ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ০৮:০৭ পিএম
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি
বিএনপির সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, গত ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। সেখানে তার বক্তব্যে আগামী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ হয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার গুলশান বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২৪ মে আমাদের সঙ্গে বৈঠকে পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরও ২টি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকের বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তার বক্তব্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা কখনও প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের দাবি করিনি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনও চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে বলে উল্লেখ করে বিএনপি এই নেতা বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
“বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের দিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং ইখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব বক্তব্য।
মোশাররফ হোসেন বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যথাশীঘ্র একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ প্রদান করা জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন মোশাররফ।
তিনি আরও বলেন, জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতিশীঘ্র রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা অতি জরুরি। আমরা সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি বলে মন্তব্য করেন মোশাররফ।
মোশাররফ আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জনাব ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে, অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কালবিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।
লিখিত বক্তব্যে মোশাররফ আরও বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথায় জনগণের দল হিসেবে বিএনপি’র পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