হাদির কালচারাল সেন্টারের দায়িত্ব নিলেন মাহমুদুর রহমান
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে শুধু একজন ব্যক্তি নয়, বরং জুলাই বিপ্লবের প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করে তার প্রতিষ্ঠিত কালচারাল সেন্টারের দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, হাদির ওপর হামলা চালিয়েও জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে দমিয়ে রাখা যাবে না।শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত এক সমাবেশে আবেগঘন কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় শহীদ মিনারে সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখান থেকেই আগামী দিনের আন্দোলনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা হবে।বক্তব্যের শুরুতেই ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, হাদির ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানাতেই তিনি জনসমক্ষে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। হাদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরার সময় হাদিই তাকে গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। মাত্র পাঁচ মাস আগেই তারা একসঙ্গে তার মায়ের দাফন সম্পন্ন করেছেন। অথচ আজ সেই হাদি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।তিনি বলেন, ফজরের নামাজে আল্লাহ তাআলার কাছে তিনি ফরিয়াদ করেছেন, নিজের সবকিছুর বিনিময়ে হলেও যেন হাদিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ তাদের আর দেশকে দেওয়ার মতো কিছু নেই, কিন্তু হাদির দেওয়ার এখনও অনেক কিছু বাকি রয়েছে।মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, বহু ষড়যন্ত্রের মুখেও জুলাই বিপ্লব পরাজিত হয়নি এবং হাদি তার জীবন্ত প্রমাণ। যারা জুলাইকে বিপ্লব বলতে অস্বীকার করে, তারা মূলত নিজেদের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষায়, তার কাছে জুলাই স্পষ্টভাবেই একটি বিপ্লব এবং সেই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করেই সামনে এগোতে হবে।তিনি তথাকথিত সুশীল সমাজের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তারা কখনোই ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। নতুন প্রজন্মকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই লড়াই তরুণদেরই এগিয়ে নিতে হবে।বক্তব্যের একপর্যায়ে মাহমুদুর রহমান হাদির কালচারাল উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, এমন এক সময়ে যখন তরুণরা বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তখন হাদি মানুষের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে একটি কালচারাল সেন্টার গড়ে তুলেছেন। এই উদ্যোগ কালচারাল ফ্যাসিজম মোকাবিলা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, আজ থেকেই তিনি হাদির প্রতিষ্ঠিত ওই কালচারাল সেন্টারের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন এবং হাদি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার অসমাপ্ত কাজ তিনি নিজেই এগিয়ে নিয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ।ড. মাহমুদুর রহমান আরও জানান, ১৫ ডিসেম্বর শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকেই আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবসের আগের দিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে যে এই বিজয় দিল্লির কাছ থেকে পাওয়া নয় এবং এই বিজয় দিল্লির কাছেই সমর্পণ করা হবে না।তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদলীয় ঐক্য অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হাদির ওপর হামলার আগেই একাধিকবার হুমকির তথ্য সরকারকে জানানো হয়েছিল, কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হামলার পরও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।এ সময় সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে ১৫ ডিসেম্বর শহীদ মিনার থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, একজন হাদিকে গুলি করে এই লড়াই থামানো যাবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার রুখে দাঁড়াতে হবে এবং জুলাই বিপ্লবকে পূর্ণতা দিতে হবে।ভোরের আকাশ/তা.কা