ছবি- সংগৃহীত
রোদে-ভেজা একটা বিকেল। কমলাপুরের স্টেডিয়ামে তখনো দর্শকদের উল্লাস থামেনি। বাংলাদেশের মেয়েরা ইতিহাস গড়ে ফেলেছে- প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সমানভাবে উচ্ছ্বাস ভারতের নারী দলেও। নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার এই উত্থান যেন নতুন সময়ের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সাফল্যের নতুন অধ্যায়
এই প্রথমবারের মতো ৭টি সাফ দেশের সবাই- বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অংশ নেয় ফিফা নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। আর সেই অংশগ্রহণ থেকেই জন্ম নেয় বিরল সাফল্য। বাংলাদেশ ও ভারত নিশ্চিত করে ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা। ২৭ বছর পর আবার দুটি দক্ষিণ এশীয় দেশ খেলবে এই টুর্নামেন্টে - যা ২০২৭ ফিফা নারী বিশ্বকাপ (ব্রাজিল) বাছাইয়ের প্রথম ধাপ হিসেবেও কাজ করবে। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে ভারত ও নেপাল অংশ নিয়েছিল এশিয়ান কাপে।

ফিফার নারী ফুটবলের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সায়মন টোসেলি তাই একে বলছেন, ‘ঐতিহাসিক অর্জন” “সঠিক পরিকল্পনা ও ফিফা প্রোগ্রামের সহায়তা পেলে সাফ অঞ্চলের নারী ফুটবল কোথায় পৌঁছাতে পারে, এটাই তার প্রমাণ।”
বাংলাদেশ: কখনো জয় না পাওয়া দল থেকে অপরাজিত কোয়ালিফায়ার
বাংলাদেশের গল্পটি আরও অনুপ্রেরণার। একসময় যারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে জয় খুঁজতেও হিমশিম খেত, সেই মেয়েরাই এখন অপরাজিত থেকে পৌঁছে গেছে এশিয়ার অভিজাত প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো। বাফুফের সাম্প্রতিক উদ্যোগ, তৃণমূল উন্নয়ন ও ফিফার সহায়তা- সব মিলেই যেন বদলে যাচ্ছে মেয়েদের ফুটবলের মানচিত্র। বাফুফে চালু করেছে দেশের প্রথম নারীবিষয়ক কৌশলগত পরিকল্পনা ‘এমপাওয়ার হার: ২০২৪-২০২৭’।

বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়াল বললেন, “ফিফার আর্থিক ও কাঠামোগত সহায়তাই আমাদের বেঙ্গল টাইগ্রেসদের এই ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দিয়েছে। দেশে নারী ফুটবলের সচেতনতা ও সমর্থন বেড়েছে, যার প্রভাব সরাসরি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে পড়েছে।”
ভারত: অবরুদ্ধ অতীত ভেঙে শক্ত প্রত্যাবর্তন
২৩ বছর পর মাঠের লড়াইয়ে কোয়ালিফাই করে ভারতীয় নারী দলও। ২০২২ সালে স্বাগতিক হয়েও কোভিডের কারণে টুর্নামেন্ট থেকে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে দলটি। সেই হতাশা আজ শক্তিতে রূপ নিয়েছে। এআইএফএফ দীর্ঘদিন ধরে ফিফার সঙ্গে কাজ করছে ‘ফিফা ফরোয়ার্ড প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে। ২০১৬ সালে মাত্র ২৫ ক্লাব নিয়ে শুরু হওয়া ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ এখন ১০৪ ক্লাব আর ১২০০-এর বেশি খেলোয়াড় নিয়ে চলছে। ‘ভিশন ৪৭’ প্রকল্পের লক্ষ্য-২০৪৭ সালের মধ্যে এশিয়ার শীর্ষ চার নারীবান্ধব ফুটবল জাতির একটি হওয়া।
এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেন- “ফিফার সহায়তা ছাড়া নারী ফুটবলের উন্নয়ন এতদূর এগোতে পারত না। ২৮ বছর পর আমাদের সিনিয়র দল আবার এশিয়ান কাপে উঠেছে- এটা অসাধারণ। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের পর মেয়েদের ফুটবলে নিবন্ধন ২৩২ শতাংশ বেড়েছে।”
উন্নয়ন শুধু মাঠে নয়- সংগঠন ও সমাজের ভরসা বাড়ছে
দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবল এখন শুধু মাঠের গোল বা জার্সির রঙে সীমাবদ্ধ নয়। ফেডারেশনগুলোর সংগঠনগত প্রস্তুতি, ফিফার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন- সব মিলেই নারী খেলোয়াড়দের সামনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ ও ভারত সাফল্যের বেশি কিছু
