আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:১১ এএম
ছবি: ভোরের আকাশ
মাছে ভাতে বাঙালি আমরা। অনেকেই মাছ পছন্দ করেন। কিন্তু কাটতে ভয় পান। আবার কেউ মাছের গন্ধে টিকতে পারেনা বেশিক্ষণ। নো টেনশন। তাঁদের সুবিধার জন্য বাজারে রয়েছে মাছ কাটাইয়ারা (কাটুনীরা)।
মূলত মাছ কেটে আঁশ ছাড়ানো, পেট পরিষ্কার করা এবং কেটে টুকরো করার কাজ করেন তারা। এটিই তাঁদের পেশা। পায়ের নীচে বটি আর এক হাতে কাঠের একটি দন্ড দিয়ে সারাক্ষণ মাছ কাটেন। মাছ কাটা দিয়ে দিন শুরু হয় আর মাছ কাটতেই চলে যায় সারাটি দিন। সেজন্য নিজেদের ‘মাছকাটাইয়া’ বা ‘মাছ কাটুনী’ বলে পরিচয় দেন তারা।
ব্যস্ততম শহরের প্রায় প্রতিটি মাছ বাজারেই দেখতে পাওয়া যায় তাঁদের। তবে তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। শহরের ব্যস্ততম সময়ে ২০ থেকে ৪০ টাকার বিনিময়ে একটা মাছ পরিষ্কার করে আঁশ ছাড়ানো ও কাটার কাজ করে দেন তারা। ফলে অনেকে মাছ কেনার পর এই মাছকাটাইয়াদের ওপরই নির্ভর করেন।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদরের মাছ বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই মাছ বাজারে প্রায় ৫ থেকে ৭ জন ব্যক্তি এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন। তাঁদের সাথে কথা বলে জানা গেল, আজকাল কেউই বাড়িতে আস্ত মাছ নিয়ে যায় না। আর মাছকাটার কাজটাও খুব সহজ নয়। অনেকেরই মাছ খাওয়ার অভ্যাস আছে, কিন্তু মাছ কাটতে ভয় পান।
আদমদীঘি মাছ বাজারের মাছকাটাইয়া মিলন জানান, ‘১৮ বছর ধরে মাছ কাটার সাথে জড়িত। একটি মাছ কাটলে ১০ টাকা পাওয়া যায়। আর বড় মাছ হলে অনেকে খুশি হয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা দেয়। এই পেশার উপর নির্ভর করে সংসার চলছে আমার। অনেক মহিলারা মাছ দেখলেই কাটার ভয়ে নাক সিঁটকায়। মাছকাটতে ভয় পান।
বিশেষ করে, শিং, মাগুড় ও টেংরা মাছ কাটতে ভয় পায় মহিলারা। এসব মাছ স্বাদ হলেও অনেকেই কাটার ভয়ে কিনতে চায় না। সেজন্য তাঁদেরকে আমরা প্রথমদিকে মাছ কেটে দিতাম। কিন্তু এখন প্রায় সব ধরনের মাছ কাটারই অর্ডার পাই।’
রতন নামের আরেক মাছকাটাইয়া জানান, ‘মাছ কাটার ভয়ে অনেকেই বাসা-বাড়িতে মাছ কিনতে চায় না। আবার অনেকেই মাছ পরিষ্কার করাকে মুশকিল মনে করে। বিশেষ করে, মাছের গন্ধ আর কাটার সময় নোংরা পানিতে হাত দিতে চায় না অনেক গৃহীনি। আর এই কাজটা সহজও নয়। মাছের নোংরা পানি ঘাঁটতে ঘাঁটতে হাতে ঘা হয়ে যায় মাছকাটাইয়াদের।’
রাম নামের আরেক মাছকাটাইয়ার সঙ্গে আলাপে জানা গেল,‘সবসময় পানি ঘাঁটার ফলে হাতে ঘা হয়ে যায় আমাদের। আক্রান্ত স্থানে সবসময় চুলকায়। তবুও আক্রান্ত হাত দিয়েই মাছ কাটেন তারা। মাছ কাটা শেষে ময়লা পানিতেই তারা হাত ধুয়ে নেন।’
আদমদীঘি মাছ বাজারের এক কোণায় বসে মাছ কাটেন বিজয়। দু’হাত পরিমাণ বসার জায়গাতেই তিনি মাছ কাটেন। তিনি জানান, সকাল ৮টা থেকে রাত দুপুর ১টা পর্যন্ত মাছ কাটার কাজ চলে। তবে সপ্তাহে দুই হাটের দিনে চিত্রটি ভিন্ন থাকে। সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার এবং মঙ্গলবার ব্যস্ততা বাড়ে। ওই দুই দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মাছ কাটার কাজ। হাটের দিনে রোজগারও ভাল হয়।
এছাড়াও প্রতিদিন তার আয় হয় পাঁচ থেকে সাতশ’ টাকা। পরিবারের সব খরচ বাদেও প্রতি মাসেই তার কিছু টাকা জমা থাকে। এই পেশার আয় দিয়েই সচ্ছলভাবে চলছে তার সংসার।
ভোরের আকাশ/মো.আ.