কলম্বো টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫ ০৮:৩০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কলম্বো টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে আরও একটি ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের ৪৫৮ রানের বিপরীতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৭ রান করা বাংলাদেশের সামনে পাহাড়সম চাপ। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ৬ উইকেটে ১১৫ রান তুলে দিন শেষ করেছে টাইগাররা। শুধু চাপ নয়, বাস্তবতাও ভয়াবহ। লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস থেকে এখনও ৯৬ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ, হাতে আছে মাত্র চারটি উইকেট। ক্রিজে আছেন লিটন দাস ১৩ রানে ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১১ রানে অপরাজিত। এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থ দিনে মাঠে নামবে বাংলাদেশ মনে প্রশ্ন, কতক্ষণ প্রতিরোধ গড়তে পারবে তারা?
দৃঢ় শুরু থেকে ছন্নছাড়া শেষ লঙ্কানদের : শুক্রবার সকালটা শুরু হয় বাংলাদেশের জন্য আশার আলো হয়ে। দ্বিতীয় দিনে ২ উইকেটে ২৯০ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে শ্রীলঙ্কা। আগের দিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করা পাথুম নিশাঙ্কা ১৫৮ রান করে ফিরে যান তাইজুল ইসলামের বলে। আগের ইনিংসেই তার ছিল ১৮৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। এবারও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দলকে এনে দেন শক্ত ভিত। সকালের প্রথম সেশনে নাইটওয়াচম্যান প্রবাথ জায়াসুরিয়া ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে তুলে নেয় বাংলাদেশ। ধনাঞ্জয়া মাত্র ৭ রান করে ফিরে যান, জায়াসুরিয়া থামেন ১০ রানে। এরপর কামিন্দু মেন্ডিস ৩৩ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান নাঈম হাসানের বলে। তবে দিনের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে। লোয়ার অর্ডারের সঙ্গে ব্যাট করে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মাত্র ৮৭ বলে ৮৪ রান করেন, যার মধ্যে ছিল ৮টি চার ও ২টি ছক্কা। তবে সম্ভাব্য শতক হাতছাড়া হয় রানআউটের কারণে। কুশলের বিদায়ের পর আর টিকতে পারেনি লঙ্কান টেলেন্ডাররা। ৪৫৮ রানে থামে ইনিংস। তাইজুল ইসলাম দারুণ বল করেছেন। ৪২.৫ ওভারে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭তম ফাইফার তুলে নেন। দেশের বাইরে এটি তার পঞ্চম বার ৫ উইকেট এই তালিকায় তিনি এখন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে।
আবারও পুরনো চিত্র, ভেঙে পড়া ব্যাটিং : প্রথম ইনিংসে বড় ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা দৃঢ়তা আশা করছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও সাদমান ইসলাম ফিরেন যথাক্রমে ১৯ ও ১২ রানে। দ্রুত ফিরে যান মুমিনুল হকও তার সংগ্রহ ১৫ রান। এরপর একটু স্থিতি আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু শান্ত ১৯ রানে ফেরেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে। ২৬ রান করে মুশফিকও ফিরে গেলে ১০০ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। দিনের একেবারে শেষে ফেরেন মেহেদী মিরাজ (১৫), আর তখনই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করা হয়। ক্রিজে আছেন লিটন দাস, যিনি এদিনও শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৩ রানে অপরাজিত থেকে তিনি চতুর্থ দিন শুরু করবেন।
অপ্রতিরোধ্য লঙ্কানরা, হতাশ বাংলাদেশ : শ্রীলঙ্কার বোলাররা দ্বিতীয় ইনিংসেও নিখুঁত লাইন-লেংথে আক্রমণ চালিয়ে গেছেন। প্রভাব বিস্তার করেছেন স্পিনার প্রবাথ জায়াসুরিয়া ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। পাশাপাশি থারিন্ডু ফার্নান্দো ও আসিথা ফার্নান্দো ঠিক সময়ে উইকেট এনে দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশি ব্যাটারদের ব্যর্থতা চোখে পড়েছে। টপ অর্ডার একের পর এক ভুল শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। উইকেট স্বাভাবিক, বল খুব একটা ঘুরছিল না। তারপরও এমন আত্মবিশ্বাসহীন ব্যাটিং হতাশ করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
ফলো-অন এড়াতে দরকার ৯৬, চোখ রাঙাচ্ছে ইনিংস হার : চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্পষ্ট সমীকরণ প্রথমে বাকি ৯৬ রান করে ফলো-অন এড়ানো, এরপর ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই। হাতে আছে চার উইকেট, তার মধ্যে একটি আবার টেলএন্ডার। ব্যাটিংয়ের যা অবস্থা, তাতে করে ইনিংস হার যেন সময়ের অপেক্ষা! এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। কলম্বোতে আবারও ইনিংস ব্যবধানে হেরে গেলে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে টানা দ্বিতীয় টেস্টে একই চিত্রই দেখতে হবে বাংলাদেশকে পরাজিত, নতজানু ও আত্মবিশ্বাসহীন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