২০২৬ সালের এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ ও ভারতের অংশ নেওয়া কেবল একটি টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়া নয় এটা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা। এক দীর্ঘ যাত্রার ফল, এক অঞ্চলের স্বপ্নপূরণ, এক নতুন ভবিষ্যতের দরজা। নারী ফুটবল এখন আর আড়ালে নয়- এবার আলোতেই, সামনে আরও দূরন্ত।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
রোদে-ভেজা একটা বিকেল। কমলাপুরের স্টেডিয়ামে তখনো দর্শকদের উল্লাস থামেনি। বাংলাদেশের মেয়েরা ইতিহাস গড়ে ফেলেছে- প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সমানভাবে উচ্ছ্বাস ভারতের নারী দলেও। নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার এই উত্থান যেন নতুন সময়ের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে।দক্ষিণ এশিয়ার সাফল্যের নতুন অধ্যায়এই প্রথমবারের মতো ৭টি সাফ দেশের সবাই- বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অংশ নেয় ফিফা নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। আর সেই অংশগ্রহণ থেকেই জন্ম নেয় বিরল সাফল্য। বাংলাদেশ ও ভারত নিশ্চিত করে ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা। ২৭ বছর পর আবার দুটি দক্ষিণ এশীয় দেশ খেলবে এই টুর্নামেন্টে - যা ২০২৭ ফিফা নারী বিশ্বকাপ (ব্রাজিল) বাছাইয়ের প্রথম ধাপ হিসেবেও কাজ করবে। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে ভারত ও নেপাল অংশ নিয়েছিল এশিয়ান কাপে।ফিফার নারী ফুটবলের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সায়মন টোসেলি তাই একে বলছেন, ‘ঐতিহাসিক অর্জন” “সঠিক পরিকল্পনা ও ফিফা প্রোগ্রামের সহায়তা পেলে সাফ অঞ্চলের নারী ফুটবল কোথায় পৌঁছাতে পারে, এটাই তার প্রমাণ।”বাংলাদেশ: কখনো জয় না পাওয়া দল থেকে অপরাজিত কোয়ালিফায়ারবাংলাদেশের গল্পটি আরও অনুপ্রেরণার। একসময় যারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে জয় খুঁজতেও হিমশিম খেত, সেই মেয়েরাই এখন অপরাজিত থেকে পৌঁছে গেছে এশিয়ার অভিজাত প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো। বাফুফের সাম্প্রতিক উদ্যোগ, তৃণমূল উন্নয়ন ও ফিফার সহায়তা- সব মিলেই যেন বদলে যাচ্ছে মেয়েদের ফুটবলের মানচিত্র। বাফুফে চালু করেছে দেশের প্রথম নারীবিষয়ক কৌশলগত পরিকল্পনা ‘এমপাওয়ার হার: ২০২৪-২০২৭’।বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়াল বললেন, “ফিফার আর্থিক ও কাঠামোগত সহায়তাই আমাদের বেঙ্গল টাইগ্রেসদের এই ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দিয়েছে। দেশে নারী ফুটবলের সচেতনতা ও সমর্থন বেড়েছে, যার প্রভাব সরাসরি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে পড়েছে।”ভারত: অবরুদ্ধ অতীত ভেঙে শক্ত প্রত্যাবর্তন২৩ বছর পর মাঠের লড়াইয়ে কোয়ালিফাই করে ভারতীয় নারী দলও। ২০২২ সালে স্বাগতিক হয়েও কোভিডের কারণে টুর্নামেন্ট থেকে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে দলটি। সেই হতাশা আজ শক্তিতে রূপ নিয়েছে। এআইএফএফ দীর্ঘদিন ধরে ফিফার সঙ্গে কাজ করছে ‘ফিফা ফরোয়ার্ড প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে। ২০১৬ সালে মাত্র ২৫ ক্লাব নিয়ে শুরু হওয়া ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ এখন ১০৪ ক্লাব আর ১২০০-এর বেশি খেলোয়াড় নিয়ে চলছে। ‘ভিশন ৪৭’ প্রকল্পের লক্ষ্য-২০৪৭ সালের মধ্যে এশিয়ার শীর্ষ চার নারীবান্ধব ফুটবল জাতির একটি হওয়া।এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেন- “ফিফার সহায়তা ছাড়া নারী ফুটবলের উন্নয়ন এতদূর এগোতে পারত না। ২৮ বছর পর আমাদের সিনিয়র দল আবার এশিয়ান কাপে উঠেছে- এটা অসাধারণ। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের পর মেয়েদের ফুটবলে নিবন্ধন ২৩২ শতাংশ বেড়েছে।”