বাজেটে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: কর্মশালায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। তবে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমান মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ, যা খুবই অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান উচ্চ রক্তচাপ সংকট মোকাবেলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী(১৮-১৯ মার্চ) “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এই দাবি জানানো হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যা বিভিন্ন ধরণের অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি এবং এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত রাখার বিষয়টিকেও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ এনামুল হক বলেন, “অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দকৃত বাজেটের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি অনিবার্য।”
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।”
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (উপসচিব) ডা. মোহাম্মদ শওকত হোসেন খান; কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী; বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: মারুফ হক খান; বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর ডেপুটি রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর ডা. তন্ময় সরকার, এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র পরিচালক মো. শাহেদুল আলম এবং কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
সংশ্লিষ্ট
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। ছুটিতে রোগীদের সুবিধার্থে আগামী শনিবার ( ২৯ মার্চ ) ও বুধবার (২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগ খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই দুই দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ ছাড়া প্রতিদিনই বিএমইউ হাসপাতালের ইনডোর ও জরুরি বিভাগ প্রচলিত নিয়মে খোলা থাকবে। হাসপাতালের জরুরি ল্যাব কার্যক্রম সেবাও চালু থাকবে।অন্যদিকে, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে ২৮, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১, ৩ ও ৪ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে ২৮ মার্চ শুক্রবার এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ৪ এপ্রিল শুক্রবার বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বন্ধের দিনগুলোতে শনিবার (২৯ মার্চ) থেকে বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ থাকবে।এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫-এর ঈদের জামাত ঈদের দিন সকাল ৮টায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম জনাব হাফেজ মাওলানা আব্দুল আহাদ।এতে আরও বলা হয়, আগামী ৫ এপ্রিল ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এদিনেই প্রচলিত নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো খোলা থাকবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। তবে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমান মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ, যা খুবই অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান উচ্চ রক্তচাপ সংকট মোকাবেলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী(১৮-১৯ মার্চ) “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এই দাবি জানানো হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যা বিভিন্ন ধরণের অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি এবং এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত রাখার বিষয়টিকেও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।কর্মশালায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ এনামুল হক বলেন, “অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দকৃত বাজেটের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি অনিবার্য।”জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।”কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (উপসচিব) ডা. মোহাম্মদ শওকত হোসেন খান; কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী; বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: মারুফ হক খান; বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর ডেপুটি রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর ডা. তন্ময় সরকার, এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র পরিচালক মো. শাহেদুল আলম এবং কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
