দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৩:৩০ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়কের গোপালগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকা এখন মৃত্যুর হটস্পট। তিনটি নথিভুক্ত মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত ও আহতের ভয়াবহ অনুপাত (৩:১) নির্দেশ করে যে এই করিডোরটি আর সাধারণ সড়ক নয় এটি একটি প্রাণঘাতী ব্ল্যাক স্পট।
বিশ্লেষণ বলেছে, দ্রুতগামী হাইওয়ে ট্র্যাফিকের শিকার হচ্ছেন মূলত স্থানীয় দুর্বল জনগণ এবং মোটরসাইকেল আরোহীরা।
নথিভুক্ত ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে: আহতের তুলনায় নিহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এর অর্থ সংঘর্ষগুলো এত চরম প্রকৃতির ছিল যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের প্রোফাইলে প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মোটরসাইকেল চালকরা (২ জন)। এছাড়াও, একজন স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তির প্রাণহানি প্রমাণ করে যে বাজারের প্রয়োজনে সড়ক ব্যবহারকারী দুই পাশের গ্রামের কয়েক হাজার স্থানীয় জনগণও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্যই দায়ী অজ্ঞাত ভারী যানবাহন, যেমন দ্রুতগামী ট্রাক ও বাস। বাজারের কাছে গতি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ধীর গতির স্থানীয় যানের সাথে দ্রুতগামী হাইওয়ে ট্র্যাফিকের সংঘর্ষই বারবার প্রাণহানির প্রধান কারণ।
গত ১৯ আগস্ট, ২০২৫ নাজমুল ইসলাম (৩৫) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন দুর্ঘটনাটি রাত সাড়ে ৭টায় ঘটেছিল। ফ্রান্সিস মূর্মূ ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট এ বাজার রোডে নিহত হন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও দিনের বেলায় দুর্ঘটনা বেশি হয়, কিন্তু রাতের বেলায় ঘটা দুর্ঘটনাই প্রায়শই মারাত্মক প্রকৃতির হয়। বাজারের আশেপাশে আলোর দুর্বল ব্যবস্থা এবং উচ্চ গতির সংমিশ্রণ মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
বিশ্লেষণে জানা গেছে, দুটি বড় দুর্ঘটনার আহতের সঠিক সংখ্যা এখনো অজানা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোপালগঞ্জ বাজারের আহতের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই ১ জনের অনেক বেশি। সরকারি ডেটা ইন্টিগ্রেশন ছাড়া এই মানবিক ক্ষতির সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা অসম্ভব।
বারবার প্রাণহানি সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির (বিআরটিএ ও পুলিশ) চলমান মোবাইল কোর্ট অভিযানগুলো এই বাজারের সংবেদনশীল অংশে গতি নিয়ন্ত্রণ ও ট্র্যাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ : গোপালগঞ্জ বাজারকে অবিলম্বে একটি আনুষ্ঠানিক ব্ল্যাক স্পট হিসেবে ঘোষণা করে জরুরি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। বাজারের ৫০০ মিটার আগে থেকে গতিসীমা ৪০ কিমি/ঘণ্টায় নামানো, র্যাম্বল স্ট্রিপ ও গতি পরিমাপক ক্যামেরা স্থাপন করা।
হাইওয়ে ও বাজারের স্থানীয় ট্র্যাফিকের মিশ্রণ এড়াতে বাজারের সংলগ্ন অংশে শারীরিক বিভাজক (গার্ড রেল) নির্মাণ করা। ঘটনা রোধ করতে হাইওয়েতে উচ্চ রেজোল্যুশনের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক করা।
কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া, গোপালগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সড়কপথটি দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে মারাত্মক মৃত্যুফাঁদ হিসেবেই থেকে যাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, আমাদের বাড়ি রাস্তার ওই পারে, রাস্তা পার হয়ে বাজার করতে গেলে রাস্তা পার হওয়াই যায় না, বিশেষ করে বাস ও ট্রাকগুলি দ্রুত গতিতে যাওয়া আসা করে, তা দেখেই ভয় লাগে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.