বাড়ছে পর্যটকের ভিড়
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৩:৪৬ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
বরগুনার পাথরঘাটায় বিস্তীর্ণ নদী ও জঙ্গলের সীমানাজুড়ে গড়ে ওঠা রুহিতার চর এখন দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির শান্ত-নির্জন সৌন্দর্য, চরাঞ্চলের বিস্তৃত খোলা মাঠ, লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ এবং ভোর-বিকেলের মনোরম আলো-ছায়া মিলিয়ে এই চর প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করছে। নদীর ধারে দাঁড়ালে মনে হয় প্রকৃতি যেন আপনাকে আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
ভোরবেলার হালকা কুয়াশা ভেদ করে সূর্যোদয় ওঠার মুহূর্তটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সূর্যের আলো নদীর জলে প্রতিফলিত হয়ে পুরো চরের ওপর সোনালি আভা তৈরি করে। আবার বিকেলবেলায় সূর্য যখন লাল আভায় ধীরে ধীরে অস্ত যায়, তখন চারপাশের বনাঞ্চল, নদী ও চর সবই দৃষ্টিনন্দন রূপ নেয়। এই দুই চিত্রই রুহিতার চরের সৌন্দর্যকে অন্যরকম করে তোলে।

পর্যটকেরা বলছেন, রুহিতার চর শুধু একটি ভ্রমণস্থল নয়; বরং প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগের একটি নিভৃত প্রান্তর। লাল কাঁকড়ার মুক্ত দৌড়, চরাঞ্চলের নির্জনতার মাঝেও পাখির কোলাহল, নদীর ওপর দিয়ে চলা বাতাস—সব মিলিয়ে এটি যেন ‘মিনি কুয়াকাটা’। যারা একবার আসছেন, তারা ফিরে যাওয়ার আগেই আবারো আসার পরিকল্পনা করে ফেলছেন।
চরের পাশেই বিহঙ্গদ্বীপ, যেখানে হরিণ, বানর, সজারু, শিয়াল, মেছো বাঘ ও উদবিড়ালসহ নানা বন্যপ্রাণীর বসবাস। পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে উড়াউড়ি দ্বীপটিকে আরও প্রাণবন্ত করে। এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে হরিণঘাটা ইকোপার্ক। ফলে রুহিতার চরে এলে এক সফরে তিনটি ভিন্ন প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব হয়। পর্যটকদের কাছে এটাই বড় আকর্ষণ।

তবে দর্শনার্থীদের কিছু অভিযোগও রয়েছে। অনেকে বলছেন, চরের ভেতরে কিছু স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল, ফলে পথ হারালে বা জরুরি অবস্থায় যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু পথ এখনো নিরাপদ নয় এবং পরিচ্ছন্নতার ঘাটতিও আছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ বদিউজ্জামান সাহেদ বলেন, “রুহিতার চর এমন একটি জায়গা যেখানে প্রকৃতিকে সবচেয়ে কাছ থেকে অনুভব করা যায়। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ বাড়লে এটি জাতীয় পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠবে।”
ভ্রমণপিপাসু এরফান আহমেদ সোয়েন বলেন, “প্রতিবার এখানে এসে মনে হয় নতুন কিছু দেখছি। প্রকৃতির এত কাছাকাছি থাকার অনুভূতি অন্য কোথাও পাইনি।”
রুহিতার চর ঘুরে আসা দর্শনার্থী ইসরাত জাহান সোনিয়া বলেন, “এখানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। এমন বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। মনে হয়েছে প্রকৃতি যেন আমাকে আপন করে নিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা জাকির মুন্সি জানান, “পর্যটকদের সুবিধা, নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। চরটিকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।”
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান রুহিতার চরের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, “চরটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের ক্যাম্প, চরের ভেতরে লাইটিং সুবিধা, নৌযান চলাচলের উন্নয়ন—এসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এসব কাজ সম্পন্ন হলে রুহিতার চর পর্যটন মানচিত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙা হবে।”
দিন দিন পর্যটকের ভিড় বাড়ছে, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে রুহিতার চরের পরিচিতিও। অপরূপ সৌন্দর্য, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও প্রকৃতির বিশুদ্ধ উপস্থিতি—সব মিলিয়ে চরটি এখন ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এক অপরিবর্তনীয় আকর্ষণ। যারা একবার আসেন, তারা স্মৃতি আর মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে যান।
ভোরের আকাশ/মো.আ.