শিপংকর শীল: ওষুধের দাম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এই জটিল বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না সাধারণ মানুষ। তবে একই ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারকারী রোগী ও তাদের স্বজনরা তা অনুধাবন করতে পারেন। গত কয়েক মাসেও ওষুধভেদে প্রায় ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধের দামের এই লাগামহীনতার জন্য উৎপাদক ও সবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক বিপণন চর্চা বা প্রোমোশনাল মার্কেটিং কার্যক্রমকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রোমোশনাল মার্কেটিংয়ের নামে ডাক্তারদের উপহার বা উৎকোচ দেয় কোম্পানিগুলো; যা কেটে নেওয়া হয় ক্রেতারই পকেট থেকে।স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান ওষুধ। রোগ নিরাময়ের মাধ্যম হিসেবে ওষুধের কোনো বিকল্প নেই। গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওষুধকে স্বাস্থ্য খাতের ছয়টি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের অন্যতম একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে ওষুধের প্রাপ্যতা হয়ে উঠেছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের অন্যতম নিয়ামক।স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এ সংক্রান্ত গবেষণা বলছে, দেশের মানুষের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ শুধু ওষুধের জন্য ব্যয় হয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে মোট ১০০ টাকা খরচ করলে তার মধ্যে ৬৫ টাকা খরচ হয় ওষুধ কিনতে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ওষুধের ওপর কতটা নির্ভরশীল। দেশে গ্যাস্ট্রিক তথা অ্যাসিডিটির সমস্যা নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। এছাড়া দেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। এরপরের বিক্রির তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে প্রেসার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সারজেল, প্যানটোনিক্স এবং ম্যাক্সপ্রো। এছাড়া প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপাও রয়েছে সর্বোচ্চ বিক্রিত ওষুধের তালিকায়।সংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েক মাসে দেশে ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ। স্বল্প আয়ের মানুষ বাড়তি মূল্যে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। ওষুধের দাম বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অসহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ছে বলেও অনেকেই মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম বাড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকদের মধ্যে চলা প্রোমোশনাল কার্যক্রমের নামে অনৈতিক বিপণন চর্চা। প্রোমোশনাল মার্কেটিংয়ের নামে ডাক্তারদের দেওয়া উৎকোচ বা উপহার কোনো কোম্পানিই নিজেদের পকেট থেকে দেয় না। ওষুধের দাম বাড়িয়ে সেই টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকেই আদায় করা হয়। ওষুধের অনৈতিক বিপণন চর্চা বন্ধ করা গেলে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে ওষুধের দাম অনেকটাই কমানো সম্ভব এবং কোম্পানির মার্কেটিং খরচ ১০ শতাংশে নামিয়া আনা সম্ভব।ওষুধের উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের বিশাল পার্থক্য : ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের সাধারণ তত্ত্ব হচ্ছে, কস্ট অব গুডস অর্থাৎ উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হবে। মার্কেটিং, প্রোমোশন এবং অন্যান্য খরচ আরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোম্পানির মুনাফা।ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের সারজেল নামে ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করে হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। সারজেল ২০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ৭ টাকা এবং সারজেল ৪০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ১১ টাকায় বাজারে পাওয়া যায়। ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের আরেকটি ওষুধ ম্যাক্সপ্রো উৎপাদন ও বিপণন করে রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। ম্যাক্সপ্রো ২০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ৭ টাকা এবং ম্যাক্সপ্রো ৪০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ১০ টাকা করে বাজারে পাওয়া যায়। ওষুধ কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ২০ মি. গ্রা. ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ক্যাপসুল এবং ট্যাবলেট কাঁচামালসহ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৭০ পয়সা। এর সঙ্গে এক্সিপিয়েন্ট (সহযোগী উপাদান), প্যাকেজিং, লেভেলিংসহ সর্বোচ্চ খরচ হয় দুই টাকা। প্রতি ৪০ মি. গ্রা. ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ কাঁচামাল, সহযোগী উপাদান, প্যাকেজিং, লেভেলিংসহ সব মিলে মোট প্রায় দুই টাকা ৭০ পয়সা খরচ হয়। অর্থাৎ উৎপাদন খরচের কয়েকগুণ বেশি দামে ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোসারটান পটাশিয়াম ১০০ মি.গ্রা. প্রতি ট্যাবলেটে উৎপাদনে খরচ হয় দশমিক শূন্য দশমিক ছয় পয়সা। সহযোগী কেমিক্যাল, প্যাকেজিং সব মিলে প্রতি ট্যাবলেটে ১ দশমিক ২৫ টাকার মতো খরচ হয়। এটা কোম্পানিভেদে বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রোমোশনাল খরচ।ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত মেটফরমিন ৫০০ মি.গ্রা. এবং ৮৫০ মি.গ্রা. আকারে বাজারে পাওয়া যায়। মেটফরমিন ৮৫০ মি.