বিল্লাল বিন কাশেম
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০৪ পিএম
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পর্দা প্রথার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
পর্দা — একটি শব্দ, যার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব সমাজের নৈতিকতা, সৌন্দর্যবোধ, আত্মমর্যাদা এবং শালীনতার নিপুণ পরিচায়ক। ইসলাম এই পর্দা প্রথাকে শুধু একটি আচার বা ঐতিহ্যগত নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং এটিকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের শান্তি ও সুস্থতার অপরিহার্য শর্ত হিসেবে নির্দেশ করেছে। কুরআন ও সুন্নাহয় স্পষ্টভাবে নারীর পর্দা পালনের নির্দেশনা এসেছে, যা কেবল ইহকালীন সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি এবং পরকালীন মুক্তির মাধ্যমও।
ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। পবিত্র কুরআনে নারীকে সম্মান, অধিকার এবং মর্যাদার যে আসন প্রদান করা হয়েছে, তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য। নারীর শালীনতা ও সম্মান রক্ষায় ইসলাম পর্দা প্রথাকে অপরিহার্য বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছে। পর্দা নারীকে লাঞ্ছনা, অসম্মান এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি, এটি পুরুষের দৃষ্টিশুদ্ধি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চাও নিশ্চিত করে।
পবিত্র কুরআনে পর্দা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: “মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পরিশুদ্ধি। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ সম্যক জানেন। এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, যা নিজে থেকেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা ছাড়া।” (সূরা আন-নূর, ২৪:৩০-৩১)
এই আয়াত দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝিয়ে দেয়, পর্দা শুধুমাত্র নারীর জন্য নয়, পুরুষের জন্যও দায়িত্ব। পর্দা মানে কেবল পোশাকের সীমারেখা নয়, বরং দৃষ্টির সংযম, আচরণে শালীনতা, এবং হৃদয়ের পবিত্রতা। পর্দা মানে নিজেকে এমনভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে অন্যের কাছে প্ররোচনা বা লোভের বস্তু হয়ে না দাঁড়ায়।
ইসলামে পর্দা শুধু নারী-পুরুষের শারীরিক সৌন্দর্য আড়াল করার মাধ্যম নয়, বরং এটি চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষার প্রতীক। পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ব্যক্তির পরিচয়, মনস্তত্ত্ব এবং জীবনদর্শন। একজন নারীর পর্দাশীল জীবনাচার তার ব্যক্তিত্বকে সম্মানিত করে, সমাজে তাকে মর্যাদাশীল অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে এবং তাকে হয়রানি, কু-প্রস্তাব ও লাঞ্ছনা থেকে নিরাপদ রাখে।
রাসূলুল্লাহ (স.) এর জীবনে পর্দা প্রথার গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (স.) নারীর মর্যাদা ও পর্দা প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা।” (বুখারি ও মুসলিম) নারীর লজ্জাশীলতা তার পর্দাশীলতার অন্যতম অভিব্যক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা একটি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক গুণ, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের চরিত্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নারীর জন্য এটি তার নিজস্ব অস্তিত্বের অংশ। কারণ, নারীর দেহের গঠন এবং সৌন্দর্য সহজাতভাবে পুরুষকে আকর্ষণ করে, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসলাম নারীর জন্য পর্দাকে বাধ্যতামূলক করেছে।
পর্দা প্রথার সামাজিক তাৎপর্য
