বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্ট
রাজীব দাস
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫ ১১:০৭ পিএম
মুশফিক-লিটনের ব্যাটে আশা জেগেছিল কিন্ত শেষ পর্যন্ত তারাও ব্যর্থ
এটা যেন পুরনো গল্পের নতুন সংস্করণ। টেস্টে বাংলাদেশের ধসে পড়া কোনো অজানা বা বিরল কিছু নয়। কিন্তু হতাশাজনক হলো সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি, একই ধসের চিত্র, আর সেই চেনা হতাশার মিছিল। কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনটিও হল এর ব্যতিক্রম নয়। উইকেট বেশ ব্যাটিং উপযোগী, প্রতিপক্ষ তেমন ভয়ংকর নয়, তবুও ৭১ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২০ রানে দিন শেষ করেছে টাইগাররা। এটা প্রতিপক্ষের অসাধারণ দক্ষতায় নয়, বরং বাংলাদেশের ব্যাটারদের আত্মঘাতী মনোভাবেই হয়েছে। শট সিলেকশনের ভুল, দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, আর নিজের সম্ভাবনা নিজেই নষ্ট করার পুরনো অভ্যাসে আবারও ধরা খেলো শান্ত-লিটনরা।
ভুলের শুরু বিজয় দিয়ে: গলে টানা দুই ইনিংসে শূন্য রানে ফিরেছিলেন এনামুল হক বিজয়। তার খেলার ধরন ও শরীরী ভাষা ছিল ব্যাটিং অচেনা কেউ যেন টেস্টে এসে পড়েছেন হঠাৎ করেই। সেই ব্যর্থতার পরও আবার একাদশে জায়গা পেয়েছেন, কারণ দলে ছিলেন না কোনো বিকল্প ওপেনার। আর বিজয়ও হতাশ করেননি দশ বল খেলে শূন্য রানে প্লেড-অন। দুইবার জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। এভাবে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর চাপটা যে পুরো দলের ওপর পড়ে, তা নতুন কিছু নয়।
সাজঘরে আসা-যাওয়ার মিছিল: বিজয়ের পর মুমিনুল ও সাদমান চেষ্টা করেছিলেন ইনিংস গুছিয়ে নিতে। কিন্তু মুমিনুল অযথা এগিয়ে এসে পার্ট টাইম স্পিনার ধনাঞ্জয়ার শিকার হন। সাদমান ছিলেন অনেকটা ধৈর্য ধরে, খেলেছিলেন ৯৩ বল। কিন্তু তিনিও ৪৬ রানে সেট হয়েও ফিরেছেন, ভুল সময়ে ভুল শট খেলে। শান্ত মাত্র ৮ রান করেই বিদায় নেন।
৭৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ইনিংস ধসে পড়ার উপক্রম, তখন মাঠে নামেন দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটার মুশফিক ও লিটন। তারা একটু স্থিরতা আনেন। ৬৭ রানের জুটি তৈরি হয়। কিন্তু এরপর লিটনের ব্যর্থ শট ছক্কা মারার চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে দেওয়া। মুশফিকও পড়ে যান ফাঁদে, সুইপ করতে গিয়ে ৩৫ রানে শেষ। প্রতিটি উইকেটই যেন গিফট করা, শত্রুর হাতে নয় নিজের ভুলে।
মিরাজের আবেগ, কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন: শেষ দিকে সদ্য ওডিআই অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। তবে তার ব্যাটিং ছিল ওয়ানডে ধাঁচের । ৪২ বলে ৩১ রান করে আউট হওয়ার সময় ব্যাট ছুঁড়ে নিজেই নিজের উপর রাগ ঝাড়েন। মানসিক চাপ যে তীব্র, তা স্পষ্ট। তবে সেটা টেম্পারামেন্টে প্রকাশ না করে শটে প্রকাশ করায় ক্ষতিটা আরও বড় হয়েছে।
দিনের নায়ক লঙ্কান স্পিনার দিনুশা: লঙ্কানদের মধ্যে আলো ছড়িয়েছেন অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার সুনীল দিনুশা। তার শিকার মুশফিক ও লিটন দুই গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। পেসার আসিথা ও বিশ্ব ফার্নান্ডো নিয়েছেন দুটি করে উইকেট, আর ধনাঞ্জয়া ও থারিন্ডু একটি করে। বৃষ্টির কারণে সময় হারালেও লঙ্কানদের জন্য দিনটি একরকম পুরস্কারের মতোই গেছে। দ্বিতীয় দিন খেলা শুরু হবে ১৫ মিনিট আগে।
বাংলাদেশ দল বারবার একই ভুলে পড়ে যাচ্ছে, শিক্ষা নিচ্ছে না। প্রতিভা আছে, সুযোগও আসে, কিন্তু সেসব নিজেদের হাতেই নষ্ট করে আসে ব্যর্থতার দায়। কলম্বো টেস্টের প্রথম দিন ছিল তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হয়তো উইকেটটা চ্যালেঞ্জিং ছিল না, সমস্যা ছিল ব্যাটে নয় মাথায়। দ্বিতীয় দিন সেই ভুলের কী মূল্য দিতে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