নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫ ০৭:৫৮ পিএম
‘অভ্যাস বদলাতে পারলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো সম্ভব’
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পলিথিনসহ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে তার বিকল্প বের করতে চেষ্টা করছে সরকার। আমাদের অভ্যাস বদলাতে পারলে এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য দেশ পারলে আমরাও চাইলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারবো।
মঙ্গলবার (১৩ মে) একটি টেকসই, প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া প্রকল্পের জাতীয় জ্ঞান বিনিময় কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই বলেন আমি শুধু পলিথিন নিয়ে কথা বলি। আসলে সব ধরণের সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আমাদের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশগত দিক থেকেও অনেক ক্ষতি করছে। ফলে আমাদের এ দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ের কথা যদি চিন্তা করি, তারা কি এভাবে পলিথিন, প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করতেন? এখন তো প্লাস্টিকের বদলে অনেক ধরণের জিনিস তৈরি হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করতে পারি।
বুড়িগঙ্গার নীচে কয়েক ফুট শুধু প্লাস্টিকের স্তর আছে- এমনটা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার কয়েকটি খাল উদ্ধার করে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি খাল আছে কেরাণীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল নামে পরিচিত। অনেক টাকায় খাল উদ্ধার করতে হবে দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, আগে খালটি সরেজমিন দেখে পরে ফাইল স্বাক্ষর করবো। গিয়ে দেখলাম খালের অস্তিত্ব নেই। এটাকে প্লাস্টিকের খাল বলা যায়। বুড়িগঙ্গা খননের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে কমপক্ষে পাঁচ ফুট প্লাস্টিকের স্তর। এগুলো তোলার যন্ত্র নেই। বিআইডব্লিউটএ একটি যন্ত্র আনার চেষ্টা করছে। নভেম্বরে হয়তো আসবে। কিন্তু এত প্লাস্টিক উঠিয়ে কোথায় রাখবো?
জুস খাওয়ায় সাধারণত ব্যবহার হওয়া স্ট্র-এর উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই থেকে আমরা এর উৎপাদন বন্ধে কাজ করতে চাই। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ তৈরি করে সুলভমূল্যে গ্রাহককে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ সুপার শপে গিয়ে অনেকে বেশি দাম দিয়ে একটি ব্যাগ কিনতে চান না।
সরকারি অনেক দফতরে এখন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে আসছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটাও কিন্তু এক ধরণের সফলতা। সরকারি দফতরগুলোর বাইরেও অনেক জায়গায় এসব প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে আসছে। সুপার শপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।’
প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন ও সেরা চর্চার প্রসার’ শীর্ষক এই কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউট, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, ও রেড অরেঞ্জ লিমিটেড। এতে অংশ নেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাতের অংশীজনরা। যারা কমিউনিটি-ভিত্তিক, উদ্ভাবনী প্লাস্টিক বর্জ্য সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কর্মশালা বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউ এন আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) গেইল মাটিন। এছাড়াও বক্তব্য দেন ইউ এন ও পি এস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরন, বাংলাদেশ প্লিজ প্রকল্পের রূপান্তকারী ধারণা তুলে ধরেন রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার এইচ. এ. এম. ফাইম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আই এম এস অধ্যাপক আলমগীর, ব্র্যাকের ম্যানেজার রুকসার সুলতানা, বিপিসিএলের সিইও ও এমডি খাদেম মাহমুদ ইউসুফ।
ভোরের আকাশ/এসআই