সাগর তীরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘প্লাস্টিক দানব’
ফয়সাল রিয়াদ, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:০২ এএম
ছবি-ভোরের আকাশ
কক্সবাজারের সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা মিলেছে বিরল এক দানবের—এটি কোনো কল্পকথার চরিত্র নয়, সমুদ্র থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘প্লাস্টিক দানব’।
পরিবেশ ও সমুদ্রকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানাতে ব্যতিক্রমী এ ভাস্কর্য তৈরি করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সমুদ্রকে বাঁচাতে প্লাস্টিক দূষণ রোধের বিষয়ে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সৈকতে আসা লাখো পর্যটকের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিল্পীর হাতে তৈরি এ ভাস্কর্যের নকশা করেছেন শিল্পী আবীর কর্মকার। তিনি জানান, ভাস্কর্যটিতে প্রায় ৬ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক, সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে কাঠ, পেরেক এবং আঠাসহ আরও কিছু উপকরণ। শিল্পীদের দাবি, সমুদ্র থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক ব্যবহার করে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় “ওশান-প্লাস্টিক দানব”।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, গত চার মাসে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতজুড়ে অভিযান চালিয়ে সংগৃহীত হয়েছে অন্তত ৮০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। এর একটি অংশ দিয়েই নির্মিত হয়েছে সচেতনতামূলক এ ভাস্কর্য।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন,“বর্তমান সরকার প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে সরকারি ব্যয় কমেছে এবং জনগণের মাঝে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের ধারণা পৌঁছেছে। কক্সবাজারে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ছয় মাসব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ চালিয়ে যাব।”
ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের পর থেকেই ভিড় জমছে দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে। প্লাস্টিক দানবকে ঘিরে কৌতূহলী মানুষের উপচেপড়া ভিড়, কেউ আবার স্মারক হিসেবে তুলছেন সেলফি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে দানবটির ছবি।
এই ভাস্কর্য তিন মাস ধরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটিকে কেন্দ্র করে সৈকতে আয়োজন করা হবে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী পথনাটক, সংগীতানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিশাল প্লাস্টিক দানব প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে—এমনটাই মনে করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
ভোরের আকাশ/জাআ