গ্রা. প্রতিটির উৎপাদন খরচ হয় ৫৫ পয়সা, এর সঙ্গে এক্সিপিয়েন্ট (সহযোগী উপাদান) যোগ করলে মোট খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ পয়সা। প্যাকেজিংসহ এই ওষুধে প্রায় এক টাকা খরচ হয়। এটি প্রতি পিস বিক্রি হয় ছয় টাকায়। প্রতিটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট উৎপাদনে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ পয়সা খরচ হয়। এটি বিক্রি করা হচ্ছে ১ দশমিক ২০ টাকায়, মার্কেটিং খরচ বাদে যা থাকে সেটাই লাভ। ওষুধ উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ওষুধের গায়ে যদি মূল্য ১০০ টাকা থাকে, সেখান থেকে সরকার ভ্যাট পায় ১৫ শতাংশ, ফার্মেসির লাভ ১৫ শতাংশ। বাকি ৭০ টাকার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচামালসহ উৎপাদন খরচ। আর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রোমোশনাল খরচ, বাকিটা কোম্পানির মুনাফা।ওষুধ শিল্প নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে ওষুধের বিপণন বাবদ টার্নওভারের ২৯ শতাংশের বেশি খরচ করছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু এই বিপণন প্রক্রিয়াটি খুবই অস্বচ্ছ। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রধানত ডাক্তারদের উপঢৌকন হিসেবে এই ২৯ শতাংশের বেশির ভাগ ব্যয় করে।বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, ওষুধের দাম বাড়ার একটি বড় কারণ কোম্পানিগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ মার্কেটিং বাবদ ব্যয় হয়ে যায়। এই মার্কেটিং খরচ কমানো গেলে ওষুধের দাম বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে অনেক কমানো যেত।এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাব্বির হায়দার বলেন, প্রোমোশনালের নামে চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপহার, টাকা-পয়সা দেওয়াসহ অনৈতিক সব ব্যয় ওষুধের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়। সেই মূল্য ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হয়। কোম্পানি অযৌক্তিক এসব ব্যয় কমালে ওষুধের মূল্য বেশ কমে আসবে।ওষুধের অনৈতিক বিপণন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, এটাকে আমরা বলি অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং। ওষুধের দাম যদি সরকারের প্রাইসিং ফর্মুলার ভিত্তিতে হয়, তাহলে কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। অতিরিক্ত মূল্য যখন নিতে পারবে না তখন ওষুধ কোম্পানির সারপ্লাস থেকেই অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিংয়ের খরচ বহন করতে হবে। তখন তারা এই অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং থেকে সরে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ডাক্তারদের যেমন নৈতিকতা মেনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া উচিত ঠিক তেমনি ওষুধ কোম্পানিগুলোরও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করা উচিত। যদি ওষুধ কোম্পানিগুলো নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করে এবং ডাক্তারদের কোনোরকম অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না দেয় কিংবা ডাক্তাররা না নেয়, তাহলে ওষুধের দাম অবশ্যই কমে আসতে পারে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ওষুধ কোম্পানির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রোমোশনালের জন্য অর্থ ব্যয় না করলে আমাদের ওষুধ চলবেই না। ডাক্তাররা আরও বেশি চায়। ডাক্তাররা যদি কোনো সুবিধা না নেয়, তাহলে ওষুধের দাম হয়তো কমবে। আমাদের কোম্পানি ডাক্তারদের কোনো অনৈতিক সুবিধা দেয় না, বড় বড় কোম্পানি যারা এই ধরনের সুবিধা দেয়, তাদের এই বিষয়ে প্রশ্ন করাই ভালো।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির এবং মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান। আগামী দুই বছর এ দায়িত্ব পালন করবেন তারা।শনিবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির ৫৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির ২০২৫-২০২৬ ও ২০২৬-২০২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবীর, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।২০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়াম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হায়দার হোসেন, সেনেভিয়া ফার্মা পিএলসির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও), এস এ রাব্বুর রেজা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (ভ্যাকসিন ডিভিশন) ভাইস-চেয়ারম্যান, হাসনিন মুক্তাদির, নিপ্রো জেএমআই ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মো. আবদুর রাজ্জাক, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান, এসিআই লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এম মহিবুজ্জামান, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান জনাব মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (কেমিক্যাল ডিভিশন) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. মিজানুর রহমান, দি একমি ল্যাবরেটরীজ লিমিটেডের পরিচালক, ফাহিম সিনহা, এরিস্টোফার্মা লিমিটেডের পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ হাসান, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (ইউনিট-২), ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফিদুল হক, মিনারা এপিআই লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরাফাত জাহিদ ইবনে শফি।