একটি সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্দা প্রথা এক অপরিহার্য উপাদান। পর্দাহীনতা কেবল ব্যক্তিগত অবক্ষয়ই নয়, সামাজিক নৈতিকতাকেও ভেঙে দেয়। ইসলাম চায় একটি সুন্দর, নিরাপদ এবং সদাচারপূর্ণ সমাজ, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই মর্যাদাশীল অবস্থায় বসবাস করবে। পর্দা সমাজে পবিত্রতা, সৌহার্দ্য এবং শালীনতার আবহ তৈরি করে।
যদি একজন নারী নিজেকে পর্দার মধ্যে রাখেন, তবে তার প্রতি অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্মানজনক হয়। একইভাবে, একজন পুরুষ যদি তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে, তাহলে সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দুই পক্ষের সম্মিলিত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে একটি সুস্থ, নৈতিক সমাজ ব্যবস্থা।
পর্দার মানসিক ও আত্মিক গুরুত্ব
পর্দা শুধুমাত্র বাহ্যিক নয়, এটি মানসিক এবং আত্মিক পর্দাও বটে। একজন মুমিন নারী যখন নিজেকে শালীন পোশাকে ঢেকে রাখেন এবং বিনয় ও সংযমের আচরণ চর্চা করেন, তখন তার অন্তরের পর্দাও দৃঢ় হয়। এতে করে সে নিজেকে অহঙ্কার, অসততা, কামনা-বাসনা ইত্যাদি আত্মিক ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে পারে।
অপরদিকে, বাহ্যিক পর্দার অভাব ধীরে ধীরে আত্মিক দূষণ সৃষ্টি করে। কারণ, যখন দৃষ্টিশীলতা ও আচরণে শালীনতা লুপ্ত হয়, তখন মনও কলুষিত হয়ে পড়ে। আর এই অভ্যাসই একসময় সমাজে চরিত্রহীনতার প্রসার ঘটায়।
পর্দা: নারী স্বাধীনতার প্রতিকূল নয়
বর্তমানে অনেকে মনে করেন, পর্দা নারীর স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। বরং পর্দা নারীকে তার প্রকৃত মর্যাদা ও স্বাধীনতা দেয়। পর্দাশীল নারী নিজেকে বাজারের পণ্যের মতো উপস্থাপন করতে বাধ্য হয় না। সে নিজের ইচ্ছা ও মর্জি অনুযায়ী সম্মান বজায় রেখে সমাজে অবাধ চলাফেরা করতে পারে। পর্দা নারীর ব্যক্তিত্বের সম্মান রক্ষা করে এবং তাকে পুরুষতান্ত্রিক লোলুপতার শিকার হওয়া থেকে বাঁচায়। ইসলাম নারীর জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান, গবেষণা, ব্যবসা, সমাজসেবা সবকিছুর অনুমোদন দিয়েছে; তবে তা শালীনতা, সম্মান ও নিরাপত্তার শর্ত সাপেক্ষে। আর এই শালীনতার সবচেয়ে বড় প্রহরী হলো পর্দা।
পর্দার সুফল
পর্দার সুফল কেবল একজন নারী বা তার পরিবার পর্যন্ত সীমিত থাকে না; বরং একটি জাতি ও সমাজের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নারীর পর্দাশীলতার উপর। একজন পর্দানশীন মা তার সন্তানকে শালীনতা, নৈতিকতা ও আদর্শের শিক্ষা দিতে পারেন। পর্দাশীল সমাজে লাম্পট্য, যৌন হয়রানি, ব্যভিচার, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের মতো সামাজিক ব্যাধি কমে আসে। এতে পরিবার হয় দৃঢ়, সমাজ হয় নিরাপদ এবং রাষ্ট্র হয় নৈতিকতাসম্পন্ন।
ইসলাম নারীর জন্য পর্দা প্রথাকে বাধ্যতামূলক করে তাকে অসম্মান বা অবহেলার শিকার করেনি, বরং তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পর্দা নারীর আত্মমর্যাদার ঢাল, তার আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি এবং সমাজে তার সম্মানের বাহক। পর্দা শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতার পরিচায়ক। এটি একদিকে যেমন নারীকে রক্ষা করে, তেমনি পুরুষকেও সংযত রাখে। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় পর্দা প্রথা একটি অপরিহার্য অনুশীলন, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের শান্তি, স্থিতি ও কল্যাণের জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করে।
আজকের বিশ্ব যখন পর্দাহীনতার নামে নারী স্বাধীনতার অপব্যাখ্যা করছে, তখন ইসলামের এই চিরন্তন পর্দা প্রথা মানব জাতির জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পর্দা নারীকে যেমন আত্মিক শক্তি দেয়, তেমনি সমাজকেও করে নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। তাই ইসলামী পর্দা প্রথার গুরুত্ব ও তাৎপর্য মানবজীবনে অপরিসীম।
লেখক: গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ভোরের আকাশ/মি
