ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫ ০২:৪৫ এএম
ইরানে জন্ম নেওয়া মুসলিম মনীষীরা: জ্ঞান-বিজ্ঞানে যুগান্তকারী অবদান
প্রাচীন সভ্যতার সূতিকাগার পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইরান। ভৌগলিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে যুগে যুগে দেশটি ইসলামী বিশ্বে রেখেছে গৌরবময় ভূমিকা। এই ভূখণ্ডেই জন্ম নিয়েছেন ইতিহাসের অসংখ্য মুসলিম মনীষী, যারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য ও চিকিৎসাবিদ্যায় রেখেছেন যুগান্তকারী অবদান।
ইরানে জন্ম নেওয়া খ্যাতিমান মুসলিম মনীষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— ইমাম গাজালী, মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজ, আল-বেরুনী, ওমর খৈয়াম, শেখ সাদী এবং ইবনে সিনা। তাদের সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তাভাবনা আজও বিশ্বজুড়ে চর্চিত ও প্রাসঙ্গিক।
ইমাম মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজ
খুরাসানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণকারী এই মনীষী ছিলেন হাদিস শাস্ত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশারদ। সহীহ মুসলিম নামে সুপ্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থের সংকলক তিনি। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে তিনি হাদিস সংগ্রহ করেন এবং প্রায় ১৮টি গ্রন্থ রচনা করেন, যদিও বর্তমানে শুধু সহীহ মুসলিমই পাওয়া যায়।
ইমাম গাজালী
১০৫৮ সালে খোরাসানের তুস নগরীতে জন্ম নেওয়া ইমাম গাজালী ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক, ফকিহ, সুফি ও যুক্তিবিদ। তিনি প্রায় ৪০০ গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে "এহইয়া উলুমুদ্দীন" ও "তাহাফাতুল ফালাসিফা" অন্যতম। পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনের কঠোর সমালোচক তিনি ইসলামি দর্শনকে শুদ্ধ পথে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এজন্য তাঁকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
আল-বেরুনী
৯৭৩ সালে খাওয়ারিজমে জন্ম নেওয়া আল-বেরুনী ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী—তিনি ছিলেন গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক, ভূগোলবিদ, ঔষধতত্ত্ববিদ, দার্শনিক এবং ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। তিনি প্রায় ১৪৬টি গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে ৯৫টি ছিল জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত নিয়ে। "কিতাব আল-সায়দালা ফি আল-তিব্ব" তার চিকিৎসাশাস্ত্রভিত্তিক বিখ্যাত বই।
ওমর খৈয়াম
১০৪৮ সালে ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণকারী ওমর খৈয়াম ছিলেন একাধারে কবি, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের বাস্তব সমাধান এবং দ্বি-পদী রাশিমালার বিস্তার করেন। ইউক্লিডের সমান্তরাল স্বীকার্যের সমালোচনার মাধ্যমে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা করেন। তার কবিতাও বিশ্বসাহিত্যে সমাদৃত।
ইবনে সিনা (আভিসেনা)
৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া ইবনে সিনা ছিলেন প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিক। তার রচিত "কানুন ফিততিব" শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়েছে। এছাড়া "কিতাবুশ শিফা" তার দার্শনিক বিশ্বকোষ। চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা—সব ক্ষেত্রেই তার অবদান আজও স্মরণীয়।
ইরানের এই মনীষীদের অবদান শুধু ইসলামি সভ্যতা নয়, বরং গোটা মানবসভ্যতার জন্য অনন্য সম্পদ। আধুনিক যুগে তাদের সৃষ্ট জ্ঞান এখনো নতুন গবেষণার অনুপ্রেরণা হয়ে রয়ে গেছে।
ভোরের আকাশ//হ.র