বাজেটে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: কর্মশালায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। তবে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমান মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ, যা খুবই অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান উচ্চ রক্তচাপ সংকট মোকাবেলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী(১৮-১৯ মার্চ) “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এই দাবি জানানো হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যা বিভিন্ন ধরণের অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি এবং এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত রাখার বিষয়টিকেও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ এনামুল হক বলেন, “অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দকৃত বাজেটের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি অনিবার্য।”
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।”
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (উপসচিব) ডা. মোহাম্মদ শওকত হোসেন খান; কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী; বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: মারুফ হক খান; বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর ডেপুটি রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর ডা. তন্ময় সরকার, এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র পরিচালক মো. শাহেদুল আলম এবং কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
সংশ্লিষ্ট
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। ছুটিতে রোগীদের সুবিধার্থে আগামী শনিবার ( ২৯ মার্চ ) ও বুধবার (২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগ খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই দুই দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ ছাড়া প্রতিদিনই বিএমইউ হাসপাতালের ইনডোর ও জরুরি বিভাগ প্রচলিত নিয়মে খোলা থাকবে। হাসপাতালের জরুরি ল্যাব কার্যক্রম সেবাও চালু থাকবে।অন্যদিকে, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে ২৮, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১, ৩ ও ৪ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে ২৮ মার্চ শুক্রবার এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ৪ এপ্রিল শুক্রবার বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বন্ধের দিনগুলোতে শনিবার (২৯ মার্চ) থেকে বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ থাকবে।এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫-এর ঈদের জামাত ঈদের দিন সকাল ৮টায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম জনাব হাফেজ মাওলানা আব্দুল আহাদ।এতে আরও বলা হয়, আগামী ৫ এপ্রিল ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এদিনেই প্রচলিত নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো খোলা থাকবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক : বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। তবে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমান মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ, যা খুবই অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান উচ্চ রক্তচাপ সংকট মোকাবেলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী(১৮-১৯ মার্চ) “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এই দাবি জানানো হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যা বিভিন্ন ধরণের অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি এবং এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত রাখার বিষয়টিকেও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।কর্মশালায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ এনামুল হক বলেন, “অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দকৃত বাজেটের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি অনিবার্য।”জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।”কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (উপসচিব) ডা. মোহাম্মদ শওকত হোসেন খান; কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী; বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: মারুফ হক খান; বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর ডেপুটি রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর ডা. তন্ময় সরকার, এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র পরিচালক মো. শাহেদুল আলম এবং কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।
