টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৩৬ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
টেকনাফে চলমান অপহরণ, চাঁদাবাজি, সীমান্ত সন্ত্রাস ও পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান এবং টেকনাফ-নাফ সীমান্তবর্তী পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ঘাঁটি স্থাপনের দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও যুবসমাজ। বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন। এতে কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল আংশিকভাবে বন্ধ থাকে।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্যে, গত কয়েক সপ্তাহে হ্নীলা, লেদা, বাহারছড়া, হোয়াইক্যংসহ সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, জেলে-চাষিদের ওপর হামলা, এমনকি সীমান্তে সশস্ত্র মহড়া এসব ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী রাতে পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে দিনের বেলায় নেমে এসে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসব ঘটনার কারণে কর্মজীবী মানুষ, শ্রমিক, জেলে, এমনকি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী বলেন, টেকনাফে প্রতিদিন অপহরণের ঘটনা ঘটছে, জেলে থেকে কৃষক কেউ নিরাপদ নয়। পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্যে আমাদের পরিবার-পরিজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী ঘাঁটি খুবই প্রয়োজন।
বিক্ষোভস্থলে শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে-
১. টেকনাফের পাহাড়ি অঞ্চলে যৌথ বাহিনীর বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান চালানো ।
২. আরাকান আর্মী সহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর আস্তানা উচ্ছেদ ও পাহাড়ে টহল জোরদার
জেলে ও সীমান্তবাসীর নিরাপত্তায়।
৩. নাফ নদী–সংলগ্ন পয়েন্টে নজরদারি ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি ।
৪. টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ।
৫. সাম্প্রতিক অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার, ভিকটিমদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা এবং বিচার নিশ্চিত করা ।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্লকেড তুলে নেন। তবে তারা জানিয়েছেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, টেকনাফে অপহরণ, চাঁদাবাজি আর গুলির শব্দ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বাড়ির মানুষ বাইরে গেলে ফিরবে কিনা তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। এই পরিস্থিতি কাটাতে সেনাবাহিনীর স্থায়ী উপস্থিতি জরুরি।
গত এক বছর ধরে টেকনাফে বিভিন্ন এলাকায় ২০০ অধিক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। জেলেরা অভিযোগ করেছেন, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরতে গেলে সশস্ত্র আরকান আর্মি নৌকা ঘিরে ধরে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর কারণে স্থানীয় বাসিন্দারাও প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরেক যুবক বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পাহাড়ে দিনের পর দিন অবস্থান করছে। গুলির শব্দ শোনাটা এখন নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের মতো সেনাবাহিনীরও নিয়মিত টহল প্রয়োজন।
স্থানীয়দের মতে, পর্যটননগরী কক্সবাজার-টেকনাফ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা বজায় থাকলে আগামী মৌসুমে পর্যটন ও বাণিজ্য কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে। সামাজিক নেতাদের দাবি, টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত, সমন্বিত ও কঠোর অভিযান দরকার।
ভোরের আকাশ/জাআ