নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:১৫ এএম
ছবি: ভোরের আকাশ
ফতুল্লায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক তরুণ ও তরুণীকে অপহরণ, মারধর এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের তাৎক্ষণিক প্রতিরোধে তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে শনিবার রাত ৯টার দিকে দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার সাহারা সিটি বালুর মাঠে ঘটনাটি ঘটে। অপহরণকারীদের কাছ থেকে পুলিশ বিশেষ পেশার পরিচয়ে তৈরি করা একটি কার্ডসহ ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ভুক্তভোগী ইব্রাহিম নিঝুম ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
আটক তিনজন হলেন শামীমা খানম সোনিয়া (৪০), তৌছিফ আহম্মেদ (২০) এবং সিয়াম আহম্মেদ (২০)। তাদের সঙ্গে থাকা সহযোগী সোহাগ পালিয়ে যায় বলে মামলায় উল্লেখ্য রয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী তরুণ ও তার বান্ধবী ভূঁইগড় রূপায়ণ টাউনের সামনে রিকশায় অবস্থানকালে অভিযুক্তরা পথরোধ করে নিজেদের ডিবি সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর কৌশলে তাদের অটোরিকশায় তুলে দাপা এলাকার একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায় এবং এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের মারধর করে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
খবর পেয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা পরিস্থিতি বুঝতে পারেন এবং তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। উপস্থিত জনগণের ভাষ্য অনুযায়ী, এ চক্রটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক মাস আগে পঞ্চবটী রুসেন হাউজিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে চাঁদা দাবি করেছিল চক্রটি। তখনও স্থানীয়রা তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয় এবং ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একই কৌশলে তারা পাগলা চিতাশাল, তল্লা কোর্টের পিছন, পোস্ট অফিস রোডের দারোগার বিল্ডিংসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পঞ্চবটী হরিহরপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে এক দম্পতিকে মারধর করে স্বর্ণালংকার ও নগদ ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সাংবাদিক মহলে এই চক্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। সাংবাদিকরা জানায় যে শামীমা ও তার সহযোগীদের অপকর্ম নিয়ে তারা আগে থেকেই পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন, তবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি আটক হওয়ার পর যখন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে যান, তখন শামীমা তাদের প্রকাশ্যে রগ কাটার হুমকি দেয় এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির হুঁশিয়ারি করে বসে।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন যে মামলার পর আটক তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং পলাতক সোহাগকে ধরতে অভিযান চলছে। তিনি আরও জানান যে ঘটনাটি সম্পূর্ণ তদন্তের মাধ্যমে চক্রটির অতীত কর্মকাণ্ডও যাচাই করা হবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.