ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫ ০৮:৪১ পিএম
মার্কিন প্রভুত্ববাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা শি জিনপিংয়ের
ঠিক যেমন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে এদেশের ঘরোয়া রাজনীতি সরগরম, তেমনই আরও এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির উপর নজর রয়েছে গোটা বিশ্বের। যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক যুদ্ধের সাময়িক বা ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। তার ঠিক পরদিনই, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
তিনি বলেন, শুল্ক যুদ্ধ কিংবা প্রভুত্ব বিস্তারের মানসিকতায় কেউই জেতেন না। এই ধরণের আচরণ শেষমেশ একঘরে হয়ে যাওয়ার দিকেই ঠেলে দেয়।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বেজিংয়ে আয়োজিত চতুর্থ চায়না-সেলাক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলির প্রতিনিধিদের সামনে এই মন্তব্য করেন শি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও চিলির রাষ্ট্রপতিরাও।
শি বলেন, গত শতাব্দীতে যেসব রূপান্তর দেখা যায়নি, এখন সেসব খুব দ্রুত ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক স্তরে ঐক্য ও সহযোগিতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
চায়না-সেলাক ফোরামটি ২০১৪ সালে গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়ানোর পাশাপাশি ঐ অঞ্চলে আমেরিকার দীর্ঘদিনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো। এই ফোরামে ৩৩টি সদস্য দেশ রয়েছে। শি এমন সময়ে এই কথা বলেছেন যখন চীন ও আমেরিকা একে অপরের পণ্যের উপর চাপানো শুল্ক ৯০ দিনের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাজারে স্বস্তিও ফিরিয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চীন মার্কিন চাপের মুখে নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে এবং পাল্টা শুল্ক আরোপে পিছপা হয়নি। পাশাপাশি কূটনৈতিক স্তরে এক ‘চার্ম অফেন্সিভ’ শুরু করেছে বেইজিং, যেখানে তারা নিজেদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরছে এবং ‘মার্কিন বুলিং’-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
এদিনও শি সেই কৌশল বজায় রেখে বলেন, চীন ও লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল গ্লোবাল সাউথ-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন আমাদের ঐতিহ্য, উন্নয়ন ও পুনর্জাগরণ আমাদের অধিকার, আর ন্যায়বিচার আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, যখন ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত ও গোষ্ঠীভিত্তিক মেরুকরণ বাড়ছে, একতরফা নীতি ও সুরক্ষাবাদের ঢেউ উঠছে, তখন চিন তার লাতিন ও ক্যারিবিয়ান বন্ধুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।
শি-র ভাষণে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাসও উঠে এসেছে।
তিনি জানান, সিইএলএসি সদস্য দেশগুলিকে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য ৬৬ বিলিয়ন ইউয়ান অর্থাৎ প্রায় ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণসুবিধা দেওয়া হবে। এই ঋণ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে দেওয়াও অর্থবহ। কারণ, তা ওই অঞ্চলে ইউয়ানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্লেষকদের মতে, শি জিনপিংয়ের এই বার্তা কেবল আমেরিকার প্রতি প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এক নতুন ভূ-কৌশলগত বাস্তবতার দিকেও ইঙ্গিত করছে, যেখানে চীন গ্লোবাল সাউথ-এর নেতৃত্ব দাবি করতে চায়।
ভোরের আকাশ/আমর