ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১৭ এএম
ছবি- সংগৃহীত
শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংশোধন প্রয়োজন বলে মনে করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, দেশে এখনো ৩৫ লক্ষ শিশু শ্রমে নিয়োজিত এবং তাদের মধ্যে মারাত্মক লক্ষাধিক শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। শ্রম আইন সংশোধনের পরেও ওই সকল শিশুদের ৯৯ শতাংশই আইনি বিধি-নিষেধের বাইরে রয়েছে। কারণ তারা অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রম দিচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে আবারো আইন ও নীতিমালা সংশোধন করতে হবে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে শিশুশ্রম সর্ম্পকিত আইন ও নীতিমালা শক্তিশালীকরণে প্রস্তাবিত নীতি শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তারা। এডুকো বাংলাদেশ ও চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্ম (ক্ল্যাপ) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান।
বাংলাদেশ লেবার ফাউণ্ডেশন (বিএলএফ)’র নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, চাইল্ড লেবার মনিটরিং কাউন্সিলের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ)’র সভাপতি অ্যাডভোকেট সীমা জহুর, এডুকো বাংলাদেশের প্রোগ্রাম পরিচালক আব্দুর রহিম, ইনসিডিন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহমান সাব্বির, এএসডির শাহিনুল ইসলাম, কারিতাস বাংলাদেশের রবিউল ইসলাম প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে মূল উপাস্থাপনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুজ্জামান ভুইয়া বাংলাদেশের শিশুশ্রম পরিস্থিতি এবং শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের নীতিমালা ও যেসব নীতিমালা হাতে নিলে এই সমস্যা থেকে আমরা উত্তরণ হতে পারবো সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সংশোধিত শ্রম আইনে অনুষ্ঠানিক খাতে এমন কোন ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি, যেখানে ৯৯ শতাংশ শিশু অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। অতএব, অনানুষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রমের মজুরি নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় খাতেই নিযুক্ত শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার সুপারিশ করেন তিনি।
ড. মো. নাজমুজ্জামান বলেন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (এনপিএ) ইতিমধ্যেই ২০১৬ সালে তার মেয়াদ শেষ করলেও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতিতে বাধ্যতামূলক শিক্ষার বয়স পঞ্চম শ্রেণী (বয়স ১০) থেকে অষ্টম শ্রেণী (বয়স ১৪) পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে নতুন বাধ্যতামূলক শিক্ষার বয়স কার্যকর করতে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। সংশোধন না করা পর্যন্ত এই নীতিটি কার্যকর করা যাবে না। অথচ ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে খারাপ ধরণের শিশুশ্রমের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি তারা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে এমন কার্যকলাপে জড়িত হতে পারে। শিশুশ্রম নির্মূলে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং শিশুশ্রমের প্রতি সকলের মনোভাব ও আচরণগত পরিবর্তন করার আহ্বান জানান তিনি।
যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা হচ্ছে শিশুশ্রম। শিশুশ্রমের মূল কারণ দারিদ্রতা। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মতৎপরতার পরেও আমাদের দেশে এখনো অনেক শিশু বেঁচে থাকার তাগিদে এ শ্রমে নিযুক্ত হয়। বর্তমান সরকার শিশুশ্রম নিরসনের ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এই কাজে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। তাই সম্মিলতি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংশোধনে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন আফজাল কবির খান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, নিয়োজিত শিশুরা নানাধরনের শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। অসংখ্য শিশু দীর্ঘ সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করার ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। তাই আইন ও নীতিমালা সংশোধনের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সকলকে কাজ করতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