বিল্লাল বিন কাশেম
প্রকাশ : ২ দিন আগে
আপডেট : ২ দিন আগে
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পর্দা প্রথার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
পর্দা — একটি শব্দ, যার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব সমাজের নৈতিকতা, সৌন্দর্যবোধ, আত্মমর্যাদা এবং শালীনতার নিপুণ পরিচায়ক। ইসলাম এই পর্দা প্রথাকে শুধু একটি আচার বা ঐতিহ্যগত নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং এটিকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের শান্তি ও সুস্থতার অপরিহার্য শর্ত হিসেবে নির্দেশ করেছে। কুরআন ও সুন্নাহয় স্পষ্টভাবে নারীর পর্দা পালনের নির্দেশনা এসেছে, যা কেবল ইহকালীন সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি এবং পরকালীন মুক্তির মাধ্যমও।
ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। পবিত্র কুরআনে নারীকে সম্মান, অধিকার এবং মর্যাদার যে আসন প্রদান করা হয়েছে, তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য। নারীর শালীনতা ও সম্মান রক্ষায় ইসলাম পর্দা প্রথাকে অপরিহার্য বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছে। পর্দা নারীকে লাঞ্ছনা, অসম্মান এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি, এটি পুরুষের দৃষ্টিশুদ্ধি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চাও নিশ্চিত করে।
পবিত্র কুরআনে পর্দা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: “মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পরিশুদ্ধি। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ সম্যক জানেন। এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, যা নিজে থেকেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা ছাড়া।” (সূরা আন-নূর, ২৪:৩০-৩১)
এই আয়াত দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝিয়ে দেয়, পর্দা শুধুমাত্র নারীর জন্য নয়, পুরুষের জন্যও দায়িত্ব। পর্দা মানে কেবল পোশাকের সীমারেখা নয়, বরং দৃষ্টির সংযম, আচরণে শালীনতা, এবং হৃদয়ের পবিত্রতা। পর্দা মানে নিজেকে এমনভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে অন্যের কাছে প্ররোচনা বা লোভের বস্তু হয়ে না দাঁড়ায়।
ইসলামে পর্দা শুধু নারী-পুরুষের শারীরিক সৌন্দর্য আড়াল করার মাধ্যম নয়, বরং এটি চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষার প্রতীক। পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ব্যক্তির পরিচয়, মনস্তত্ত্ব এবং জীবনদর্শন। একজন নারীর পর্দাশীল জীবনাচার তার ব্যক্তিত্বকে সম্মানিত করে, সমাজে তাকে মর্যাদাশীল অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে এবং তাকে হয়রানি, কু-প্রস্তাব ও লাঞ্ছনা থেকে নিরাপদ রাখে।
রাসূলুল্লাহ (স.) এর জীবনে পর্দা প্রথার গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (স.) নারীর মর্যাদা ও পর্দা প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা।” (বুখারি ও মুসলিম) নারীর লজ্জাশীলতা তার পর্দাশীলতার অন্যতম অভিব্যক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা একটি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক গুণ, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের চরিত্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নারীর জন্য এটি তার নিজস্ব অস্তিত্বের অংশ। কারণ, নারীর দেহের গঠন এবং সৌন্দর্য সহজাতভাবে পুরুষকে আকর্ষণ করে, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসলাম নারীর জন্য পর্দাকে বাধ্যতামূলক করেছে।
পর্দা প্রথার সামাজিক তাৎপর্য
