পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:০০ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
এক সময় বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হতো মাল্টা। কিন্তু বর্তমানে ফলটি আর পাহাড়ে সীমাবদ্ধ নেই, দেশের সমতল ভূমিতেও মাল্টার চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পিরোজপুরের চাষিরা। উৎপাদন খরচ কম এবং স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় হওয়ায় পিরোজপুর জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে এ ফলটি।
বছরের এই সময়টায় সবাই পিরোজপুরের রসালো মাল্টা ফলগুলোর অপেক্ষায় থাকে। সারা দেশে এই মৌসুমি মাল্টার চাহিদার কারণে পিরোজপুরে গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে মাল্টা চাষ।
গত কয়েক বছর ধরে পিরোজপুরের মাল্টা চাষিরা ভালো লাভ পেয়ে দিনদিন এ চাষের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ বছরও মাল্টার বাম্পার ফলনে আশায় বুক বেঁধেছে চাষিরা। কৃষি বিভাগের আশা, এ বছর পিরোজপুরে প্রায় ৩১ কোটি টাকার মাল্টা ব্যবসা হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়েছে সদর উপজেলা ও নাজিরপুর উপজেলায়। এ বছর ৬ হাজার ২ শত মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখানে চাষ করা হয় বারি মাল্টা-১, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত পয়সা মাল্টা নামে। ফল দেখতে সবুজ। তবে পরিপক্ব অবস্থা কিছুদিন রেখে দিলে কমলা রঙ ধারণ করে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক সরাসরি এ মাল্টা চাষে জড়িত।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, আমাদের এ বছর ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২শ মেট্রিক টন। আশা করা যায় সেখানে উন্নীত হতে পারবো। পিরোজপুরের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকদের আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি।
এর মধ্যে মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহে মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে বাজারে ব্যাপক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে পিরোজপুরের মাল্টা। পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় গাছ থেকে মাল্টা আহরণ, বাছাই এবং প্যাকেট করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
নাজিরপুরের দক্ষিণ জয়পুর গ্রামের চাষি শুসান্ত কুমার জানান, শখের বশে আমার মাল্টা চাষ করা। আমার ৫ বিঘা জমির একটি মাল্টা বাগান আছে। প্রতিটি গাছ থেকেই এবার ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর একটি গাছ থেকে ২ থেকে ৩ মণের বেশি মাল্টা পাওয়া যায়নি। একই গাছ থেকে এ বছর ৪ থেকে ৬ মণ মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফলন ভালো পেলেও বাজারে মাল্টার দাম কম হওয়ায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। দাম গত বছরের তুলনায় কম। তবে, ফলন ভালো হওয়ায় দাম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, ক্ষণস্থায়ী ফলনের জন্য মাল্টার প্রতি সবার আগ্রহ থাকে, আর পিরোজপুরে আগস্টের শেষের দিকে মাল্টা পরিপক্ব হতে শুরু হয়েছে। এ মাল্টা পাওয়া যায় সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বর শেষ পর্যন্ত। এক সময় শুধু শখের মাল্টা উৎপাদন হলেও, চাহিদা বাড়ায় এখন পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে মাল্টা চাষ অনেক বেড়েছে। এতে করে মাল্টা চাষিরা বাণিজ্যিক ভাবে সফল হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, পিরোজপুরে উৎপাদিত মাল্টার পুষ্টি ও গুণগত মান আমদানিকৃত মাল্টার চেয়েও বেশি। এছাড়া আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ অনুক‚লে থাকায় কৃষি নির্ভর এ জেলায় রয়েছে মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা। মাল্টা একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিত।
পিরোজপুরের মাটি প্রধানত এটেল, দোআঁশ এবং বেলে ধরনের, যা কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুক‚ল আবহাওয়া মাল্টা চাষে সহায়তা করে। এ কারণে জেলার মাল্টা খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়।
ভোরের আকাশ/মো.আ.