বিজিবি সীমান্তে নিরাপত্তা ও চোরাচালান দমনে নিরলস কাজ করছে
দিনাজপুর বিজিবি সেক্টরে সীমান্ত বিষয়ে বিজিবির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় ১১টায় বিজিবির উত্তর পশ্চিম রংপুর জোন এর আওতায় দিনাজপুর বিজিবির সেক্টরের হলরুমে সীমান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে বিজিবির এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফুলবাড়ী ২৯ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্নেল জাবের বিন জব্বার (পিএসসি)।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দিনাজপুর বিজিবির সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মাদ ফয়সাল হাসান খান, বিজিবিএম, পিবিজিএম, পিএসসি। তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আপনারা অবগত আছেন, রংপুর রিজিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা ১,৬৬৮.৮৫৪ কি. মি.। অত্র রিজিয়নের অধীনে ০৪টি সেক্টর ও ১৫টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। রংপুর রিজিয়নের প্রতিটি বিজিবি সদস্য সীমান্ত সুরক্ষায় নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।এরই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বর ২০২৫ মাসে মাদক, অস্ত্র ও অন্যান্য মালামাল চোরাচালান রোধ, নারী ও শিশুসহ মানব পাচার প্রতিরোধ, সীমান্ত সুরক্ষা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।চোরাচালানি মালামাল আটক। রংপুর রিজিয়ন এর আওতাধীন ব্যাটালিয়নে কর্মরত বিজিবি সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে এ বছরে ৪৮ জন আসামিসহ প্রায় ০৪ কোটি টাকার অধিক মূল্যের বিভিন্ন প্রকার মাদক ও চোরাচালানি মালামাল আটক করতে সক্ষম হয়েছে—আটককৃত মাদকদ্রব্য। ফেন্সিডিল ৯৬৬ বোতল, বিদেশী মদ ১,০০০ বোতল, ইয়াবা ৩,৪৬৯ পিস, গাঁজা ২২৮.০১৯ কেজি, ভারতীয় বিভিন্ন প্রকার নেশাজাতীয় সিরাপ ২,০৫১ বোতল, ভারতীয় মেটাডক্সিন ট্যাবলেট ৮,৫৯০ পিস, ভারতীয় ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ১৭,৯৬৭ পিস এবং ভারতীয় নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন ৫,৭৪৩ পিস।পুরুষ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম। দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় পুরুষ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে সর্বদা সজাগ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকা হতে নভেম্বর ২০২৫ মাসে পুরুষ, নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের সদস্য ০১ জন (ভারতীয় নাগরিক)’সহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হতে পুরুষ-০৫ জন, নারী- ০৩ জন ও শিশু-০২ জনকে উদ্ধার করতঃ আইনের আওতায় এনেছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে এবং পাচারের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে— সচেতন করার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণদের মধ্যে জনসচেতনতামূলক সভার মাধ্যমে নিয়মিত প্রেষণা প্রদান ও সতর্ক করা হচ্ছে।অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ০৬ রাউন্ড গুলিসহ ০৩টি বিদেশি ওয়ানশুটার গান এবং ২.৩ কেজি গান পাউডার। আটককৃত চোরাচালানি মালামাল। ভারতীয় প্রসাধনী সামগ্রী- ১০২৬০ পিস, বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় ঔষধ সামগ্রী- ৬৮৭৭টি। বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় খাবার সামগ্রী-১৯০৩টি, বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় শাড়ি-৯১ পিস, ভারতীয় লেহেঙ্গা-০২ পিস, ভারতীয় প্যান্টের কাপড়- ০৪ পিস, ভারতীয় কম্বল-৮২ পিস, ভারতীয় শাল চাদর-৯০ পিস, ভারতীয় জিরা-৬৯৪ কেজি, ভারতীয় ধান-৭৬০ কেজি, ভারতীয় চিনি-১৫৪ কেজি।ভারতীয় পেঁয়াজ- ১৭৭৫ কেজি, ভারতীয় আপেল- ১০১ কেজি, ট্রাক- ০১টি, ইজিবাইক-০৩টি, ইঞ্জিন চালিত নৌকা-০৬টি, মোটরসাইকেল- ২৫টি, ভারতীয় বাইসাইকেল-১৫টি এবং বিভিন্ন প্রকার মোবাইল ৬৬টি। আটককৃত গবাদিপশু। গরু ১১৫টি, মহিষ১৩টি এবং ছাগল- ০২টি।ইলিশ ধরা ও পাচার রোধ। রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন রাজশাহী জেলায় অবস্থিত পদ্ম এলাকায় সরকার ঘোষিত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাত করণ, ক্রয়-বিক্রয় এবং পার্শ্ববর্তী দেশে প্রচার প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যগণ নিয়মিত টহল পরিচালনার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করে আসছে।