একটি সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্দা প্রথা এক অপরিহার্য উপাদান। পর্দাহীনতা কেবল ব্যক্তিগত অবক্ষয়ই নয়, সামাজিক নৈতিকতাকেও ভেঙে দেয়। ইসলাম চায় একটি সুন্দর, নিরাপদ এবং সদাচারপূর্ণ সমাজ, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই মর্যাদাশীল অবস্থায় বসবাস করবে। পর্দা সমাজে পবিত্রতা, সৌহার্দ্য এবং শালীনতার আবহ তৈরি করে।
যদি একজন নারী নিজেকে পর্দার মধ্যে রাখেন, তবে তার প্রতি অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্মানজনক হয়। একইভাবে, একজন পুরুষ যদি তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে, তাহলে সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দুই পক্ষের সম্মিলিত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে একটি সুস্থ, নৈতিক সমাজ ব্যবস্থা।
পর্দার মানসিক ও আত্মিক গুরুত্ব
পর্দা শুধুমাত্র বাহ্যিক নয়, এটি মানসিক এবং আত্মিক পর্দাও বটে। একজন মুমিন নারী যখন নিজেকে শালীন পোশাকে ঢেকে রাখেন এবং বিনয় ও সংযমের আচরণ চর্চা করেন, তখন তার অন্তরের পর্দাও দৃঢ় হয়। এতে করে সে নিজেকে অহঙ্কার, অসততা, কামনা-বাসনা ইত্যাদি আত্মিক ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে পারে।
অপরদিকে, বাহ্যিক পর্দার অভাব ধীরে ধীরে আত্মিক দূষণ সৃষ্টি করে। কারণ, যখন দৃষ্টিশীলতা ও আচরণে শালীনতা লুপ্ত হয়, তখন মনও কলুষিত হয়ে পড়ে। আর এই অভ্যাসই একসময় সমাজে চরিত্রহীনতার প্রসার ঘটায়।
পর্দা: নারী স্বাধীনতার প্রতিকূল নয়
বর্তমানে অনেকে মনে করেন, পর্দা নারীর স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। বরং পর্দা নারীকে তার প্রকৃত মর্যাদা ও স্বাধীনতা দেয়। পর্দাশীল নারী নিজেকে বাজারের পণ্যের মতো উপস্থাপন করতে বাধ্য হয় না। সে নিজের ইচ্ছা ও মর্জি অনুযায়ী সম্মান বজায় রেখে সমাজে অবাধ চলাফেরা করতে পারে। পর্দা নারীর ব্যক্তিত্বের সম্মান রক্ষা করে এবং তাকে পুরুষতান্ত্রিক লোলুপতার শিকার হওয়া থেকে বাঁচায়। ইসলাম নারীর জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান, গবেষণা, ব্যবসা, সমাজসেবা সবকিছুর অনুমোদন দিয়েছে; তবে তা শালীনতা, সম্মান ও নিরাপত্তার শর্ত সাপেক্ষে। আর এই শালীনতার সবচেয়ে বড় প্রহরী হলো পর্দা।
পর্দার সুফল
পর্দার সুফল কেবল একজন নারী বা তার পরিবার পর্যন্ত সীমিত থাকে না; বরং একটি জাতি ও সমাজের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নারীর পর্দাশীলতার উপর। একজন পর্দানশীন মা তার সন্তানকে শালীনতা, নৈতিকতা ও আদর্শের শিক্ষা দিতে পারেন। পর্দাশীল সমাজে লাম্পট্য, যৌন হয়রানি, ব্যভিচার, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের মতো সামাজিক ব্যাধি কমে আসে। এতে পরিবার হয় দৃঢ়, সমাজ হয় নিরাপদ এবং রাষ্ট্র হয় নৈতিকতাসম্পন্ন।
ইসলাম নারীর জন্য পর্দা প্রথাকে বাধ্যতামূলক করে তাকে অসম্মান বা অবহেলার শিকার করেনি, বরং তার মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পর্দা নারীর আত্মমর্যাদার ঢাল, তার আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি এবং সমাজে তার সম্মানের বাহক। পর্দা শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতার পরিচায়ক। এটি একদিকে যেমন নারীকে রক্ষা করে, তেমনি পুরুষকেও সংযত রাখে। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় পর্দা প্রথা একটি অপরিহার্য অনুশীলন, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের শান্তি, স্থিতি ও কল্যাণের জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করে।
আজকের বিশ্ব যখন পর্দাহীনতার নামে নারী স্বাধীনতার অপব্যাখ্যা করছে, তখন ইসলামের এই চিরন্তন পর্দা প্রথা মানব জাতির জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পর্দা নারীকে যেমন আত্মিক শক্তি দেয়, তেমনি সমাজকেও করে নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। তাই ইসলামী পর্দা প্রথার গুরুত্ব ও তাৎপর্য মানবজীবনে অপরিসীম।
লেখক: গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ভোরের আকাশ/মি