শিপংকর শীল: ওষুধের দাম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এই জটিল বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না সাধারণ মানুষ। তবে একই ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারকারী রোগী ও তাদের স্বজনরা তা অনুধাবন করতে পারেন। গত কয়েক মাসেও ওষুধভেদে প্রায় ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধের দামের এই লাগামহীনতার জন্য উৎপাদক ও সবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক বিপণন চর্চা বা প্রোমোশনাল মার্কেটিং কার্যক্রমকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রোমোশনাল মার্কেটিংয়ের নামে ডাক্তারদের উপহার বা উৎকোচ দেয় কোম্পানিগুলো; যা কেটে নেওয়া হয় ক্রেতারই পকেট থেকে।স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান ওষুধ। রোগ নিরাময়ের মাধ্যম হিসেবে ওষুধের কোনো বিকল্প নেই। গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওষুধকে স্বাস্থ্য খাতের ছয়টি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের অন্যতম একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে ওষুধের প্রাপ্যতা হয়ে উঠেছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের অন্যতম নিয়ামক।স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এ সংক্রান্ত গবেষণা বলছে, দেশের মানুষের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ শুধু ওষুধের জন্য ব্যয় হয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে মোট ১০০ টাকা খরচ করলে তার মধ্যে ৬৫ টাকা খরচ হয় ওষুধ কিনতে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ওষুধের ওপর কতটা নির্ভরশীল। দেশে গ্যাস্ট্রিক তথা অ্যাসিডিটির সমস্যা নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। এছাড়া দেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। এরপরের বিক্রির তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে প্রেসার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সারজেল, প্যানটোনিক্স এবং ম্যাক্সপ্রো। এছাড়া প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপাও রয়েছে সর্বোচ্চ বিক্রিত ওষুধের তালিকায়।সংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েক মাসে দেশে ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ। স্বল্প আয়ের মানুষ বাড়তি মূল্যে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। ওষুধের দাম বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অসহনীয় পর্যায়ে দাম বাড়ছে বলেও অনেকেই মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম বাড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকদের মধ্যে চলা প্রোমোশনাল কার্যক্রমের নামে অনৈতিক বিপণন চর্চা। প্রোমোশনাল মার্কেটিংয়ের নামে ডাক্তারদের দেওয়া উৎকোচ বা উপহার কোনো কোম্পানিই নিজেদের পকেট থেকে দেয় না। ওষুধের দাম বাড়িয়ে সেই টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকেই আদায় করা হয়। ওষুধের অনৈতিক বিপণন চর্চা বন্ধ করা গেলে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে ওষুধের দাম অনেকটাই কমানো সম্ভব এবং কোম্পানির মার্কেটিং খরচ ১০ শতাংশে নামিয়া আনা সম্ভব।ওষুধের উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের বিশাল পার্থক্য : ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের সাধারণ তত্ত্ব হচ্ছে, কস্ট অব গুডস অর্থাৎ উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হবে। মার্কেটিং, প্রোমোশন এবং অন্যান্য খরচ আরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোম্পানির মুনাফা।ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের সারজেল নামে ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করে হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। সারজেল ২০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ৭ টাকা এবং সারজেল ৪০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ১১ টাকায় বাজারে পাওয়া যায়। ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের আরেকটি ওষুধ ম্যাক্সপ্রো উৎপাদন ও বিপণন করে রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। ম্যাক্সপ্রো ২০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ৭ টাকা এবং ম্যাক্সপ্রো ৪০ মি.গ্রা. প্রতি পিস ১০ টাকা করে বাজারে পাওয়া যায়। ওষুধ কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ২০ মি. গ্রা. ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ক্যাপসুল এবং ট্যাবলেট কাঁচামালসহ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৭০ পয়সা। এর সঙ্গে এক্সিপিয়েন্ট (সহযোগী উপাদান), প্যাকেজিং, লেভেলিংসহ সর্বোচ্চ খরচ হয় দুই টাকা। প্রতি ৪০ মি. গ্রা. ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ কাঁচামাল, সহযোগী উপাদান, প্যাকেজিং, লেভেলিংসহ সব মিলে মোট প্রায় দুই টাকা ৭০ পয়সা খরচ হয়। অর্থাৎ উৎপাদন খরচের কয়েকগুণ বেশি দামে ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোসারটান পটাশিয়াম ১০০ মি.গ্রা. প্রতি ট্যাবলেটে উৎপাদনে খরচ হয় দশমিক শূন্য দশমিক ছয় পয়সা। সহযোগী কেমিক্যাল, প্যাকেজিং সব মিলে প্রতি ট্যাবলেটে ১ দশমিক ২৫ টাকার মতো খরচ হয়। এটা কোম্পানিভেদে বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রোমোশনাল খরচ।ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত মেটফরমিন ৫০০ মি.গ্রা. এবং ৮৫০ মি.গ্রা. আকারে বাজারে পাওয়া যায়। মেটফরমিন ৮৫০ মি.