী যেন সমাবেশের নগরী হয়ে উঠে। স্বেচ্চাসেবীদের তৎপরতাও ছিল উল্লেখযোগ্য। ঠিক গত বছরের জুলাই-আগস্টে যখন শেখ হাসিনা সরকারতের পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল তখন এ ধরনের দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। ‘স্বৈরাচার’ আওয়ামী লীগ ও তার সুভিধাভোগী কয়েকটি রাজনৈতিক দল ছাড়া ওই আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।
ভোরের আকাশ/এসএইচ