উন্নয়ন শুধু মাঠে নয়- সংগঠন ও সমাজের ভরসা বাড়ছেদক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবল এখন শুধু মাঠের গোল বা জার্সির রঙে সীমাবদ্ধ নয়। ফেডারেশনগুলোর সংগঠনগত প্রস্তুতি, ফিফার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন- সব মিলেই নারী খেলোয়াড়দের সামনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ ও ভারত সাফল্যের বেশি কিছু২০২৬ সালের এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ ও ভারতের অংশ নেওয়া কেবল একটি টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়া নয় এটা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা। এক দীর্ঘ যাত্রার ফল, এক অঞ্চলের স্বপ্নপূরণ, এক নতুন ভবিষ্যতের দরজা। নারী ফুটবল এখন আর আড়ালে নয়- এবার আলোতেই, সামনে আরও দূরন্ত।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিপিএলের এবারের আসর শুরু হওয়ার আগেই নাটকীয়তা যেন থামছেই না। তিন দফা পেছানোর পর ১২তম আসরের নিলাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ নভেম্বর। প্লেয়ার্স ড্রাফট বাদ দিয়ে এবার প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হবে ‘অকশন’। আর ঠিক তার আগ মুহূর্তেই যোগ হলো নতুন উত্তাপ—বিপিএলে যুক্ত হলো নোয়াখালী এক্সপ্রেস নামের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি।গতকাল রাতেই গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, দেশ ট্রাভেলসের মালিকানায় নোয়াখালী এক্সপ্রেস বিপিএলের দল হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। দলটির এক কর্মকর্তা জানান, ‘রাতেই মেইলে জানানো হয়েছে দল নিশ্চিতের খবর। আজ বাকি সব আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত হবে।সুতরাং আসন্ন আসরে ৬টি দল নিয়ে ২৬ ডিসেম্বর (সম্ভাব্য) মাঠে গড়াতে যাচ্ছে বিপিএলের ১২তম আসর। ফাইনাল হতে পারে ২৪ জানুয়ারি।প্রসঙ্গত, বসুন্ধরা গ্রুপের টগি স্পোর্টস মালিকানা পেয়েছে রংপুর রাইডার্সের। চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা দেওয়া হয়েছে ট্রায়াঙ্গাল সার্ভিসকে। এ ছাড়া নাবিল গ্রুপ রাজশাহী, ক্রিকেট উইথ সামি সিলেট ও চ্যাম্পিয়ন স্পোর্টস (রিমার্ক-হারল্যান) পেয়েছে ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা।বিপিএলের ছয় দলের নাম চূড়ান্তরংপুর রাইডার্স — টগি স্পোর্টস (বসুন্ধরা গ্রুপ)ঢাকা ক্যাপিটালস — চ্যাম্পিয়ন স্পোর্টস (রিমার্ক-হারল্যান)**সিলেট টাইটান্স — ক্রিকেট উইথ সামিরাজশাহী ওয়ারিয়র্স —নাবিল গ্রুপচিটাগং রয়েলস — ট্রায়াঙ্গাল সার্ভিসনোয়াখালী এক্সপ্রেস — দেশ ট্রাভেলসবিপিএলে নতুন দল যোগ হওয়ায় সমর্থকদের উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে নোয়াখালীবাসী প্রথমবারের মতো নিজেদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে পাবেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।ভোরের আকাশ/তা.কা
রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে নাটকীয় সুপার ওভারে জিতে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। গতকাল শিরোপা নির্ধারণী মহারণেও টাই করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান 'এ' দল। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে বাংলাদেশের দেওয়া ৭ রানের লক্ষ্য ২ বল হাতে রেখে জিতে সর্বোচ্চ তৃতীয়বার শিরোপা জিতল পাকিস্তান।রোববার (২৩ নভেম্বর) কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে বোলাররা জয়ের ভিত গড়ে দিলেও মূলত ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলায় আগে ব্যাট করতে নেমে ইরফান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানকে মাত্র ১২৫ রানে আটকে দেন রিপন মন্ডল, রাকিবুল হাসানরা। ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর রিপন-সাকলাইনদের কল্যাণে বাংলাদেশও সমান ১২৫ রান করে।বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনালের মতো ফাইনালও গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে প্রথম বলে হাবিবুর রহমান সোহান এক রান নেওয়ার পর স্ট্রাইকে যান আব্দুল গাফফার সাকলাইন। দ্বিতীয় বলেই তিনি আউট হয়ে যান। এরপর পাক পেসার আহমেদ দানিয়াল ওয়াইড এবং বাই চার দিয়ে বসেন। জিসান প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ আর কোনো রান যোগ করতে পারেনি। ফলে তাদের পুঁজি দাঁড়ায় স্রেফ ৬ রান।সুপার ওভারের প্রথম দুটি বলই ইয়র্কার করেছিলেন রিপন। তবে দু’বারই সিঙ্গেল রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। একইভাবে তৃতীয় বলটি ছাড়তে গিয়ে ফুল টস দিয়ে বসেন ডানহাতি এই পেসার। যা কাজে লাগিয়ে স্কয়ার লেগে সাদ মাসুদ চার আদায় করে নেন। পরের বলে সিঙ্গেল রান নিয়েই মাতেন বিজয়োল্লাসে। আকবর আলির দলকে রানে হারিয়ে রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান 'এ' দল। ইমার্জিং দলের হিসাবে এটি তাদের সর্বোচ্চ তৃতীয় এশিয়া কাপের শিরোপা।এর আগে প্রথম ছয় আসরে টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ইমার্জিং এশিয়া কাপ। যার প্রথম চার আসরে প্রতিযোগী দেশগুলোর অনূর্ধ্ব-২৩ দল অংশ নেয়। ২০২৩ আসর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বার খেলেছে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের 'এ' দল এবং সহযোগী দেশের জাতীয় দল। এবার নাম বদলে টুর্নামেন্টটিকে বলা হচ্ছে 'এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস চ্যাম্পিয়নশিপ'।এর আগে ২০১৯ আসরে প্রথমবার ফাইনালে উঠে পাকিস্তান 'এ' দলের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ 'এ' দল। আরও একবার এই টুর্নামেন্টে একই প্রতিপক্ষের কাছেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হলো। রিপন মন্ডল ও রাকিবুল হাসানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে মাত্র ১২৫ রানে আটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ভিতে দাঁড়িয়েও ভেঙে পড়ে জুনিয়র টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ। ১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় যথারীতি আগ্রাসী শুরু করেছিলেন ওপেনার হাবিবুর রহমান সোহান। তাতে প্রথম ধাক্কাটা লাগে আরেক ওপেনার জিসান আলম ব্যক্তিগত ৬ রানে এলবিডব্লিউ হলে। তবুও স্বভাবসুলভ ব্যাটিং বদলাননি সোহান। তবে টানা বিলাসী শট খেলতে যাওয়ার চেষ্টায় মাশুল গুনতে হলো ডানহাতি এই ব্যাটারকে। পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন স্কয়ার লেগে। ১৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ রানে থামলেন সোহান।১২ রানের ব্যবধানে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, আকবর ও ইয়াসির আলি রাব্বি আউট হলে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪৮/৫। ৫৩ রানের মাথায় পরপর ফেরেন মাহফুজ রাব্বি ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। কিছুক্ষণ লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রানে এসএম মেহরব আউট হলে ৯০ রানে বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারায়। তখনই তাদের হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে রাকিবুল-সাকলাইন-রিপনরা সেই ম্যাচটিকে শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে নিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখেন। রাকিবুল ২৪ রানে ফিরলেও সাকলাইন ১৬ ও রিপন ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে সুফিয়ান মুকিম ১১ রানে ৩ উইকেটের দুর্দান্ত স্পেল করেছেন। ২টি করে উইকেট নেন দানিয়াল ও আরাফাত মিনহাস। এর আগে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন সাদ মাসুদ। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম আশা জাগিয়ে রিপন মন্ডল ৩ ও রাকিবুল নেন ২ উইকেট।ভোরের আকাশ/মো.আ.