গ্রা. প্রতিটির উৎপাদন খরচ হয় ৫৫ পয়সা, এর সঙ্গে এক্সিপিয়েন্ট (সহযোগী উপাদান) যোগ করলে মোট খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ পয়সা। প্যাকেজিংসহ এই ওষুধে প্রায় এক টাকা খরচ হয়। এটি প্রতি পিস বিক্রি হয় ছয় টাকায়। প্রতিটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট উৎপাদনে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ পয়সা খরচ হয়। এটি বিক্রি করা হচ্ছে ১ দশমিক ২০ টাকায়, মার্কেটিং খরচ বাদে যা থাকে সেটাই লাভ। ওষুধ উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ওষুধের গায়ে যদি মূল্য ১০০ টাকা থাকে, সেখান থেকে সরকার ভ্যাট পায় ১৫ শতাংশ, ফার্মেসির লাভ ১৫ শতাংশ। বাকি ৭০ টাকার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাঁচামালসহ উৎপাদন খরচ। আর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্কেটিং ও প্রোমোশনাল খরচ, বাকিটা কোম্পানির মুনাফা।ওষুধ শিল্প নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে ওষুধের বিপণন বাবদ টার্নওভারের ২৯ শতাংশের বেশি খরচ করছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু এই বিপণন প্রক্রিয়াটি খুবই অস্বচ্ছ। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রধানত ডাক্তারদের উপঢৌকন হিসেবে এই ২৯ শতাংশের বেশির ভাগ ব্যয় করে।বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, ওষুধের দাম বাড়ার একটি বড় কারণ কোম্পানিগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ মার্কেটিং বাবদ ব্যয় হয়ে যায়। এই মার্কেটিং খরচ কমানো গেলে ওষুধের দাম বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে অনেক কমানো যেত।এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাব্বির হায়দার বলেন, প্রোমোশনালের নামে চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপহার, টাকা-পয়সা দেওয়াসহ অনৈতিক সব ব্যয় ওষুধের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়। সেই মূল্য ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হয়। কোম্পানি অযৌক্তিক এসব ব্যয় কমালে ওষুধের মূল্য বেশ কমে আসবে।ওষুধের অনৈতিক বিপণন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, এটাকে আমরা বলি অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং। ওষুধের দাম যদি সরকারের প্রাইসিং ফর্মুলার ভিত্তিতে হয়, তাহলে কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। অতিরিক্ত মূল্য যখন নিতে পারবে না তখন ওষুধ কোম্পানির সারপ্লাস থেকেই অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিংয়ের খরচ বহন করতে হবে। তখন তারা এই অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং থেকে সরে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ডাক্তারদের যেমন নৈতিকতা মেনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া উচিত ঠিক তেমনি ওষুধ কোম্পানিগুলোরও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করা উচিত। যদি ওষুধ কোম্পানিগুলো নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করে এবং ডাক্তারদের কোনোরকম অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না দেয় কিংবা ডাক্তাররা না নেয়, তাহলে ওষুধের দাম অবশ্যই কমে আসতে পারে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ওষুধ কোম্পানির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রোমোশনালের জন্য অর্থ ব্যয় না করলে আমাদের ওষুধ চলবেই না। ডাক্তাররা আরও বেশি চায়। ডাক্তাররা যদি কোনো সুবিধা না নেয়, তাহলে ওষুধের দাম হয়তো কমবে। আমাদের কোম্পানি ডাক্তারদের কোনো অনৈতিক সুবিধা দেয় না, বড় বড় কোম্পানি যারা এই ধরনের সুবিধা দেয়, তাদের এই বিষয়ে প্রশ্ন করাই ভালো।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির এবং মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান। আগামী দুই বছর এ দায়িত্ব পালন করবেন তারা।শনিবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির ৫৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির ২০২৫-২০২৬ ও ২০২৬-২০২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবীর, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।২০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়াম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হায়দার হোসেন, সেনেভিয়া ফার্মা পিএলসির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও), এস এ রাব্বুর রেজা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (ভ্যাকসিন ডিভিশন) ভাইস-চেয়ারম্যান, হাসনিন মুক্তাদির, নিপ্রো জেএমআই ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মো. আবদুর রাজ্জাক, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান, এসিআই লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এম মহিবুজ্জামান, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান জনাব মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (কেমিক্যাল ডিভিশন) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. মিজানুর রহমান, দি একমি ল্যাবরেটরীজ লিমিটেডের পরিচালক, ফাহিম সিনহা, এরিস্টোফার্মা লিমিটেডের পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ হাসান, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের (ইউনিট-২), ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফিদুল হক, মিনারা এপিআই লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরাফাত জাহিদ ইবনে শফি।
মন্তব্য করুন