জাল টাকা পাচার প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম। জাল টাকার উপস্থিতি যে কোনো দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। জাল টাকার বিস্তার প্রতিরোধে দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ।দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবি’র চেকপোস্ট এবং সন্দেহজনক স্থান সমূহে তল্লাশির মাধ্যমে সজাগ দৃষ্টি রাখছে।আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম। সীমান্ত হত্যা অবৈধ অনুপ্রবেশ, নারী ও শিশু পাচার, পুশ ইন, গবাদি পশু ও মাদকদ্রব্যসহ যে কোনো ধরনের চোরাচালান এবং আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ২৪ ঘন্টা টহল পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও বিশেষ টহল দ্বারা প্রতিনিয়ত তালিকাভুক্ত চোরাকারবারিদের নজরদারির মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য সদা তৎপর রয়েছে। এছাড়াও প্রতিপক্ষ বিএসএফ এর সাথে সমন্বিত টহল পরিচালনা ও নিয়মিত পতাকা বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীনস্থ ব্যাটালিয়নসমূহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায়।নভেম্বর ২০২৫ মাসে বিজিবি-বিএসএফ বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বমোট ৪১৩টি পতাকা বৈঠক/সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিবি সর্বদা সীমান্ত অপরাধ নির্মূল করতঃ সীমান্ত এলাকার জনগণ যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয় সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।সীমান্ত রক্ষায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন বিওপি স্থাপন। দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রদানে বিজিবি’র কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েরংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় নতুন ০৬টি বিওপি স্থাপন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বর ২০২৫ মাসে রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন লালমনিরহাট জেলার সীমান্ত এলাকায় (৬১ বিজিবি’র আওতাধীন) চতুরবাড়ী বিওপি উদ্বোধন করা হয়েছে।সীমান্ত এলাকায় নতুন নতুন বিওপি স্থাপনের ফলে সীমান্তে নজরদারি ও টহল কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিজিবি’র সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি’র ভূমিকা। বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীনস্থ ব্যাটালিয়নসমূহের সদস্যগণ সদা প্রস্তুত রয়েছে। আপনারা জানেন, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজীয় সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় সাধারণ জনগনের আস্থা অর্জন করতে স্বক্ষম হয়েছে।জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম।দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে দিনাজপুর জেলার বিরল সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩০০ জন গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে ৩০০টি শীত বস্ত্র (কম্বল) এবং বাচ্চাদের জন্য ১০০টি শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এছাড়াও মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে স্থানীয় ৫০০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। বিজিবি কর্তৃক গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস জুড়েও এ ধরনের শীতবস্ত্র বিতরণ ও মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেনিয়মিতভাবে জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। সীমান্ত দূর্ঘটনা এড়ানো, চোরাচালান রোধ, চোরাচালানে সম্পৃক্ত না হওয়া, সীমান্ত অতিক্রম না করা, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, মানব পাচার ও বিভিন্ন ধরনের সীমান্তবর্তী সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে দেশের অন্যান্য সীমান্তের ন্যায় রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সেক্টর সমূহের অধীন ব্যাটালিয়নসমূহ নভেম্বর ২০২৫ মাসে সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বমোট ২৫৮৬টি জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, ফুলবাড়ী ২৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।ভোরের আকাশ/মো.আ.