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে যেসব দিন লাল অক্ষরে লেখা থাকে, আজ ছিল তেমনই একটি দিন। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এক পরিচিত আবেগের জায়গা; কখনো হতাশা, আবার কখনো বন্য উচ্ছ্বাসে ডুবে থাকে এই মাঠ। তবে আজ ছিল উজ্জ্বল আনন্দের দিন যে দিনে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার, পরিশ্রমের আরেক নাম মুশফিকুর রহিম খেললেন তার শততম টেস্ট ম্যাচ। শততম টেস্ট শব্দ দুটি শুধু সংখ্যা নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিক্রমার ইতিহাস।যে দেশে টেস্ট ক্রিকেটের সূচনা হয়েছিল ২০০০ সালে, সেখানে একজন ব্যাটারের শততম ম্যাচে নামা মানে এক যাত্রার সীমানা ছোঁয়া। আর সেই বিশেষ দিনে বাংলাদেশ উপহার দিল এক মহাজয় ২১৭ রানের উদ্বেলিত সাফল্য, যা শুধু একটি ম্যাচ নয়, বরং মুশফিকের দুই দশকের পরিশ্রম, নিবেদন আর স্থৈর্যকে সম্মান জানানোর নিখুঁত উপায় হয়ে উঠল। একই সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তর দল সিলমোহর মেরে নিল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। আর দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত হোয়াইটওয়াশ হলো সফরকারী আয়ারল্যান্ড।মুশফিকের শততম টেস্টের কথা ঘোষণার পর থেকেই মিরপুরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ঝুলেছিল মুশফিকের বড় বড় ব্যানার, মি: ডিপেন্ডেবল, ১০০ টেস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। মিরপুরের গেটে প্রবেশ করলেই ভেসে আসছিল শিশুর মুখে মুশফিক-স্তুতি ‘মুশফিক খেলবে আজ, বাংলাদেশ জিতবেই!ডিয়ামের কর্মীরা পর্যন্ত বলছিলেন মুশফিকের শততম টেস্টে যেন কিছু বিশেষ হয়। আর সত্যিই কিছু বিশেষ হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের ওপর প্রথম থেকেই চাপে রাখে। টপ অর্ডার কিছুটা নড়বড়ে হলেও শৃঙ্খলিত ব্যাটিংয়ে মুশফিক ও লিটন দাস দলকে গড়ে দেন শক্ত ভিত।মুশফিকের ব্যাটিং সবসময়ই দায়িত্বশীল। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হলো না। ধীরে শুরু করে তিনি এগোতে লাগলেন কচ্ছপের মতো স্থিরতায়, আর শট খেলতে লাগলেন উচ্চমানের ব্যাটিং শিল্পীসুলভ শান্ত ভঙ্গিতে। শততম টেস্টে তিনি যেন নিজের পুরো ক্যারিয়ারের মিশ্রণ দেখিয়ে দিলেন ধৈর্য, টেকনিক, বিচারবুদ্ধি। লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ তোলে ৪৭৬ রান যা মিরপুরে প্রায় অপরাজেয় টোটাল।জিততে হলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ প্রথম থেকেই পেতে হতো। সেটি এনে দিলেন তাইজুল ইসলাম। তিনি একাই ভেঙে দেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। শ্লথ পিচে তিনি যেন ভিন্ন মাত্রায় ছিলেন লাইন, লেংথ আর টার্ন আইরিশরা ২৬৫ রানে থেমে গেলে বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় বিশাল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ব্যাটিংয়ে ছিল বাংলাদেশের পূর্ণ আধিপত্য। সাদমান ৭৮, জয় ৬০, মুমিনুল ৮৭, আর মুশফিক শততম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩, অথচ অপরাজিত। ৪ উইকেটে ২৯৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ৫০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করা যে সহজ নয় তা শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।