মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫ ১১:২৫ এএম
শিবালয়ে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে কেয়ারটেকার গ্রেফতার
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে করিম (৪৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত ভোর রাতে সদর উপজেলার সেওতা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। করিম শিবালয় সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিবালয় উপজেলার একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে স্থানীয় একটি দোকানের সামনে একা অবস্থায় শিশুটিকে দেখতে পান করিম। পরে খিচুরি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে যান। পরদিন বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিশুটির পরিবার জানায়, মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত শিশুটিকে চারবার বলাৎকার করা হয়েছে। শারীরিকভাবে রক্তক্ষরণসহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির বাবা জানান, বাড়ি ফিরে ছেলের কান্নাকাটি ও অস্বাভাবিক আচরণে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে ছেলে বিস্তারিত ঘটনা জানালে প্রথমে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
শিশুটির বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে পাশবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
শিবালয় থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই আমরা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত করিমকে গ্রেফতার করেছি। শিশুটির বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে একটি ধর্ষণ মামলা রুজু করা হয়েছে। শিশুটির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য চিকিৎসা চলছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।’’
এ বিষয়ে শিশুটির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমরা ঘটনার কথা শুনে হতবাক হয়েছি। সে আমাদের স্কুলের মেধাবী ছাত্র। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার পাশে আছে এবং আমরা তার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করবো।’’
শিশু বলাৎকারে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও শাস্তি
বাংলাদেশে শিশু বলাৎকার বা যৌন নিপীড়নের ঘটনা দমন করতে আইন রয়েছে কঠোর। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, ‘অপ্রাকৃতিক যৌন মিলন’ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
এছাড়াও, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’-এর ৯(১) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং এতে তার মৃত্যু ঘটে, তাহলে দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং ন্যূনতম শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর শিশুর মৃত্যু না হলেও ধর্ষণের জন্য দোষী ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, দেশে শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আইন কঠোর হলেও বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় অনেকেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় না। তারা দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