চতুর্থ দিনের শেষে আইরিশদের স্কোর ছিল ১৭৬/৬। বাংলাদেশ জয়ের গন্ধ পেয়ে খাবি খাচ্ছিল মাঠে। গ্যালারিতে ঢাক-ঢোল, পতাকা ও উৎসবমুখর পরিবেশ শুরু হয়ে গিয়েছিল তখনই। কিন্তু ক্রিকেটের নাম যদি হয় ‘গ্লোরিয়াস আনসার্টেনটি’, তবে পরদিন ঘটল ঠিক সেইরকম কিছু। বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার জন্য দরকার ছিল মাত্র ৪ উইকেট। কিন্তু ক্যাম্ফার পরিস্থিতি বদলে দিলেন তার অবিশ্বাস্য ধৈর্যে। ২৫৯ বলের ‘অলৌকিক’ প্রতিরোধ, ২৫৯ বল ৭১ রান এক প্রান্ত আগলে থাকা। এই ধরনের ইনিংস সাধারণত দেখা যায় বড় দলের হয়ে খেলা পরীক্ষিত ব্যাটারদের কাছ থেকে।কিন্তু ক্যাম্ফার দেখালেন ইস্পাত-কঠিন মানসিকতা। তার সঙ্গে গ্যাভিন হোয়ের ৩৭ রানের লড়াই আয়ারল্যান্ডকে দীর্ঘায়িত করে। মিরপুরের গ্যালারিতে তখনও কেউ কেউ বলতে শুরু করে, এ যাত্রায় হয়তো ড্র হবে! ক্যাম্ফারকে একা রেখে অন্য প্রান্তে চাপ বাড়িয়ে যেতে থাকেন হাসান মুরাদ। তাইজুলের সঙ্গে মিলেমিশে দুজন মিলে দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি সময়েই আয়ারল্যান্ডকে ভেঙে ফেলেন। শেষ ৪ উইকেট যেন মুহূর্তেই তুলে নিলেন তারা। ১১৩.৩ ওভারে আয়ারল্যান্ড থেমে গেল ২৯১ রানে।স্পিনের মুগ্ধকর নৈপুণ্যই বাংলাদেশের জয় এনে দিল শেষ পর্যন্ত। ম্যাচ শেষে আবেগঘন দৃশ্য মুশফিককে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। শেষ উইকেট পড়তেই সতীর্থরা দৌড়ে গিয়ে মুশফিককে ঘিরে ধরলেন। মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকের মুখে ছিল স্থির হাসি সময় যেন স্থির হয়ে গিয়েছিল এক মুহূর্তের জন্য। ক্যামেরায় ধরা পড়ল সতীর্থদের কাঁধে তুলে নেওয়া, দর্শকদের ‘মুশফিক! মুশফিক!’ ধ্বনি, ড্রেসিংরুমের বারান্দায় খেলোয়াড়দের করতালির ঝড়। এ যেন শুধু এক ক্রিকেটারকে সম্মান জানানো নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রিকেট অধ্যায়ের এক উজ্জ্বল অধ্যায়কে উদযাপন।বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যারা দেশের হয়ে দীর্ঘক্ষণ নিরলস সেবা দিয়েছেন তাদের তালিকায় মুশফিক অন্যতম শীর্ষে। শততম টেস্ট মানে ২০ বছরের বেশি পেশাদার ক্রিকেট, হাজারো পরীক্ষা, বিপর্যয়ের মাঝেও দলের ত্রাতা, সবচেয়ে কঠিন সময়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব এবং একজন পেশাদারের সবটুকু। এই শততম টেস্টও তার সাক্ষী হয়ে থাকবে। এই সিরিজ জয় শুধু জয় নয়, বরং দলের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, নতুনদের আত্মবিশ্বাস, ব্যাটিং গভীরতা প্রমাণ, স্পিনারদের আধিপত্য, আর শান্তর নেতৃত্বে কৌশলগত স্থিরতা। এই সাফল্য ভবিষ্যতের বড় সিরিজের আগেই বাংলাদেশকে এনে দিল বাড়তি শক্তি।মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এক পুনর্জাগরণের গল্প। এই জয় যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক মিষ্টি বাতাস। একই সঙ্গে ক্রিকেটার, দর্শক ও দেশের ক্রিকেটভক্তদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে রইল। শততম টেস্টে মুশফিক ইতিহাস, পরিশ্রম ও জয়ের প্রতীক। ভোরের আকাশ/এসএইচ